সোমবার, ৬ মে, ২০২৪, ঢাকা

কোথাও নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না চিনি

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
প্রকাশিত: ২৫ মার্চ ২০২২, ০৯:৫০ এএম

শেয়ার করুন:

কোথাও নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না চিনি
নিত্যপণ্যের বাজার। কোলাজ: ঢাকা মেইল

খুচরা বাজারে চিনির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। তবে সে দামে কোথাও বিক্রি হচ্ছে না নিত্যপণ্যটি। রাজধানীর প্রায় সব বাজারে নির্ধারিত দামের চেয়ে পাঁচ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে চিনি বিক্রি হতে দেখা গেছে।

রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, রামপুরা, খিলগাঁও, মুগদা এলাকায় দেখা যায়, দোকানগুলোতে সাদা চিনি প্রতি কেজি খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৭৮-৮৫ টাকায়। লাল চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯৫ টাকায়। বিভিন্ন কোম্পানির সাদা চিনির প্যাকেটের গায়েও মূল্য আছে ৮৫-৮৬ টাকা। 

গেল বছরের সেপ্টেম্বর মাসে চিনির খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দেয় সরকার। ওইসময় প্রতি কেজি খোলা চিনির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৭৪ টাকা ও প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পরিবহন খরচ বাড়ছে। সরকার নির্ধারিত দামে চিনি বিক্রি করে পরতা পড়ে না। এছাড়াও খোলা চিনি বস্তা হিসেবে পাইকারি মা‌র্কেট থেকে কেনার পর এতে কিছু চিনির ঘাটতি দেখা দেয়। কেনাতেও খরচ বেশি পড়ে। তাই ওই দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মালিবাগ বাজারের এক ব্যবসায়ী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘৭৪-৭৫ টাকা দামে চিনি বিক্রি করলে আমরা খাবো কী? পাইকারি বাজা‌রে দাম বেড়েছে। ক্যারিং খরচ বেড়েছে। আমাদের খুচরা ব্যবসায়ীদের কিছু করার থা‌কে না।’

চিনি কিনতে আসা রাসেদুল নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘আমাদের প্রতি মাসে ২-৩ কেজি চিনি লাগে। সামনে রমজান মাসে ও ঈদে আরও বেশি লাগে। জিনিসপত্রের দাম বেশি নিলেও আমাদের কিছু করার থাকে না।’

আপনারা ভোক্তা অধিকারে বা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেন না কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘১০-১৫ টাকার জন্য আমি কোথায় অভিযোগ করতে যাব! এগুলাতো সরকার ইচ্ছা করলেই বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।’

আরেক ক্রেতা বলেন, ‘রমজান মাস এলেই আমাদেরে দেশের প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বাড়তে থাকে। আগে রমজানের শুরুতে বাড়তো। এখন দু-এক মাস আগেই বাড়ে। এটা যেন আমাদের দেশের একটা ট্রেডিশন হয়ে গেছে।’ 

এদিকে মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সয়াবিন তেল চিনিসহ বেশকিছু পণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়েছে সরকার। তবুও এর প্রভাব তেমন একটা নেই বাজারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সঠিক বাজার মনিটরিংয়ের অভাবে এমনটা হচ্ছে।

sugar

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের একটা সিস্টেম হচ্ছে, তারা যেসব পণ্য আমদানি করে টোটাল চাহিদার ৯৫ ভাগ আমদানি করার পরেও যদি বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যায়, তখন তারাই সরকারের কাছে দাম বাড়ানোর আবেদন জানায়। চিনির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আমাদের যেসব দায়িত্বশীল সংস্থা আছে তাদের দেখা উচিত আমাদের চাহিদা কত, মজুদ কত আছে, সাপ্লাই কত আছে, সেগুলো হিসাব করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।’

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ বিষয়ক সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাদের দেশের অধিকাংশ ব্যবসায়ী যেটা করে, আন্তর্জাতিক বাজারে যখন কোনো জিনিসের দাম বাড়ে তখন সেটা শোনা মাত্রই দাম বাড়ানো শুরু করে দেয়। আবার যখন দাম কমে তখন তা কমাতে গড়িমসি করে। বর্তমানে দেশে প্রচুর পরিমাণে চিনি মজুদ আছে। সরকার চিনিসহ কয়েকটি পণ্যের শুল্ক কমিয়ে দিয়েছে। এর নির্দিষ্ট একটা দাম নির্ধারণ থাকার পরেও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আসলে সঠিক জবাবদিহিতা না থাকার কারণে এমনটা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকার বা প্রশাসনের তদারকি আরও বাড়ানো দরকার।’

টিএই/জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর