শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

স্পিনিং শিল্পে ধস ঠেকাতে সরকারের সহায়তা চায় মালিকপক্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:১৫ পিএম

শেয়ার করুন:

স্পিনিং শিল্পে ধস ঠেকাতে সরকারের সহায়তা চায় মালিকপক্ষ

বাংলাদেশের স্পিনিং শিল্পে কর্মরত লাখ লাখ শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তার চাকরি রক্ষায় সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে খাতটির প্রতিনিধিরা। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের তৈরি পোশাক শিল্পকে শক্তিশালী করার পেছনে স্পিনিং সেক্টরের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। কাঁচা তুলা থেকে সুতা উৎপাদন, দক্ষ শ্রমশক্তির ব্যবহার, আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা— সব মিলিয়ে স্পিনিং শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কয়েক লাখ মানুষ এই খাতের ওপর নির্ভরশীল।


বিজ্ঞাপন


কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অস্থিরতা, ডলার সংকট ও জ্বালানি সঙ্কট— এসব কারণে উৎপাদন ব্যয় বাড়তে বাড়তে শিল্পটি চরম সংকটে পড়ে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ইতোমধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ স্পিনিং কারখানা উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে লক্ষাধিক শ্রমিক-কর্মচারী বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বাকি কারখানাগুলোও ধীরে ধীরে বন্ধ হওয়ার পথে। এ অবস্থায় খাতটিকে টিকিয়ে রাখতে এবং শ্রমিকদের চাকরি রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানানো হয়। 

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গার্মেন্টস খাতে বিদ্যমান ৫ শতাংশ প্রণোদনা হঠাৎ কমিয়ে ১.৫ শতাংশ করায় সুতা শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশীয় সুতা ব্যবহারকারী গার্মেন্টস রফতানিকারকদের জন্য নতুন করে ১০ শতাংশ প্রণোদনা এবং আমদানি করা সুতার ওপর ১০ শতাংশ সেফগার্ড ডিউটি আরোপের দাবি জানানো হয়।

বক্তারা বলেন, পরপর তিন দফায় গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম ৩৫০ শতাংশ বাড়ানো হলেও টেক্সটাইল পণ্যের বিক্রি মূল্য সমন্বয় করা হয়নি। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে স্পিনিংসহ ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পগুলো ক্ষতির মুখে পড়েছে। রফতানিমুখী কারখানাগুলোর জন্য দুই বছরের জন্য গ্যাস–বিদ্যুৎ বিল থেকে ৩০ শতাংশ রিবেট দিতে হবে।

সুতা আমদানির ক্ষেত্রে ডাম্পিংয়ের অভিযোগ তুলে বক্তারা বলেন, অনেক দেশ সরকারিভাবে প্রণোদনা দিয়ে কম দামে সুতা রফতানি করছে। এতে দেশীয় উৎপাদকরা টিকতে পারছেন না। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ম মেনে আমদানি করা সুতার ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক বা সেফগার্ড ডিউটি আরোপের অনুরোধ জানানো হয়।


বিজ্ঞাপন


সংবাদ সম্মেলনে সরকারের কাছে ৩ দফা প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। প্রস্তাবনাগুলো হলো—

১. গার্মেন্টস সেক্টরে ৫% প্রণোদনা বিদ্যমান ছিল কিন্তু বিগত সরকার শেষ সময়ে হঠাৎ করে ৫% থেকে ১.৫% এ নিয়ে আসে। ফলে গার্মেন্টস এর ওপর ব্যাপক প্রভাব পরে এবং সেই সঙ্গে দেশে উৎপাদিত সুতা শিল্প (স্পিনিং সেক্টর) মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই গার্মেন্টস এর এক্সপোর্টের ওপর দেশীয় সুতা ব্যবহারকারীদের জন্য ১০% প্রণোদনা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি এবং সুতা আমদানির ক্ষেত্রে ১০% সেইফ গার্ড ডিউটি প্রয়োগ করতে হবে।

২. বিগত সরকার কর্তৃক পর পর ৩ ধাপে ৩৫০% গ্যাস এবং বিদ্যুৎ বিল বৃদ্ধি করে; ফলে টেক্সটাইল সেক্টরের পণ্য উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায় তবে উক্ত টেক্সটাইল সেক্টরের উৎপাদিত পণ্যের বিক্রয় মূল্য কোনোভাবেই সমন্বয় করা হয় নাই। এতে করে স্পিনিং সেক্টরসহ সকল ব্যাকওয়ার্ড শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই রফতানিকৃত পণ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল থেকে ৩০% রিবেট দিয়ে আপদকালীন সময় (দুই বছরের জন্য) প্রণোদনা দিতে হবে। প্রতিযোগী দেশগুলো এই ধরনের সুযোগ দিয়ে আসছে।

৩. সুতা আমদানির ক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন সময় দেখেছি যে, সুতা রফতানিকৃত দেশসমূহের সরকারের প্রণোদনার কারণে আমাদের দেশের উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে তারা সুতা রফতানি করছে। এক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দিষ্ট মনিটরিংয়ের মাধ্যমে অ্যান্টি ড্যাম্পিং ট্যাক্স/সেইফ গার্ড ডিউটি প্রয়োগ করতে জোর দাবি জানাচ্ছি। যেমন আমাদের দেশের পাট পণ্যের ওপর অন্য দেশ কর্তৃক প্রয়োগ করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন— সালসা গ্রুপের সিওও প্রকৌশলী আজহার আলী, যমুনা গ্রুপের পরিচালক প্রকৌশলী এ বি এম সিরাজুল ইসলাম, মোশাররফ কম্পোজিটের পরিচালক (অপারেশন) প্রকৌশলী শাহিনুল হক, আহমেদ গ্রুপের উপদেষ্টা প্রকৌশলী শান্তিময় দত্ত, আরমাডা গ্রুপের পরিচালক প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ, স্লিনটেক্স স্পিনিংয়ের নির্বাহী পরিচালক মো. রুহুল আমিন প্রমুখ।

এএইচ/এফএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর