দেশে কমছেই না রডের দাম। ২০২০ সালের শেষ নাগাদ এক টন ভালো রডের (৬০ গ্রেডের বেশি) দাম ছিল ৬০ হাজার টাকার আশপাশে। এখন সেই রডের নূন্যতম দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৪ হাজার টাকা। কোম্পানি ভেদে সর্বোচ্চ ৯০ হাজার টাকা দরেও বিক্রি হচ্ছে এক টন রড। দুই বছরের ব্যবধানে রডের দাম লাগামহীন হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ব্যক্তি খাতে বাড়ি নির্মাণকারী, আবাসন ব্যবসায়ী ও সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদাররা।
বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম এবং জাহাজ ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় বাড়ি নির্মাণের অপরিহার্য পণ্যটির দাম বাংলাদেশেও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন রড ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া করোনার ধাক্কার পর বিশ্বব্যাপী নির্মাণকাজ বেড়ে যাওয়ায় কাঁচামাল সংকট রডের দাম বেশি হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
রোববার (১৩ মার্চ) রাতে রাজধানীর বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রীর দোকান ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। রডের দাম এত বৃদ্ধির পেছনে অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় নাগালের বাইরে যাচ্ছে।
দেশের স্টিল উৎপাদন কারখানা মালিকদের মতে, স্টিলের কাঁচামাল এবং কেমিক্যালের দুষ্প্রাপ্যতার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে দাম। দেশের রড শিল্প মূলত আমদানি নির্ভর। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার ফলে দেশে দাম বৃদ্ধি এড়ানোর উপায় নেই।
জানা গেছে, দেশে উৎপাদিত রডের কাঁচামাল মেল্টিং মেটালের অন্তত ৮৫ শতাংশ বাইরে থেকে আমদানি হয়। সাধারণত সাউথ আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকা ও কানাডা থেকে আসে নির্মাণকাজে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ এই পণ্যটির কাঁচামাল। গাড়ি ফ্যাক্টরির বাই-প্রোডাক্টসহ ইত্যাদি আরও নানা কিছু থেকে সংগৃহীত হয় মেল্টিং স্ক্র্যাপ। বিশ্বব্যাপী বাইরের দেশগুলোতে এগুলোর সংগ্রহ কমে গেছে। ফলে চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত যোগান না থাকায় বেড়েছে দাম।
কী কী জিনিসের আমদানি ব্যয় বেড়েছে তা জানিয়েছে বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএমএ)। সংগঠনটির তথ্যমতে, আন্তর্জাতিক বাজারে ২০২০ সালের মার্চ-এপ্রিলে এক টন মেল্টিং স্ক্র্যাপের দাম ছিল ৩০০ থেকে ৩২০ মার্কিন ডলার। বর্তমানে একই পরিমাণ স্ক্র্যাপ কিনতে হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৫৯০ ডলারে। অর্থাৎ টন প্রতি দাম বেড়েছে ২৩ হাজার ৪৯০ টাকা।
বিজ্ঞাপন
কেমিক্যাল হিসেবে আমদানি করা ফেরো অ্যালোয়েজের দামও বেড়েছে। ২০২০ সালের শুরুর দিকে এর টনপ্রতি দাম ছিল ৮০০ থেকে ৮৫০ মার্কিন ডলার। বর্তমানে এর দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪২০ থেকে ১৪৫০ ডলারে। অর্থাৎ দুই বছরের ব্যবধানে এই কেমিক্যালের দাম বেড়েছে প্রায় ৫২ হাজার টাকা। এই দুই কাঁচামালের পাশাপাশি বেড়েছে কনটেইনার ভাড়াও। ব্যবসায়ীদের মতে, কনটেইনার ভাড়া বৃদ্ধির পরিমাণ আগের তুলনায় প্রায় চারগুণ বেড়েছে।
স্টিলের কাঁচামাল এবং কেমিক্যালের দুষ্প্রাপ্যতার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে দাম। দেশের রড শিল্প মূলত আমদানি নির্ভর। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার ফলে দেশে দাম বৃদ্ধি এড়ানোর উপায় নেই।
রডের লাগামহীন দামের লাগাম টেনে ধরতে চারটি সুপারিশ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) পাঠিয়েছে বিএসএমএ। প্রথম সুপারিশে স্ক্র্যাপ থেকে তৈরি করা সবপ্রকার বিলেট এবং বিলেট থেকে তৈরি পণ্যের ভ্যাট কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে সবপ্রকার প্রতি টন বিলেট এবং বিলেট থেকে তৈরি পণ্যের ভ্যাট এক হাজার টাকা করে রয়েছে। এগুলো ২৫০ টাকা করার সুপারিশ করেছে বিএসএমএ।
দ্বিতীয় সুপারিশে আমদানি পর্যায়ে স্ক্র্যাপের সিডি ১৫০০ টাকার পরিবর্তে ৫০০ টাকা এবং এআইটি ৫০০ টাকার বদলে ১০০ টাকা করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। একই সুপারিশে স্পঞ্জ আয়রনের সিডি প্রত্যাহার ও এআইটি ৫০০ টাকার বদলে টাকা করা এবং ফেরো অ্যালোয়েজের ওপর আরোপিত ভ্যাটও প্রত্যাহার চেয়েছে বিএসএমএ।
তৃতীয় সুপারিশে রড বিক্রির ক্ষেত্রে উৎসে কর দুই শতাংশের জায়গায় এক শতাংশ চেয়েছে সংগঠনটি। চতুর্থ সুপারিশে স্টিল মিলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহের কথা বলা হয়েছে।
বিএসএমএ'র সাধারণ সম্পাদক ও মেট্রোসেম স্টিলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা সুপারিশগুলো রাজস্ব বোর্ডে পাঠিয়েছি। এসব বাস্তবায়ন ছাড়া রডের দাম কমার কোনো পথ তো দেখি না। এনবিআরের সঙ্গে আমরা ফের বসব। তখন হয়তো সেখান থেকে কিছু ফিডব্যাক পেতে পারি।
এসএ/এমআর

