শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

শীতের রঙিন সবজিতে ভরপুর কাঁচাবাজার, সরবরাহ বাড়ায় স্বস্তি 

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৪৮ এএম

শেয়ার করুন:

শীতের রঙিন সবজিতে ভরপুর কাঁচাবাজার, সরবরাহ বাড়ায় স্বস্তি 

শীতের আগমনী আমেজ শুরু হতেই দেশের কাঁচাবাজারগুলোতে জমে উঠেছে আগাম শীতকালীন সবজির রঙিন মেলা। রাজধানী থেকে শুরু করে বিভিন্ন জেলা শহরের বাজারে প্রতিদিনই বাড়ছে সরবরাহ। ফলে অনেক সবজির দাম আগের তুলনায় কমে এসেছে, যা সাধারণ ক্রেতাদের স্বস্তি এনে দিয়েছে। বাজারের ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের ভাষ্য—যদি এই সরবরাহ অব্যাহত থাকে, তাহলে শীতের পুরো মৌসুমেই সবজির দাম থাকবে সহনীয় পর্যায়ে। 

শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে শীতকালীন রঙ্গিন সবজির সমারোহ দেখা গেছে। 


বিজ্ঞাপন


সবজির সরবরাহ বেড়েছে, দাম কমছে: 
বাজার ঘুরে দেখা গেছে—গত সপ্তাহের তুলনায় বিভিন্ন সবজির দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত কমে এসেছে। বর্তমানে বিভিন্ন বাজারে সবজির দাম: সিম ১৪০–১৫০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, ফুলকপি ৫০- ৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০- ৫০ টাকা, করলা: ৮০ টাকা, পটল: ৬০ টাকা, কুমড়া: ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা: ৫০ টাকা, শসা: ৮০ টাকা, লাউ: ৭০–৮০ টাকা (প্রতি পিস) দরে বিক্রি হচ্ছে। 

ব্যবসায়ীরা জানান, গ্রামের হাটগুলোতে সবজির উত্তোলন বেড়েছে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় আগাম সিজনের সবজি আবাদ হয়, সেসব স্থান থেকে প্রচুর পরিমাণে সবজি ঢুকছে ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরের বাজারে। উৎপাদন ভালো হওয়ায় চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি—এটাই মূলত দামের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

একজন পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, “নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই নিয়মিত সবজি আসতে শুরু করেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো। তাই দামটা কমছে।”


বিজ্ঞাপন


পেঁয়াজ–আলুর বাজার স্থিতিশীল নয়: 
যদিও সবজির বাজারে স্বস্তি ফিরেছে, তবুও দুইটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ক্রেতাদের কপালে ভাঁজ ফেলছে—পেঁয়াজ ও আলু। বর্তমানে বাজারে পেজে একজনে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে। গত সপ্তাহ থেকে প্রতি কে পেঁয়াজ ১১০–১২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। 
এদিকে আলুর দামও উর্ধ্বমুখী। দীর্ঘদিন ধরে কম দামে আলু বিক্রি কর হঠাৎ করে কিছুটা বেড়ে গেছে আলুর দম। সপ্তাহের ব্যবধানে ১৬ টাকার আলু ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও ২৫ টাকায় পর্যন্ত উঠেছি। 

ব্যবসায়ীরা জানান, পেঁয়াজের দাম বাড়তির মূল কারণ আমদানি বন্ধ, মজুত সংকট এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়া। অন্যদিকে আলুর বাজারে বেশ অস্থিরতা রয়েছে—কোথাও দাম কম, কোথাও বেশি। 

সবজি রনমত ঢাকা মেইলকে বলেন, “পেঁয়াজের বাজারটা এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আমদানির ওপর নির্ভরতা বেশি, তাই একটু ওঠানামা হলেই দাম বেড়ে যায়।”

বাজারে আসা ক্রেতাদের অনেকে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন সবজির দাম কমায়। তাদের ভাষ্য—নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে বাড়তে যখন পরিবার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে, তখন অন্তত সবজির দাম কমায় মাসিক ব্যয় কিছুটা সামাল দেওয়া যাচ্ছে।

যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা রহিমা বেগম বলেন, গত মাসে সিম ছিল ২০০ টাকার ওপরে, ফুলকপি ৮০- ১০০ টাকা। এখন দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে অন্তত প্রতিদিন ৫০–৬০ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।

picture

বেসরকারি চাকরিজীবী আলমগীর হোসেন বলেন, সবজির বাজার ঠিক থাকলে পরিবারের নিত্যখরচ কমে যায়। এখন শুধু পেঁয়াজ আর আলুর দামটা কমলেই পুরো বাজারটাই স্বস্তির হবে।
এদিকে কৃষকরাও ভালো ফলনে খুশি। অনেক কৃষক জানিয়েছেন, আগাম শীতকালীন সবজির দাম যদিও খুব বেশি নয়, তবে লাভ হচ্ছে মোটামুটি ভালো। সেচ, সার ও পরিবহন ব্যয় কিছুটা বাড়লেও উৎপাদন বেশি হওয়ায় তা পূরণ হয়ে যাচ্ছে।

কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন—দেশে সবজির উৎপাদন প্রতি বছরই বাড়ছে, তবে বাজার ব্যবস্থাপনা এবং সরবরাহ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে পারলে আরও স্থিতিশীল দাম নিশ্চিত করা সম্ভব। বিশেষ করে পেঁয়াজ–আলুর মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন।

একজন কৃষি অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘সবজির মৌসুমে আমরা লাভবান হই, কিন্তু নিত্যপণ্যের বাজার নীতিগত সমস্যার কারণে অস্থির থাকে। উৎপাদন ও সংরক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়ন ছাড়া দামের স্থিরতা থাকবে না।’

আগাম শীতের সবজিতে বাজার এখন রঙিন ও প্রাণবন্ত। অধিকাংশ সবজির দাম কম থাকায় ভোক্তারা স্বস্তি ফিরিয়ে পেয়েছেন। তবে পেঁয়াজ–আলুর অস্থিরতা বাজারে চাপ সৃষ্টি করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি আগামী সপ্তাহগুলোতেও আবহাওয়া অনুকূলে থাকে এবং সরবরাহ বাড়তে থাকে, তাহলে শীতজুড়ে সবজির বাজারে স্বস্তি বজায় থাকবে।

এমআর/এআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর