শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

নিত্যপণ্যের দামবৃদ্ধি নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০৬:৪৩ পিএম

শেয়ার করুন:

নিত্যপণ্যের দামবৃদ্ধি নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য

পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ নিত্যপণ্যের দাম কারসাজিতে কিছু কিছু করপোরেট প্রতিষ্ঠানের দিকে আঙ্গুল তুললেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে নানা অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা বাজারে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণে কাজ করা সংগঠনের নেতারা। আবার কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে সবার ওপর দায় নিতে হবে তাও মানতে রাজি নন প্রকৃত ব্যবসায়ীরা।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আদা, রসুন, হলুদ ও শুকনো মরিচের সরবরাহ ও মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে পাইকারি এবং খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় যখন এমন পাল্টাপাল্টা অভিযোগ তোলা হয় তখন অসাধুদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত দিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ.এইচ.এম. সফিকুজ্জামান। বলেছেন, আসছে আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে বাজার মনিটরিং আরও জোরদার করা হবে।


বিজ্ঞাপন


সোমবার (২৩ জানুয়ারি) রাজধানীর কাওরানবাজারে অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক বলেছেন, নিত্যপণ্যের আমদানি স্বাভাবিক না থাকলে রমজান মাসে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে।

এতে আদা-রসুন, হলুদ ও শুকনা মরিচের খুচরা এবং পাইকারি ব্যবসায়ী, আমদানিকারক, এফবিসিসিআই প্রতিনিধি, টেরিফ কমিশনের প্রতিনিধি, কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) প্রতিনিধি, ডিজিএফআই প্রতিনিধি, এনএসআই প্রতিনিধিসহ বাজার সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

ভোক্তার ডিজি বলেন, কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে বাজার অস্থির হয়ে যায়। আসন্ন রমজান মাসে এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকবে ভোক্তা অধিদফতর।

তিনি বলেন, রমজানের আগে আমাদের দেশি পেঁয়াজ উঠবে। এতে করে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কোনো সম্ভাবনা নেই। ৫০ টাকার মধ্যেই থাকবে দাম। কিন্তু আদা-রসুনের বাজার অস্থির। রমজান আসার আগেই দাম বাড়তে শুরু করেছে। হঠাৎ করে আদা-রসুনের দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত কেজিতে বাড়ছে। কিছু পণ্য হয়তো আমদানি নির্ভর, ডলারের দাম বৃদ্ধি অনুসারে ২৫ শতাংশ দাম বাড়তে পারতো। কিন্তু ডলারের বাজারের তুলনায় পণ্যের দাম আরও বেশি বাড়ানো হয়েছে। দাম নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বাজার আরও অস্থির হয়ে যাবে।


বিজ্ঞাপন


আদা-রসুনের দাম বৃদ্ধি নিয়ে তিনি আরও বলেন, গত সপ্তাহে আমাদের টিম আদা-রসুনের বাজার নিয়ে কাজ করেছে। আমরা কাওরান বাজারসহ শ্যামবাজার পাইকারি, খুচরা এবং আড়তে একটু খোঁজ নিলাম। আন্তর্জাতিক এলসি খোলার বিষয়টা খোঁজ নিলাম। যেমন- আদা, রসুন, শুকনা মরিচ এবং হলুদ, এগুলো কিন্তু ইম্পোর্ট (আমদানি) নির্ভরতা আছে। সম্পূর্ণভাবে দেশি উৎপাদন দিয়ে বাজার চালানো সম্ভব না। সেই ক্ষেত্রে এখানে যদি ইম্পোর্ট কমে যায় দেশীয় যে উৎপাদন সেখানে কিন্তু ঘাটতি পড়বে। সামনে রমজানের পরে কিন্তু কোরবানি। তাই এসব পণ্য যদি ইম্পোর্ট স্মুথ (সচল) না রাখতে পারি তাহলে স্থানীয় উৎপাদন দিয়ে এই বাজার ধরে রাখা যাবে না। তাই আমদানি স্বাভাবিক না থাকলে রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।

মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে পাইকারি ব্যবসায়ী এবং আমদানিকারকরা জানান, আমদানি না হওয়ায় আদা-রসুনের দাম বাড়ছে। ভারত থেকে রসুন আমদানি বন্ধ ছিল। চায়না থেকেও আমদানি হচ্ছে না। আদা-রসুন আমদানিতে এলসি না পেলে দাম বাড়বে।

ব্যবসায়ীদের এলসি চাওয়ার বিষয়ে ক্যাবের সহসভাপতি নাজের হোসাইন বলেন, ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর জন্য একেক সময় একেক বাহানা দেয়। এক সময় ডলার সমস্যা, আবার ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এবার এলসি সমস্যাকে অজুহাত হিসেবে এনেছে।

তিনি বলেন, রমজানের জন্য যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের প্রয়োজন সেগুলো ইতোমধ্যেই এলসি করা হয়েছে। কারণ পণ্য আসার দুই থেকে তিন মাস আগে এলসি করতে হয়। সে অনুসারে রমজানের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য ইতোমধ্যেই পোর্টে এসে পৌঁছেছে। এলসি ইস্যুটা একটা অজুহাত মাত্র।

তবে ট্যারিফ কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে আমদানি করা ভোগ্যপণ্যের দাম ৩০ শতাংশ বেশি হতে পারে। তবে এর বেশি হবার কথা নয়।

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য করে এফবিসিসিআই এর সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা খুবই নগন্য। তবে তাদের জন্য সকলের  উপর দায় পড়ে। আমরা সকল ব্যবসায়ী সরকারের সকল আইন-কানুন মেনে ব্যবসা করতে চাই। এলসি এবং ডলারের দাম সমন্বয় করে বাজার ব্যবস্থাকে সুস্থ রাখতে হবে।

এসময় কাওরানবাজারের এক খুচরা ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, কিছু কিছু করপোরেট কোম্পানি নিজেদের ইচ্ছেমত দাম নিচ্ছে। চালের প্যাকেটে বাড়তি দাম বসিয়ে দিচ্ছে। ডলারের দাম বৃদ্ধির উছিলায় প্রতিনিয়ত দাম বাড়াচ্ছে। যখন বাজারে পণ্য থাকে না তখন কোম্পানিগুলোও পণ্য সাপ্লাই বন্ধ করে দেয়। বাজার অস্থির করে দেয়। এদের বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিদফতর তেমন কোনো ব্যবস্থা না নিলেও আমাদের মত ছোট ব্যবসায়ীদের গিয়ে জরিমানা করে।

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূইয়া বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে ভোক্তা অধিদফতরসহ সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থ্যাগুলো মনিটরিং আরও জোরদার করতে হবে। বাজারে অভিযান চালালে বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকে। যার প্রমাণ আমরা আগেও পেয়েছি।

সবশেষ ভোক্তার ডিজি এ.এইচ.এম. সফিকুজ্জামান বলেন, আজকের এই মতবিনিময় সভায় যেসব বিষয়ে পরামর্শ এসেছে, সেসব বিষয়ে সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে লিখিত আকারে সুপারিশ করবো। এসময় রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে সকলের সহযোগিতা চান তিনি।

বিইউ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর