সোমবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বাড়ছে পেঁয়াজের ঝাঁজ, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৭:৫৭ এএম

শেয়ার করুন:

বাড়ছে পেঁয়াজের ঝাঁজ, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
ফাইল ছবি

প্রতিনিয়ত বেড়ে চলছে নিত্যপণ্যের দাম। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের অবস্থা শোচনীয়। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব না মেলাতে পেরে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। বাজারে প্রায় প্রতিটি নিত্যপণ্যের দামই চড়া। রমজান শুরু হতে আরও এক মাসের বেশি সময় বাকি। এর মধ্যেই একশ্রেণির বিক্রেতা কারসাজি করে দাম বাড়াচ্ছে নিত্যপণ্যের। এজন্য কঠোরভাবে বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত কয়েক দিন আগেও বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩০-৩৫ টাকায়। অথচ এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। এজন্য টিসিবির গাড়িতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ভিড়। উচ্চমূল্যের খেসারত হিসেবে ক্রেতারা নিত্যপণ্য কিনতে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।


বিজ্ঞাপন


রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হলের বাজারে পেঁয়াজ ৫৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতা সুলতান হোসেন ঢাকা মেইলকে জানান, ৪-৫ দিন আগেও ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছি। এখন দাম বেড়েছে পাইকারিতে, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

টাউন হলের পাশের বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজ ৫৬ বা ৫৮ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি করতে দেখা গেছে। বাজার করতে আসা জুলহাস উদ্দিন ঢাকা মেইলকে বলেন, এক সপ্তাহ বা তার একটু বেশি আগে যে পেঁয়াজ ছিল ৩০ টাকা কেজি তা এখন প্রায় ডাবল এটি মানা যায় বলেন? আসলে আমাদের বাজার ব্যবস্থা এত খারাপ যে, যার যার মতো দাম বাড়িয়ে জিনিসপত্র বিক্রি করে থাকে। আমরা জনগণ সবসময় তার খেসারত দিই।

কারওয়ান বাজারেও দেখা গেছে, পেঁয়াজের বাড়তি দাম। শুক্কুর আলী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। শনিবার কারওয়ান বাজারের বাজার করতে এসে অনেকটাই বাকবিতণ্ডায় জড়ান বিক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, শুধু পেঁয়াজ নয়, সব পণ্যের দাম একটু একটু করে বাড়ছে। কিছুদিন পর রোজায় কী হবে তা কি আপনার টের পাচ্ছেন না? এখনই এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে দেখার আহ্বান জানান তিনি।  

শুক্কুর আলী বলেন, আমরা চাকরিজীবীদের একটা হিসাব থাকে। এমন দাম বাড়া জিনিস কিনতে গেলে হিসাবতো গড়মিল লেগে যায়। মাস শেষে সংসার চালানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তবে বাজারে আদার দাম কমেছে। আগের চেয়ে ২০ টাকা কমে আদা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।


বিজ্ঞাপন


শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কয়েকটি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কিছু সবজিরও দাম বেড়েছে। রসুনের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। রসুন বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকা কেজিতে। বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৫-১৬৮ টাকায়। পাঁচ লিটারের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৭৯৫-৮২০ টাকায়।

৬ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের বৈঠকে নির্ধারিত নতুন দরেই সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে। বৈঠকে বোতলজাত সয়াবিন তেলের প্রতি লিটারের সর্বোচ্চ মূল্য ১৬৮ টাকা, পাঁচ লিটারের বোতলের দাম ৭৯৫ টাকা, খোলা সয়াবিনের লিটার ১৪৩ টাকা এবং সুপার পাম তেলের দাম ১৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

টিসিবির তথ্যমতে, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে সয়াবিন তেলের দাম ছিল প্রতি লিটার ১০৪ টাকা। সেই সয়াবিন তেল আজ কিনতে হচ্ছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকায়। দাম বৃদ্ধির এই হার প্রায় ৬০ শতাংশের বেশি। পাম অয়েলের দাম বেড়েছে প্রতি মনে ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। আরেকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য হলো মসুর ডাল। তিন বছর আগে এর দাম ছিল কেজিপ্রতি ৫৫ টাকা। সেই ডাল আজকের বাজারে কিনতে হচ্ছে কেজিপ্রতি ৯৭ টাকা ৫০ পয়সায়। এর দাম বেড়েছে ৭৭ শতাংশেরও বেশি। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে আটার দাম ছিল কেজিপ্রতি ২৮ টাকা ৫০ পয়সা। বর্তমানে বাজারে এর দাম ৩৪ টাকা ৫০ পয়সা। আটার দাম বেড়েছে প্রায় ২২ শতাংশ।

মাছের যথেষ্ট সরবরাহ রয়েছে বাজারে। তারপরও দাম তুলনামূলক বেশি। প্রতি কেজি রুই আকারভেদে ৩৫০-৪০০ টাকা কেজি, কাতল (বড়) ৩৫০ টাকা, বড় চিংড়ি ৭০০ টাকা, মাঝারি চিংড়ি ৫৫০-৬০০, ছোট চিংড়ি ৪৫০-৫০০ টাকা, নদীর মাঝারি চিংড়ি ৭৫০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, দারিদ্র্যের এই হার করোনাপূর্ব ২১ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪১ শতাংশ হয়েছে। ২০২০ সালের অক্টোবরের বিবিএসের এক জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশের মানুষের আয় ২০ শতাংশ কমে গেছে। একদিকে আয় কমেছে ২০ শতাংশ, অপরদিকে ব্যয় বেড়েছে ৩৬ শতাংশ। তার মানে হলো, ১০০ টাকার আয় কমে ৮০ টাকা হয়েছে আর ১০০ টাকার ব্যয় বেড়ে ১৩৬ টাকা হয়েছে। আয়-ব্যয়ের ব্যবধান হলো ৫৬ শতাংশ।

রমজান শুরুর আরও এক মাসের বেশি সময় বাকি। অথচ এখনই প্রতিটি পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে চাল, ডাল, তেল, মাছ, গোশত, সবজিসহ প্রতিটি পণ্যমূল্য। কখনও কখনও পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে নানা অজুহাতে দাম বাড়ানোর অভিযোগ রয়েছে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। বাজারের নিয়ন্ত্রণ যাতে দুষ্টচক্রের হাতে চলে না যায়, সেজন্য কঠোর মনিটরিংয়ের কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

ডব্লিউএইচ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর