সমন্বিত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা (আইইপিএমপি) দ্রুত সংশোধন করে তাতে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের অংশ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
আজ শনিবার (৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর বাংলাদেশ মিলিটারি মিউজিয়ামে তিন দিনব্যাপী তৃতীয় বাংলাদেশ জ্বালানি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এ আহ্বান জানান।
বিজ্ঞাপন
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য নবায়নযোগ্য খাতে বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ জরুরি।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘জ্বালানি রূপান্তর সময়সাপেক্ষ কাজ। বড় লক্ষ্য ঘোষণা করে অর্জন না হওয়া থেকে বরং বাস্তবভিত্তিক নীতিমালা প্রণয়নই বেশি জরুরি। আমরা সরকারি ভবনের ছাদে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি, যা দ্রুত এগিয়ে চলছে।’
উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বিডব্লিউজিইডি’র আহ্বায়ক অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রতিশ্রুতিতে জ্বালানি রূপান্তরকে অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে।’
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘কার্যকর জ্বালানি রূপান্তরের জন্য প্রযুক্তিগত জ্ঞান, সঠিক নীতি এবং দক্ষ জনবল— এই তিনটির সমন্বয় অপরিহার্য। বিদেশি পরামর্শক নির্ভরতা কমিয়ে নীতি বাস্তবায়নে দেশীয় সক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে।’
বিজ্ঞাপন
নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে নীতিগত প্রতিবন্ধকতার প্রসঙ্গ তুলে সেন্টার ফর রিনিউয়েবল এনার্জি সার্ভিসেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘প্রতি বছর বিদ্যুৎ খাতে ৪ বিলিয়ন ডলার সাবসিডি দিতে হচ্ছে। এর অর্ধেক নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য ব্যয় করলে খাতের চিত্র পাল্টে যেত। কিন্তু নীতিমালা নবায়নযোগ্যবান্ধব নয় বলেই অগ্রগতি ধীর।’ আইইপিএমপিতে দেশীয় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শকে অগ্রাধিকার দেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘জ্বালানি খাতে অতীতে নীতিগত অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। বিদেশি পরামর্শকদের মহাপরিকল্পনা কখনোই নবায়নযোগ্য শক্তিকে অগ্রাধিকার দেয় না। তাই পরিকল্পনায় দেশীয় বিশেষজ্ঞদের বেশি যুক্ত করতে হবে।’
জ্বালানি রূপান্তরে আইনগত স্বচ্ছতার গুরুত্ব তুলে ধরে লিড বাংলাদেশের গবেষণা পরিচালক অ্যাডভোকেট শিমনুজ্জামান বলেন, ‘জ্বালানি রূপান্তর শুধু প্রযুক্তি নির্ভর নয়; জনগণের অংশগ্রহণ, প্রান্তিক মানুষের সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করাও জরুরি।’
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের বনশ্রী মিত্র নিয়োগী বলেন, ‘ন্যায়সঙ্গত জ্বালানি রূপান্তরের কেন্দ্রে রাখতে হবে প্রান্তিক মানুষের কণ্ঠকে এবং নারীদের জন্য আলাদা বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।’
বাংলাদেশ জ্বালানি সম্মেলন শুরু হয় ২০২৩ সালে। প্রথম সম্মেলনে ২৮৩ জন এবং দ্বিতীয় সম্মেলনে চার শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন। গত এক বছরে জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন না দেওয়া, নবায়নযোগ্য খাতে কর অবকাশ, ৫,২৩৮ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুতের দরপত্র আহ্বান এবং ছাদভিত্তিক ৩,০০০ মেগাওয়াট প্রকল্প গ্রহণ— এগুলোকে অগ্রগতি হিসেবে উল্লেখ করেন বক্তারা।
তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২,২২০ মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর অনুমোদনে অলস সম্পদের বোঝা আরও বেড়েছে এবং ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ সরকারকে ৩২,৫০০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। এদিকে এলএনজি আমদানি ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৪০,৭৫৯ কোটি টাকা, যা অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করেছে।
বাংলাদেশের ১৬টি সহযোগী সংগঠন নিয়ে আয়োজিত এই তৃতীয় জ্বালানি সম্মেলনকে জ্বালানি নীতি, নবায়নযোগ্য খাতে বিনিয়োগ, প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি ও সংলাপের ক্ষেত্র হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
এমআর/এফএ

