মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪, ঢাকা

মূল্যবৃদ্ধিতে অসন্তোষ, কারখানায় হানা দেবেন ভোক্তার কর্মকর্তারা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:৩৪ পিএম

শেয়ার করুন:

মূল্যবৃদ্ধিতে অসন্তোষ, কারখানায় হানা দেবেন ভোক্তার কর্মকর্তারা

কাঁচা মাল ও ডলারের দাম বৃদ্ধির অজুহাত দিয়ে সাবান, ডিটারজেন্ট, টুথপেস্ট, লিকুইড ক্লিনারসহ সব ধরণের পণ্যের দাম বাড়িয়েছে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো। এতদিন নির্বিঘ্নে দাম বাড়িয়ে ভোক্তার পকেট কাটলেও এদের বিরুদ্ধে নড়েচড়ে বসেছে ভোক্তা অধিকার অধিদফতর। 

সংস্থাটির তলবের মুখে এসে নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিকতায় ইউনিলিভার, স্কয়ার, এসিআই, কোহিনুরসহ বিভিন্ন গ্রুপ কোম্পানির প্রতিনিধিরা যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।  


বিজ্ঞাপন


নিত্যপণ্যের যৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে উৎপাদন কারখানাগুলো পরিদর্শন করবে সংস্থাটি।

বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) ভোক্তা অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ে নিত্যব্যবহার্য পণ্য সাবান, ডিটারজেন্ট, টুথপেস্ট, লিকুইড ক্লিনারের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্তের কথা জানান ভোক্তা অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।

মতবিনিময় সভায় গ্রুপ কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে ইউনিলিভারের সিএফও জাহিদ মালিথা, স্কয়ারের হেড অব অপারেশন মালিক এম সাইদ, এসিআইয়ের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ পলাশ হোসাইন, কল্লোল গ্রুপের মাহিদুল হাসান বক্তব্য রাখেন।  

আরও বক্তব্য রাখেন কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) প্রতিনিধি ও ভোক্তাকণ্ঠের সম্পাদক কাজী আব্দুল হান্নান।


বিজ্ঞাপন


মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ করে ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তারা ভয়াবহ তথ্য পেয়েছেন। এতে দেখা গেছে, গত জানুয়ারি মাসে ১০০ গ্রাম ওজনের একটি সুগন্ধি ব্র্যান্ডের সাবানের দাম ছিল ৪০ টাকা। এরপর কয়েক দফায় এ দাম বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ৫৫ টাকায়। সেই হিসাবে আট মাসের ব্যবধানে ১০০ গ্রাম ওজনের একটি সুগন্ধি সাবানের দাম বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৩৭ শতাংশ। তবে ওজনভেদে বাজারে সুগন্ধি সাবানের দাম ভিন্ন ভিন্ন।

অন্যদিকে গুঁড়া সাবান বা ডিটারজেন্টের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এ বছরের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে ৫০০ গ্রাম ওজনের এক প্যাকেট গুঁড়া সাবানের দাম ছিল ৬০ টাকা। দফায় দফায় দাম বেড়ে বাজারে এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। সেই হিসাবে আট মাসের ব্যবধানে ৫০০ গ্রাম ওজনের এক প্যাকেট গুঁড়া সাবানের দাম বেড়ে দেড়গুন হয়ে গেছে।

আর টুথপেস্ট ও শ্যাম্পুর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ১০০ গ্রামের একেকটি টিউবের টুথপেস্টের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। গত এপ্রিল, মে মাসেও ১০০ গ্রাম ওজনের একেকটি টিউবের টুথপেস্টের দাম ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৮৫ থেকে ৯৫ টাকা। সেই হিসাবে কয়েক মাসের ব্যবধানে টুথপেস্টের দাম বেড়েছে ২১ থেকে ২৭ শতাংশ পর্যন্ত। আর শ্যাম্পুর মাঝারি আকারের বোতলের দাম বেড়েছে ২০ টাকার মতো।

যা বলছে উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো
ডলার ও কাঁচামালের দামসহ উৎপাদন খরচ যে পরিমাণ বেড়েছে তাতে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ভোক্তাদের কথা বিবেচনায় রেখে যে পরিমাণ দাম বৃদ্ধি করার কথা সে পরিমাণ দাম বাড়াতে পারছেন না।

এসময় ইউনিলিভারের সিএফও বলেন,  জাহিদ মালিথা বলেন, ‘আমাদের উৎপাদনের ৮০ শতাংশ কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। বিশ্ব বাজারে দাম বাড়লে এবং ডলারের দাম বাড়লে আমাদের বাজারেও এর প্রভাব পড়ে। ২০২০ সালে আমাদের ৫০০ গ্রামের ওয়াশিং পাউডারের দাম ছিল ৬০ টাকা, এখন ৯০ টাকা। তাহলে বলতেই পারেন ৫০ শতাংশ দাম বেড়েছে। কিন্তু কাঁচামাল এবং আমাদের সব খরচের হিসেব অনুযায়ী এসব পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৯৬ শতাংশ। কিন্তু ভোক্তাদের কথা চিন্তা করে আমরা ততটা দাম বৃদ্ধি করিনি।’

আর স্কয়ারের হেড অব অপারেশন মালিক এম সাইদ বলেন, ‘সাবানের মূল্য কতটা বেড়েছে, এটা আমরা সবাই জানি। তবে এই দাম হঠাৎ করে একদিনে বাড়েনি। ধাপে ধাপে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর কাঁচামালের পণ্য যেভাবে বেড়েছে সাবানের মূল্যও আমাদের সেভাবে বাড়াতে হয়েছে। অনেকেই মনে করছে ২০/৩০ দিন পর পর পণ্যের দাম বাড়ছে। এর কারণ হচ্ছে আমরা তো এসব পণ্যের কাঁচামাল আমদানি করি দু’মাস পর পর। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে আমাদেরও দাম বাড়াতে হয়। সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখতে এমনটি করা হয়।’

এসময় কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) প্রতিনিধি কাজী আব্দুল হান্নান বলেন, ‘ব্র্যান্ড-ভ্যালু আর মানুষের ইমোশনকে পুঁজি করে বড় বড় কোম্পানিগুলো ভোক্তাদের ব্ল্যাকমেইল করছে কি না, সে বিষয়ে নজরদারির সময় এসেছে। যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি সেসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে কোম্পানিগুলো। কিন্তু যেসব পণ্যের চাহিদা কম সেগুলোর কাঁচামালের দাম বাড়লেও বাজারে দাম বৃদ্ধি করেনি। পণ্যের দাম সমন্বয়ের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত চতুরতার আশ্রয় নিচ্ছে উৎপাদন ও বিপণন প্রতিষ্ঠানগুলো। উৎপাদন বা পরিবহন খরচ যতটা বেড়েছে তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি বাড়ানো হচ্ছে পণ্যের দাম।’

যা বললেন ভোক্তার ডিজি

মতবিনিময় সভায় এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘কোন পণ্যের দাম বাড়াতে হলে তার পক্ষে যৌক্তিক কারণ দেখাতে হবে কোম্পানিগুলোকে। সে জন্য তাদের ফ্যাক্টরিতে আমরা যাব। কত দামে কাঁচামাল আমদানি হচ্ছে, কোন পণ্য উৎপাদনে কত খরচ হচ্ছে এবং কোন পণ্য কী দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে সেগুলো আমরা বিশ্লেষণ করতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘পরবর্তী সময়ে আমরা পর্যবেক্ষণ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে প্রতিবেদন দেব। এরপর বিষয়গুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত আসবে। পণ্যের যৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে কি না, সেটা আমরা দেখতে চাই।’

এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘বিভিন্ন কোম্পানি ও ভোক্তাদের মধ্যে দর দাম নিয়ে একটা দূরত্ব আছে। যখন কোন জিনিসের দাম বাড়ে। আমরা তখন ভোক্তাদের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন যে তাদের পকেট কাটা হচ্ছে। আবার আমরা যখন কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলি তখন তারাও স্ট্রং যুক্তি দেখায়। এখন দাম বাড়ানোর বিষয়ে কোম্পানি ভোক্তাদের মাঝে তাদের দাম বাড়ানোর বিষয়টা পরিস্কার করতে পারছে না। এই বিষয়টি ক্লিয়ার হওয়ার দরকার।’

বিইউ/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর