শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

বেতনের অর্ধেক যায় বাসা ভাড়ায়, সংসার চালানো দায়

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
প্রকাশিত: ০১ মার্চ ২০২২, ০৯:৫২ পিএম

শেয়ার করুন:

বেতনের অর্ধেক যায় বাসা ভাড়ায়, সংসার চালানো দায়

রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন রাসেল। বেতন পান ২২ হাজার টাকার মতো। অফিসের কাছাকাছি বাসা ভাড়া বেশি হওয়ায় থাকেন একটু ভেতরের দিকে বছিলা এলাকায়। তবুও তাকে বাসা ভাড়ার জন্য গুনতে হয় সাড়ে নয় হাজার টাকা। গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল সব মিলিয়ে আরও যোগ হয় প্রায় দুই হাজার টাকা। অর্থাৎ ২২ হাজার টাকা বেতনের অর্ধেকেরও বেশি চলে যাচ্ছে তার বাসা ভাড়ার পেছনে।

বেতনের বাকি অর্ধেক টাকা দিয়ে রাসেলকে সারা মাস চলতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে বাজার-সদাই, অফিসে যাতায়াতসহ আনুসঙ্গিক খরচ। এভাবেই কষ্ট করে চলতে হচ্ছে তাকে। মাস শেষে সঞ্চয় বলতে কিছুই থাকে না।


বিজ্ঞাপন


সম্প্রতি প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন রাসেল। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘মাস শেষে যা বেতন পাই তা দিয়ে এতদিন কষ্ট করে হলেও চলতে পারছি। কিন্তু এখন যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে! তারওপর শুনছি গ্যাসের দাম পানির দাম আরও বাড়বে। তাহলে আমরা চলবো কীভাবে? সংসার চালানোই দায় হয়ে যাবে।’

একই অবস্থার কথা জানালেন রাজধানীর মগবাজারে একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আরিফ হাসান। তিনি বেতন পান প্রায় ৩০ হাজার টাকার মতো। মগবাজার এলাকায় দুই রুমের বাসায় থাকেন সপরিবারে। তাকে প্রতি মাসে বাসা ভাড়া দিতে হয় ১৪ হাজার টাকা। গ্যাস, বিদ্যুৎবিলসহ তাকে গুনতে হয় প্রায় ১৬ হাজার টাকার মতো।

আরিফ হাসান জানান, তার বেতনের অর্ধেকেরও বেশি চলে যায় বাসা ভাড়ায়। এছাড়া নিত্যদিনের বাজারের মধ্যে শুধু তেল মরিচ পেঁয়াজ মসলা ইত্যাদি কিনতে আরও দুই হাজার টাকা খরচ হয়। অবশিষ্ট টাকা দিয়ে তাকে সারা মাসের বাজার খরচ চালাতে হয়।

দ্রব্যমূল্যের এই বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছে মধ্যআয়ের মানুষ। বিশেষ করে রাজধানীতে যাদের আয় ২০-৩০ হাজারের মধ্যে তাদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেকের বেতনের অর্ধেক বা তারও বেশি টাকা শুধু বাসা ভাড়াতেই চলে যাচ্ছে। এছাড়া ভোজ্যতেল, মরিচ, পেঁয়াজ ইত্যাদি মসলা কিনতে মাসে চলে যায় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা।

সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর বেড়ে যায় গণপরিবহন ভাড়া। যার প্রভাব পড়ে প্রতিটি জিনিসের ওপর। বেড়ে যায় নিত্যপণসহ সব জিনিসপত্রের দাম। এরই মধ্যে পানি ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়ে কথাবার্তা চলছে। যা মধ্যবিত্ত বা নিম্নআয়ের মানুষদের জন্য 'মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা'র মতো অবস্থা।

Bazar-1

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ বিষয়ক সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, গত ২৫ বছরে নিত্যপণ্যের দামের তুলনায় রাজধানীতে বাড়িভাড়া বাড়ানোর হার প্রায় দ্বিগুণ। আর যে হারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে তাতে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে শুধু সয়াবিন তেল আর আর টুকিটাকি মসলাপাতি কিনতে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ‍নিত্যপণ্যের দাম যে হারে বাড়ছে সে হিসেবে নিম্নবিত্ত মধ্যআয়ের মানুষ তো দূরের কথা, উচ্চ মধ্যবিত্তরাও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে।

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য লাগামহীন বৃদ্ধি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, সবার ওপর চাপ পড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্তদের ওপর চাপ পড়ছে বেশি।’

সুজন সম্পাদক বলেন, ‘সরকার নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। তারওপর আবার গ্যাস ও পানির দাম বাড়ানোর যে তৎপরতা চলছে, এর ফলে বাসা ভাড়া আরও বাড়বে। এটা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। খবরের কাগজে প্রতিষ্ঠানগুলোর অদক্ষতা দুর্নীতির কথা উঠে আসছে। তারা (প্রতিষ্ঠানগুলো) অদক্ষ বা দুর্নীতি করবে আর সে খেসারত জণগণকে দিতে হবে কেন? ওয়াসা বা যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে সরকারের উচিত এসব প্রতিষ্ঠান থেকে অদক্ষতা দূর করা, একই সঙ্গে দুর্নীতি দূর করা।’

ভাড়াটিয়া পরিষদের সহসাধারণ সম্পাদক ‍মুহাম্মদ মোস্তফা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ঢাকা শহরে প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ ভাড়া বাসায় থাকেন। মানুষের নিত্যপণের যে মূল্যবৃদ্ধি তাতেই মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। তার ওপর গ্যাস ও ‍পানির দাম বাড়ানোর একটা কথাবার্তা চলছে। গ্যাসের দাম বা পানির দাম যদি বাড়ে তাতে সেই চাপটাও ভাড়াটিয়াদের ওপর পড়বে। বাসা ভাড়া আরও বেড়ে যাবে। মানুষের সংসার চালানোই দায় হয়ে যাবে।’

টিএই/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর