পুষ্টিগুণে ভরা দেশি ফল, দামেও সস্তা
দেশি ফলে নেই ফরমালিন, বিদেশিতে শঙ্কা
দেশি ফলকে ‘সুপার ফুড’ বলছেন পুষ্টিবিদরা
দাম চড়া, অনীহা বাড়ছে বিদেশি ফলে
দেশের বাজারে এখন দেশীয় ফলের সমারোহ। পেঁপে, কলা, পেয়ারা, আনারস, জাম্বুরা, সবুজ মাল্টা, আমড়া, কদবেল, তাল, কামরাঙা, চালতা, বিলেতি গাবসহ রয়েছে নানা মৌসুমি ফল। রাজধানীর ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত এলাকায়ও এসব ফলের সমাহার। দামের দিক থেকেও দেশীয় ফল ক্রেতাদের স্বস্তি দিচ্ছে। কম টাকায় পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে পারছেন তারা। অন্যদিকে বিদেশি ফলের দাম তুলনামূলক অনেক বেশি হওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এতে দেশীয় ফলের চাহিদা বাড়ছে। এছাড়া দেশীয় ফল সংরক্ষণে ফরমালিন ব্যবহারের প্রবণতা কম। আর আমদানি করা বিদেশি ফলে ফরমালিন ব্যবহারের প্রবণতা বেশি, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
বিজ্ঞাপন
দেশি ফলে সয়লাব
রাজধানীর কাঁচাবাজার, ফলের দোকান ও ফুটপাত ঘুরে দেখা যায়— সর্বত্র দেশীয় ফলের রঙিন সমারোহ। তাল, জাম্বুরা, পেয়ারা ও আনারসে ঠাসা বাজার। মৌসুমি ফলের প্রাচুর্যের কারণে দামে অনেকটাই স্বস্তি মিলছে। যেমন- তাল প্রতি পিস আকারভেদে ৪০ থেকে ১০০ টাকা, আনারসের দাম প্রতি পিস ৩০-৬০ টাকা আর পেয়ারা কেজিপ্রতি ৬০-৭০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া আমড়া ৪০ টাকা থেকে ৬০ টাকা, পেঁপে ৮০ টাকা থেকে ১২০ টাকা, কামরাঙা ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জাম্বুরা প্রতি পিস ৫০ থেকে ১০০ টাকা, বিলেতি গাব প্রতি পিস ১০ থেকে ১৫ টাকা, চালতা ২০ থেকে ৩০ টাকা পিস বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।
শুধু রাজধানী নয়, জেলা-উপজেলা পর্যায়ের বাজারেও একই চিত্র। স্থানীয় কৃষকরা সরাসরি ফল নিয়ে আসছেন বাজারে। পাইকারি ও খুচরা বাজারে দেশি ফলের জোগান এত বেশি যে, দামও স্বাভাবিকভাবে ক্রেতা-সাশ্রয়ী পর্যায়ে রয়েছে।
বিদেশি ফলের চাহিদা কম
অন্যদিকে আপেল, কমলা, মাল্টা, আঙুর, ড্রাগনসহ বিদেশি ফলের বাজারে ক্রেতার চাপ তুলনামূলকভাবে কম। বিক্রেতারা বলছেন, বিদেশি ফলে আমদানিনির্ভরতা ও শুল্ক-খরচের কারণে দাম বেশি। এ কারণে মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো বিদেশি ফল কেনার দিকে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
মিরপুর-১ এলাকার ফল বিক্রেতা জামান মিয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আগে প্রতিদিন অন্তত ২০-৩০ কেজি আপেল বিক্রি হতো, এখন ১০ কেজিও বিক্রি হয় না। লোকজন দেশি ফলের দিকে বেশি ঝুঁকছে। কারণ দাম কম, স্বাদও ভালো।’
ক্রেতার মুখে দেশি ফলের জয়গান
ফল কিনতে আসা ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশি ফলের প্রতি তাদের আগ্রহ বেড়েছে শুধু দামের কারণে নয়, বরং স্বাস্থ্য ও সতেজতার দিক থেকেও।
গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক নাহিদা সুলতানা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাদের দেশি ফলে ভিটামিন, মিনারেলস ও ফাইবারের পরিমাণ অনেক বেশি। বিদেশি ফলে অনেক সময় অতিরিক্ত কেমিক্যাল বা সংরক্ষণকারী পদার্থ ব্যবহার করা হয়। তাই রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে দেশি ফল অনেক বেশি কার্যকর।’
একই কথা বললেন রামপুরার বাসিন্দা গৃহিণী কারিমা বেগম। তিনি বলেন, ‘আগে বাচ্চাদের আপেল-আঙুর কিনতাম। এখন দেখি দেশি ফলও অনেক সুস্বাদু, দামও সাশ্রয়ী। প্রতিদিনই আমরা পেয়ারা, আনারস, কলা কিনছি।’
অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশি ফলের প্রতি ক্রেতাদের ঝোঁক বাড়ায় স্থানীয় কৃষি অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে। এতে যেমন কৃষকের আয় বাড়ছে, তেমনি বৈদেশিক মুদ্রার অপচয়ও কমছে। কারণ বিদেশি ফল আমদানি কমলে বৈদেশিক মুদ্রার চাপও কমবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশি ফলের ভোক্তা বাড়লে দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি চাঙা হবে। কৃষক লাভবান হলে গ্রামীণ অর্থনীতি সচল হবে। একইসঙ্গে আমদানিনির্ভরতা কমবে, যা সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা দেশি ফলকে ‘সুপার ফুড’ হিসেবে দেখছেন। মৌসুমি ফল খেলে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, হজমশক্তি ভালো থাকে এবং নানা ধরনের দীর্ঘমেয়াদি রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও গর্ভবতী নারীদের জন্য দেশি ফল অত্যন্ত উপকারী।
পুষ্টিবিদ শারমিন আরা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমরা সাশ্রয়ী দামে ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা মেটাতে চাইলে দেশি ফলকেই বেছে নিতে হবে। বিদেশি ফলে স্বাস্থ্যগত কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে শিশু ও গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে বিদেশি ফল খেতে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।’
এমআর/জেবি

