শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

মাইডাসের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ চাকরিচ্যুত কর্মকর্তার

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৩:২৩ পিএম

শেয়ার করুন:

মাইডাসের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ চাকরিচ্যুত কর্মকর্তার

আর্থিক প্রতিষ্ঠান মাইডাস ফাইন্যান্স লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, ঋণ বিতরণে অনিয়ম, দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির চাকরিচ্যুত এক কর্মকর্তা। এসব অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে তিনি বিচার বিভাগীয় তদন্তও চেয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করা কর্মকর্তা হলেন শামীম আহমেদ। যিনি মাইডাসের প্রশাসন, মানবসম্পদ ও এস্টেট ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান ছিলেন। গত বছর যাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। যদিও তার দাবি, বেআইনিভাবে তাকে চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন শামীম আহমেদ।

তবে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ও সাবেক পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করলেও এসবের কোনো তথ্য উপাত্ত দেখাতে পারেননি শামীম আহমেদ।

চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা বলেন, ‘২০০৬ সালে থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৫ বছর প্রতিষ্ঠানটি দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু বেতন পেয়েছি সাড়ে সাত বছরের। তারপরও সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।’

শামীম বলেন, গত ১৫ মাসে চাকরি ফিরে পেতে কোম্পানি, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ৩৫০টি আবেদন জমা দিয়েছি। কিন্তু অদ্যাবধি কোনো নির্বাহী দফতর বা সংশ্লিষ্ট বিভাগে থেকে অদ্যাবধি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।


বিজ্ঞাপন


সংবাদ সম্মেলনে তার সঙ্গে হাবিব উদ্দিন নামের আমানতকারী উপস্থিত ছিলেন।

শামীম আহমেদ প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিকুল আযম ও পর্ষদ সদস্য সামছুল আলমের বিরুদ্ধে নিজ নামে ঋণ অনুমোদন, জাল-জালিয়াতি, দুর্নীতির প্রমাণ নষ্ট করতে ঘুষ প্রদান, নারী কেলেঙ্কারি, বেতন-ভাতা ম্যানিপুলেশন, মাদক কারবার ও কোম্পানির গাড়ি-বাড়ি দখলসহ বিস্তর অভিযোগ তুলে ধরেন। এছাড়া বর্তমান কোম্পানির সচিব তানভীর হাসানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও নানা কূটকৌশলের অভিযোগ আনেন।

মাইডাস ফাইন্যান্সের খেলাপি ঋণ প্রায় ৫০ শতাংশ দাবি করে তিনি বলেন, নানা দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে প্রায় ধ্বংসের পথে প্রতিষ্ঠানটি। বিনিয়োগ নেই, আশানরূপ আমানত নেই, রিকভারীও নেই। এনপিএল ৫০ শতাংশ। ঋণ বিতরণের মতো ফান্ড নেই। এই অবস্থায় হাজার হাজার আমানতকারী ও বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন।

শামীম বলেন, এসব অনিয়ম দুর্নীতির তথ্য প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডার, বিনিয়োগকারী ও আমানতকারীদের জানানো নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে হয়েছে। এসব অপকর্মে জড়িতদের শাস্তি হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি। তাই বিষয়টি জনসম্মুখে আনতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।

যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুন শেষে প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ প্রায় ১৯ শতাংশ। কিন্তু এ তথ্য তিনি অস্বচ্ছ বলে দাবি করেন।

শামীম আহমেদ বলেন, ঋণ বিতরণে অনিয়ম ও যোগসাযোশ করার কারণে বিতরণকৃত অর্থ ফেরত আসছে না। এ অবস্থায় আমানতকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। আমানতের টাকা ফেরত পাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবিড় তদারকি না হলে এক সময়ের মর্যাদার প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিংয়ের অবস্থা বরণ করবে। এর মাধ্যম বিপুল সংখ্যক আমানতকারীর স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে।

চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমের সহযোগিতায় ঋণের নামে মাইডাস থেকে টাকা বের করে নিয়ে গেছে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকদের মধ্য থেকে আপত্তি তুললে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন নির্বাহী পরিচালকের ভয় দেখানো হতো। এর ফলে ঋণ বিতরণ হলেও সে ঋণের টাকা ফেরত আসার সম্ভাবনা খুবই কম। একজন পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক যোগসাজশ করে নিকটত্মীদের মধ্যে এ ঋণ বিতরণ করার কারণে ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করেও অনিয়ম করে  খেলাপি দেখানো হচ্ছে না। এতে প্রতিষ্ঠানের ভেতরের অবস্থা খারাপ হলেও কৃত্রিমভাবে বাইরে ভালো দেখানো হচ্ছে।

কর্মচারী ছাঁটাইয়ের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারি আচরণ করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কর্মচারীদের ছাঁটাইয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিদের্শনা মানছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তদন্তে গেলে প্রভাব বিস্তার করে ছাঁটাইকৃত কর্মীকে আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠানের গাড়ি ও ভবন ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি লাখ লাখ ক্ষতি হচ্ছে। এক্ষেত্রে পরিচালত সামসুল আলম প্রভাব বিস্তার করে বলেও উল্লেখ করা হয়।

এদিকে মাইডাসের বিরুদ্ধে শামীম আহমেদের করা অভিযোগের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির কোম্পানি সচিব তানভীর হাসান ঢাকা মেইলকে বলেন, চাকরিচ্যুত কর্মী যেসব অভিযোগ করেছেন তা পুরোপুরি মিথ্যা। চাকরি যাওয়ার পর থেকে তিনি এই অভিযোগ নানা জায়গায় করে আসছেন। এগুলো বানোয়াট।

বিইউ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর