বৃহস্পতিবার, ২ মে, ২০২৪, ঢাকা

স্বস্তির বাতাস আমদানি-রফতানিতে, কমবে পণ্যমূল্য

তানভীর আহমেদ
প্রকাশিত: ১৮ আগস্ট ২০২২, ০২:২৫ পিএম

শেয়ার করুন:

স্বস্তির বাতাস আমদানি-রফতানিতে, কমবে পণ্যমূল্য

বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমানা থেকে প্রায় ছয় হাজার কিলোমিটার দূরে চলছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এই দুই দেশের সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক। এজন্য এই যুদ্ধ বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের ওপর বড় প্রভাব ফেলে। কয়েক মাস ধরে লাফিয়ে বেড়েছে দ্রব্যমূল্য। একেবারেই ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় হাঁসফাঁস করছে মানুষ। তবে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে আমদানি রফতানির ক্ষেত্রে একধরনের সমঝোতায় স্বস্তি বাতাস দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। 

চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। এরপর কৃষ্ণ সাগরের সব বন্দর থেকে আমদানি-রফতানি বন্ধ ছিল। তবে কয়েক দিন আগে শস্যবাহী জাহাজ ইউক্রেন ছাড়লেও এটিই গমের প্রথম চালান। বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ গমের চাহিদা পূরণ হয় দেশ দুইটি থেকে। গত মাসে হওয়া চুক্তির আওতায় ১ আগস্ট ইউক্রেনের ওডেসা বন্দর ছাড়ে শস্যবাহী প্রথম জাহাজ। রাশিয়ার হামলার পর সাগর পথে এত দিন ইউক্রেনের শস্য রফতানি বন্ধ ছিল।


বিজ্ঞাপন


খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, রাশিয়া থেকে ৩ লাখ টন গম আমদানি করার নীতিগত সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে সরকার। এ লক্ষ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেছে রাশিয়া। বৈঠকে গম আমদানি বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও গম রফতানিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

আমদানি ও রফতানি নিয়ন্ত্রণ দফতরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে প্রতি বছর প্রায় ১১০ কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়ে থাকে। বাংলাদেশের গমের মোট চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ আসে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। প্রতি বছর এই দুই দেশ থেকে প্রায় একশ কোটি টন গম বাংলাদেশে আসে। সূর্যমুখী তেলের ৮০ শতাংশই আসে এই দুটি দেশ থেকে। বাংলাদেশের মোট ভুট্টার চাহিদার ২০ শতাংশ আসে দেশ দুটি থেকে। বাংলাদেশ বর্তমানে প্রতি বছর ৫০ লাখ টন ডিজেল, ১৩ লাখ টন অপরিশোধিত তেল, দুই লাখ টন ফার্নেস অয়েল এবং এক লাখ ২০ হাজার টন অকটেন আমদানি করে। বিশ্ববাজারে এখন প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ১১৫ ডলার পর্যন্ত ওঠেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে বাংলাদেশে নিয়মিত আমদানি হচ্ছে তুলা, গম, ভুট্টা, সরিষা, মসুর ডাল। দেশে বছরে গমের চাহিদা সর্বোচ্চ ৭০ লাখ টনের মধ্যে ৩৫ লাখ টন আসছে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে।

এই গম প্রক্রিয়াজাত করে ময়দা, আটা, সুজিসহ বিভিন্ন উপজাত পণ্য উৎপাদন হয়ে থাকে। রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য ইতোমধ্যে বেড়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাশিয়া, ইউক্রেনের সঙ্গে বাংলাদেশে পণ্য আমদানি কার্যক্রম স্থগিত রাখতে উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়েছেন।


বিজ্ঞাপন


রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশে থেকে রাশিয়ায় রফতানি হয়েছে ৬৬ কোটি ৫৩ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য, যার মধ্যে তৈরি পোশাক সবচেয়ে বেশি। আমদানি হয়েছে ৪৬ কোটি ৬৭ লাখ ডলারের পণ্য, যার বেশিরভাগটাই খাদ্যপণ্য। এর আগের বছর রাশিয়ায় বাংলাদেশ রফতানি করেছিল ৪৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য, অন্যদিকে আমদানি হয়েছে ৭৮ কোটি ২০ লাখ ডলারের পণ্য। বিশেষ করে গমের চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ আসে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। ভুট্টার ২০ শতাংশ আসে এই দুটি দেশ থেকে। আবার তৈরি পোশাক রফতানির নতুন বাজার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে রাশিয়াকেও। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটের প্রভাব এর মধ্যেই পড়তে শুরু করেছে তাদের ব্যবসার ওপর।

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান নোয়াপাড়া গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফায়েজুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, রাশিয়া এবং ইউক্রেন যুদ্ধ চলমান থাকায় দেশের আমদানি রফতানির ক্ষেত্রে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। যুদ্ধের কারণে বেড়েছে তেলের দাম। যার প্রভাব পড়েছে বাজারে। তবে সম্প্রতি রাশিয়া থেকে গম আমদানিতে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা হওয়ায় কিছুটা স্বস্তির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তবে পুরোপুরি স্বভাবিক হবে আরো সময় লাগবে। অপর গম আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এস কে রেজা এন্টার প্রাইজের প্রোপ্রাইটর শাহিন রেজা বলেন, গম আমদানির বিষয়ে সরকার পর্যায়ে আলোচনা হলেও এখন পর্যন্ত আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। রাশিয়া বা ইউক্রেন থেকে গম আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হলেও দেশে পৌঁছাতে দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগবে। তাই দেশের বাজারে এর প্রভাব পড়তে আরো সময় লাগবে। 

রাশিয়া থেকে গম আমদানির বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ঢাকা মেইলকে বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থ বিনিময়ের বেশ কিছু জটিলতা থাকার কারণে আমদানির ক্ষেত্রে বড় ধরনের বাধা ছিলো। সম্প্রতি সে জটিলতা কাটায় আমদানির পথ খুলেছে। তারই ধারাবাহিকতায় রাশিয়া থেকে তিন লাখ টন গম আমদানির আলোচনা চূড়ান্ত হয়েছে। আমদানির এই ধারা অব্যাহত থাকলে বর্তমান বাজারের উর্ধ্বগতি কিছুটা কমবে বলে মন্তব্য করেন খাদ্যমন্ত্রী।

টিএ/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর