বুধবার, ৮ মে, ২০২৪, ঢাকা

ডলারের দামে কারসাজি রুখতে ‘অ্যাকশনে’ বাংলাদেশ ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১ আগস্ট ২০২২, ০৯:৪৮ পিএম

শেয়ার করুন:

ডলারের দামে কারসাজি রুখতে ‘অ্যাকশনে’ বাংলাদেশ ব্যাংক
ফাইল ছবি

গত কয়েক মাস ধরেই দেশের বাজারে ডলারের দামে অস্থিরতা বিরাজ করছে। প্রতি মার্কিন ডলার ১১২ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে সম্প্রতি। ডলার বাজারের এই অস্থিরতা রুখতে অ্যাকশনে নেমেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিভিন্ন মানি একচেঞ্জে অভিযান চালানো হচ্ছে। এই অভিযানে এক দিনে তিনটি মানি একচেঞ্জের লাইসেন্স স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া ১১টির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সুপারিশ করা হয়েছে।

সোমবার (১ আগস্ট) রাজধানীর বিসমিল্লাহ মানি এক্সচেঞ্জ, অঙ্কন মানি এক্সচেঞ্জ ও ফয়েজ মানি এক্সচেঞ্জ নামের তিনটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়। ডলারের বিনিময় মূল্য বাড়াতে কারসাজি, নগদ অর্থ লেনদেনের হিসাব সংরক্ষণ না করা এবং অনুমোদন ছাড়া একাধিক শাখা খুলে ব্যবসা করায় তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।


বিজ্ঞাপন


এছাড়া ১১টি মানি এক্সচেঞ্জের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম। তবে সেই মানি এক্সচেঞ্জগুলোর নাম প্রকাশ করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

খোলাবাজারে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।

মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ডলারে অনিয়ম পেলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। এর আগেও আমরা ১০টি টিম মার্কেটে পাঠিয়েছি। এ টিমগুলো ডলার মার্কেটে কিছু তথ্য পেয়েছে, যা রুলস-রেগুলেশন কাভার করে না। লাইসেন্স নেই এমন প্রতিষ্ঠানও ডলার কেনাবেচনার সঙ্গে জড়িত, এমন তথ্যও এসেছে। আবার কেউ কেউ একটি লাইসেন্স নিয়ে দুটি শাখায় ব্যবসা করছেন। এমনটি যারা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে জরুরিভিত্তিতে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে।

গত সপ্তাহে দুই দিনে রাজধানীর পল্টন, মতিঝিল, বনান ও ধানমণ্ডি এলাকার ৩৩টি মানি এক্সচেঞ্জ পরিদর্শন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দল। ১০টি দলে ভাগ হয়ে ঢাকার কয়েকটি অঞ্চলে থাকা অনুমোদিত মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে অভিযান চালান বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও ছিলেন তাদের সঙ্গে।


বিজ্ঞাপন


গত ২৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) সংকটের এই সময়ে ডলার নিয়ে কারসাজি করলে সংশ্লিষ্ট মানি এক্সচেঞ্জের লাইসেন্স বাতিল করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এদিন নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম।

সম্প্রতি খোলাবাজারে ডলারের দাম উঠেছে রেকর্ড ১১২ টাকা। এমনকি ব্যাংকগুলোও ১০৫ থেকে ১০৮ টাকা দর রাখছে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে ৯ থেকে ১৪ টাকা বেশি। এক দিনেই দাম বাড়ে ৭ টাকা, যা এর আগে কখনও দেখা যায়নি। ডলারের দামে এই অস্থিরতা ঠেকাতে উদ্যোগ নিতে গভর্নরকে অনুরোধ করেন এফবিসিসিআইয়ের প্রধান।

DDD

পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ডলারের দাম চড়া করে যেসব মানিচেঞ্জার ও ব্যাংকগুলো মুনাফা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন, ‘ডলার বাজার স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। এ কাজে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। জড়িতদের চিহ্নিত করতে অভিযান অব্যাহত থাকবে। অনিয়মের প্রমাণ পেলে প্রয়োজনে লাইসেন্স বাতিলও করা হবে।’

এছাড়া সংকট নিরসনে বিদেশের ব্যাংকগুলোর আটকে থাকা ডলার দ্রুত ফেরত আনার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো এসব ডলার বিদেশ থেকে না নিয়ে এলে আর ডলার সাপোর্ট দেবে না বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, ডলার সংকটের কারণে এই মুহূর্তে আমরা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। এখন পর্যন্ত মার্কেট স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুযায়ী ৭ বিলিয়ন ডলার সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে। এখনও দেড় বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স বিদেশে আটকে আছে। যেটা এখনও আনা হয়নি। এছাড়া ব্যাংকগুলোর নষ্ট অ্যাকাউন্টে প্রায় নয় বিলিয়ন ডলার রফতানি পুনর্গঠন হিসেবে আটকে আছে। আটকে থাকা এসব ডলার দ্রুত ফেরত আনার নির্দেশ দিয়েছি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, এই মুহূর্তে ব্যাংকগুলো যদি এসব ডলার বিদেশ থেকে না নিয়ে আসে তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক আর ডলার সাপোর্ট দেবে না। ব্যাংকগুলোর সাপোর্টের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ ব্যাংক পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।

জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর