বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

বাণিজ্যমন্ত্রীর চালের দাম নিয়ে বক্তব্যের পরও প্রভাব পড়েনি বাজারে

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৯ আগস্ট ২০২২, ১১:৩৯ এএম

শেয়ার করুন:

বাণিজ্যমন্ত্রীর চালের দাম নিয়ে বক্তব্যের পরও প্রভাব পড়েনি বাজারে

জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে বেড়ে যাওয়া চালের দাম নিয়ন্ত্রণে কাজে আসছে না অভিযানও। এরই মধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিও ‘অযৌক্তিকভাবে চালের মূল্যবৃদ্ধি’ করা হয়েছে বলছেন। আর বাড়লেও কতোটা বড়তে পারে তাও জানিয়েছেন।

মন্ত্রীর এমন ঘোষণার পর শুক্রবার (১৯ আগস্ট) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাবুবাজার ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটসহ কয়েকটি খুচরা চালের বাজারে সরেজমিনে ঘুরে দেখেছে এ প্রতিবেদক।


বিজ্ঞাপন


দেখা যায়, জ্বালানির দোহাই দিয়ে যেখানে কেজি প্রতি পাইকারী বাজারে তিন থেকে চার টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ৪-৮ বাড়িয়ে দেওয়া দাম কমেনি বরং বেড়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে খুচরা পর্যায়ে ৮-১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। নতুন চাল আমদানি বা বাজারে না আসা পর্যন্ত এই দাম আরও বাড়ার শঙ্কা করছে ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালের বাজারে এমন অবস্থার জন্য জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিকেই দায়ী করছে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী। অন্যদিকে খুচরা ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা বলছেন, কিছু সংখ্যক রাইস মিল মালিক ও মজুদদারদের ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণের কারণে দেশে সব ধরনের চালের দাম বাড়ছে।

এছাড়াও পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির পাশাপাশি বন্যার প্রভাবে ধানের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে বলছেন কেউ কেউ। প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবে যেখানে বিঘাপ্রতি ২ থেকে ৪ মণ কমেছে বলছেন তারা।  

পাল্লা দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে নাভিশ্বাস উঠেছে জনজীবনে। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ক্রেতারা। এই পরিস্থিতিতে চাল আমদানির অনুমতি থাকলেও ডলার সংকটে গতি হারিয়েছে আমদানিতেও। যদিও এরই মধ্যে সরকার চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। 


বিজ্ঞাপন


দেশের চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে বেসরকারিভাবে আরও ৬টি প্রতিষ্ঠানকে ৩২ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমতির জন্য চিঠি পাঠিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠানগুলো ২০ হাজার টন নন বাসমতি সেদ্ধ ও ১২ হাজার টন আতপ চাল আমদানি করবে। সম্প্রতি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মজিবর রহমান স্বাক্ষরিত দুটি চিঠি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে।

কারওয়ান বাজারের নাজনীন রাইস এজেন্সির রফিকুল হাসান বলেছেন, বাজারে বেড়েছে জ্বালানির দাম, তাই মিল মালিকরা বাড়িয়েছে চালের দাম। ভারত থেকে আমদানিও করা চালের দামও ঊর্ধ্বমুখী। তাই বাজারে বেড়েছে দাম। 

যদিও এমন যুক্তি মানতে নারাজ খোদ বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর যেখানে কেজিপ্রতি ৫০ পয়সার বেশি বাড়ার কথা না। তখন এসব মিলার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা মিলে সিন্ডিকেট করে প্রতি কেজি চালে ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে, খুচরা বাজারে চালের দাম বেড়েছে।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাত ও মানভেদে প্রতিকেজি মিনিকেট চাল খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছ ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। অন্যদিকে নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৯০ টাকা দরে। মাঝারি মানের চাল পাইজাম ও হাস্কি ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা। এছাড়াও আটাশ ৬, স্বর্ণা ৫২ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। যেখানে গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিপ্রতি ৫ থেকে ৬ টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

পাইকারী বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, প্রতিকেজি মিনিকেট মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৭০ টাকা। নাজিরশাইল মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮৪ টাকা। গত সপ্তাহের তুলনায় ৪ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। এছাড়াও আটাশ ৫৩ থেকে ৫৯ টাকা, পাইজাম এবং লাস্কি ৫০ থেকে বেড়ে ৫৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহ থেকে বেড়েছে ৩-৪ টাকা।

বাবুবাজার পাইকারী চাল বিক্রেতা মো. ইব্রাহিম জানান, প্রতিদিন মিলগেটে চালের দাম বস্তাপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা বাড়ছে। তিন থেকে চার দিনের ব্যবধানে সেটা ১৫০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ভালো মানের ব্র্যান্ডের মিনিকেট এখন বস্তাপ্রতি তিন হাজার ৪০০ থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে ব্র্যান্ড বাদে ১০০ থেকে ২০০ টাকা কম মূল্যে মিলছে। বর্তমানে পাইকারীতে প্রকারভেদে প্রতিকেজি মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৭০ টাকায়। রশিদ ব্র্যান্ডের চাল কয়েকদিন আগেও তিন হাজার ২২০ টাকায় বিক্রি করতাম, এখন সেটা তিন হাজার ৪৭০ টাকায় বিক্রি করছি। তারপরও অনেকের কাছে এই চাল নেই। এলাকা খুঁজে দু’একটা দোকানে পাবেন।

এ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, দেশের কোটি কোটি মানুষের মনেরই প্রশ্ন দর-দাম নিয়ে। প্রতিদিন বাজারে গিয়ে এ প্রশ্নই জাগে মানুষের মনে। শুধু চালের বেলায় নয়, সব ধরনের পণ্যের ক্ষেত্রে এ প্রশ্ন। 

মন্ত্রী বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে চালের পরিবহন ব্যয় কেজিপ্রতি ৫০ পয়সা বাড়তে পারে বলে মনে করেন। আর এর সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা চালের দাম চার টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছেন জানিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন তিনি। তিনি বলেছেন, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এভাবে দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। সুযোগ পেয়ে লাফিয়ে পড়েছে ব্যবসায়ীরা।

ডিএইচডি/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর