শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

এহসান মাল্টিপারপাসের নামে বিপুল অর্থ পাচার, ৭ জনের বিরুদ্ধ অভিযোগপত্র

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:১৩ পিএম

শেয়ার করুন:

এহসান মাল্টিপারপাসের ১০১ কোটি টাকা পাচার, আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল
এহসান মাল্টিপারপাসের ১০১ কোটি টাকা পাচার, আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল।

প্রতারণার মাধ্যমে গত ১৩ বছরে ১০১ কোাটি টাকা আত্মসাৎ করে তা পাচার করেছে এহসান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড এবং এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেড। তদন্তে নেমে সিআইডি সেই তথ্যও পেয়েছে। তদন্তের পর গ্রুপটির পরিচালক ও তার স্ত্রীসহ প্রতিষ্ঠান দুইটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা তাদের নিকট আত্মীয়-স্বজনসহ মোট ৭ জন ব্যক্তি ও ২টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে সিআইডি।

সিআইডি বলছে, এহসান মাল্টিপারপাস ও রিয়েল এস্টেটের নামে পিরোজপুরে ২০০৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে প্রতারণার মাধ্যমে ১০১ কোটি ৪৫ লাখ ৯৪ হাজার ২৩৮ টাকা সংগ্রহ ও অর্থপাচার করেছে। 


বিজ্ঞাপন


সিআইডি জানিয়েছে, পিরোজপুরে এহসান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড এবং এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেডের ২০০৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে প্রতারণার মাধ্যমে ১০১ কোটি ৪৫ লাখ ৯৪ হাজার ২৩৮ টাকা সংগ্রহ ও অর্থপাচারের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। 

তদন্ত বেরিয়ে এসেছে, ‘এহসান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড’ এবং ‘এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেড’ ২০০৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত নিজেদের বৈধ আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচয় দিয়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালাতো। তারা উচ্চ মুনাফার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সরাসরি বাড়ি–বাড়ি গিয়ে, স্থানীয় সভা–সমাবেশে এবং এজেন্টদের মাধ্যমে বিনিয়োগের নিমিত্তে টাকা সংগ্রহ করতো। এই সময়ে প্রতিষ্ঠান দুটি পিরোজপুর, বরিশাল ও আশপাশের এলাকার সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী এবং প্রবাসীদের পরিবারের কাছ থেকে অর্থ উত্তোলন করেছিল। তদন্তে জানা গেছে, বিনিয়োগকারীদের উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে তারা স্থানীয় মসজিদ, স্কুল ও মাদ্রাসা থেকেও টাকা নিয়েছে।

এই সময়ে চক্রটি মোট ১০১ কোটি টাকার বেশি অর্থ গ্রহণ করে, পরবর্তীতে তারা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি অর্জনসহ পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্ন ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে এই অর্থ আত্মসাৎ করেছে বলে সিআইডির তদন্তে উঠে এসেছে।

সিআইডি তদন্ত করে পেয়েছে যে, পরিচালক রাগীব আহসান ও তার স্ত্রী সালমা আহসান ২০০৮ থেকে প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করে বিনিয়োগের প্রেক্ষিতে উচ্চ মুনাফার প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্থানীয় ও প্রবাসীসহ মোট হাজারেরও অধিক মানুষদের কাছ থেকে বিনিয়োগের নামে অর্থ সংগ্রহ করেছেন। এই দম্পতির সাথে পরস্পর যোগসাজশে আবুল বাশার খান, খায়রুল ইসলাম, শামীম হাসান, মাহমুদুল হাসান ও মো. নাজমুল ইসলাম এই অর্থ সংগ্রহ ও স্থানান্তরের কাজে সরাসরি যুক্ত ছিলেন বলে তদন্তে উঠে আসে।


বিজ্ঞাপন


ভুক্তভোগীরা উপরোল্লিখিত প্রতিষ্ঠান দুইটির মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হয়ে পিরোজপুর সদর থানাসহ বিভিন্ন থানায় প্রায় শতাধিক মামলা দায়ের করেছেন। সিআইডি এরকম প্রায় একশত মামলা পর্যালোচনা করে প্রাথমিকভাবে এসকল অভিযোগের সত্যতা পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পিরোজপুর সদর থানার মামলা নং- ১৫, তাং- ২৩/১২/২০২১ খ্রি., ধারা- মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫) এর ৪(২)/৪(৪) রুজু করে। দীর্ঘ তদন্ত কার্যক্রম শেষে এই অপরাধের সাথে জড়িত ৭ জন ১) রাগীব আহসান (৪০), ২) মো. আবুল বাশার খান(৩৫), ৩) খায়রুল ইসলাম (৩৫), ৪) শামীম হাসান (৩৭), ৫) মো. মাহমুদুল হাসান (৩১), ৬) সালমা আহসান (৩২), ও মো. নাজমুল ইসলাম এবং ২ টি প্রতিষ্ঠান ৮) এহসান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি. ও ৯) এহসান রিয়েল এস্টেট এন্ড বিল্ডার্স লি. এর বিরুদ্ধে সিআইডি অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। বিচারার্থে সোপর্দকৃত অভিযুক্তগণ বর্তমানে হাজতবাসে আছে।

রাষ্ট্রের অর্থপাচারে জড়িত বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে আইনের আওতায় আনা এবং রাষ্ট্রের আর্থিক স্বার্থ সংরক্ষণে সিআইডির এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

এমআইকে/এআর 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর