সোমবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

এক বছরে ১১ হাজার নতুন কোটিপতি!

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
প্রকাশিত: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:১৯ এএম

শেয়ার করুন:

এক বছরে ১১ হাজার নতুন কোটিপতি!

# কোটি টাকার হিসাব সংখ্যা এখন ১ লাখ ২৮ হাজার

# প্রান্তিকে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ


বিজ্ঞাপন


# শহরে ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়লেও, গ্রামে কমছে।

# অর্থপাচার কমায় ব্যাংকে আমানত ফিরছে: বিশেষজ্ঞ

দেশের ব্যাংকগুলোতে কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অর্থনৈতিক সংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও মূল্যস্ফীতির চাপের মধ্যেও বড় অঙ্কের আমানত বাড়ছে। গত এক বছরে কোটিপতি বেড়েছে প্রায় ১১ হাজার। ব্যাংক খাতে সার্বিক ঋণ ও আমানতের প্রবৃদ্ধি সামান্য হলেও, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে তা সবচেয়ে কম রেকর্ড করা হয়েছে। একই সময়ে গ্রাহকদের চলতি হিসাবের আমানতও কমেছে। অর্থনীতিতে মন্দা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের মন্থর গতি এই নেতিবাচক প্রবণতার মূল কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে ব্যাংক খাতে কোটিপতি আমানতকারীর হিসাব ছিল ১ লাখ ১৭ হাজার ১২৭টি। গত সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৭০টি। এই এক বছরে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়েছে ১০ হাজার ৯৪৩টি। বৃদ্ধির হার ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ।


বিজ্ঞাপন


আলোচ্য সময়ে সব উপখাতেই আমানতকারীর হিসাব-সংখ্যা বেড়েছে। তবে শুধু কমেছে ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকার আমানতকারীর হিসাব। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এ ক্যাটাগরিতে হিসাব-সংখ্যা ছিল ৯৬৮টি। সেপ্টেম্বরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮৯৪টিতে।

জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ের বৃদ্ধির ফলে মানুষের সঞ্চয় প্রবণতা বেড়েছে। তবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গুণগত মান বৃদ্ধি না পাওয়ায় সমাজের একটি শ্রেণির কাছেই বেশি অর্থ-সম্পদ কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ছে। এ শ্রেণির বেশিরভাগেরই নাম রয়েছে কোটিপতির তালিকায়। তবে দেশে কোটিপতির প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি বলে ধারণা করা হয়। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে কেবল কোটি টাকার বেশি জমা থাকা হিসাবই অন্তর্ভুক্ত। এর বাইরেও অনেকেই আছেন, যাদের কোটি কোটি টাকার সম্পদ আছে।

এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন প্রান্তিকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, জুলাই-সেপ্টেম্বরে ব্যাংক খাতে আমানত ও ঋণের প্রবাহে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি হয়েছে। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয় ২ দশমিক ১১ শতাংশ এবং এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে তা কিছুটা বেড়ে ৩ দশমিক ৮০ শতাংশে দাঁড়ায়। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে তা আবার কমে ১ দশমিক ৭৩ শতাংশে দাঁড়ায়।

bangladesh_bank_

তিন প্রান্তিকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত প্রান্তিকেই আমানত প্রবাহ বেড়েছে সবচেয়ে কম। একই সময়ে শহর ও গ্রামেও সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি হয়েছে। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংক খাতে গ্রাহকদের চলতি হিসাবে আমানত প্রবাহ কমে গেছে প্রায় ৫ শতাংশ। মূলত ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দার কারণেই এ খাতে ঋণপ্রবাহ কমেছে।

তবে ব্যাংকগুলোয় মেয়াদি আমানত আলোচ্য সময়ে বেড়েছে সাড়ে ৫ শতাংশ। মেয়াদি আমানতের হার বাড়ায় সার্বিকভাবে ব্যাংকগুলোর তারল্য পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গ্রামে আমানত প্রবাহ কমায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে মন্দা আরো প্রকট হচ্ছে। এতে গ্রামীণ উৎপাদন খাতের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

প্রতিবেদনের তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে আমানতের প্রবাহ বেড়েছিল ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে তা আরও কমে ১ দশমিক ২৬ শতাংশে নেমে যায়। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ঋণপ্রবাহ আরও কমে দাঁড়ায় দশমিক ৪৪ শতাংশে। চলতি বছরের মধ্যে গত প্রান্তিকেই ঋণের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে কম হয়েছে।

অন্যদিকে, শহরে ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়লেও গ্রামে তিন প্রান্তিক ধরে ঋণের প্রবৃদ্ধির হার কমছে। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে গ্রামে ঋণপ্রবাহ কমেছিল দশমিক ৩৪ শতাংশ, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে কমেছে ৪ দশমিক ৩৫ এবং জুলাই-সেপ্টেম্বরে কমেছে দশমিক ৬২ শতাংশ।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এখন দুর্নীতিবাজ ও ব্যাংক লুটেরা গোষ্ঠী অর্থপাচার করতে পারছে না। যে কারণে বিভিন্ন উপায়ে তারা ব্যাংকে টাকা জমা করছে। পাশাপাশি ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেওয়ার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছিল। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বেশ কিছু ব্যাংকের প্রকৃত অবস্থার চিত্রও প্রকাশ পায়। তাতে অনেক গ্রাহক আতঙ্কিত হয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেন। এখন আবার পরিস্থিতি বুঝে ব্যাংকের অর্থ জমা করছে, ফলে সার্বিকভাবে আমানত বেড়েছে।’

টিএই/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর