রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

‘অস্ত্রের মুখে ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় এস. আলম গ্রুপ’

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:১৬ পিএম

শেয়ার করুন:

‘অস্ত্রের মুখে ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় এস. আলম গ্রুপ’

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে কতিপয় রুগ্ন ইসলামী ব্যাংকের সাথে একীভূত করার প্রচেষ্টার তীব্র বিরোধিতা করেছে উদ্যোক্তা ও শেয়ারহোল্ডাররা। তাদের অভিযোগ, ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর তৎকালীন সরকার ও গোয়েন্দা বাহিনীর সহায়তায় অস্ত্রের মুখে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নেয় এস. আলম গ্রুপ। এরপর থেকেই ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে গ্রাহকের আস্থা কমে যায়।

তাদের দাবি, প্রকৃত উদ্যোক্তা ও শেয়ারহোল্ডারদের হাতে পরিচালনার দায়িত্ব ফিরিয়ে দিলে গ্রাহকের আস্থা ফিরে আসবে এবং অল্প সময়েই ব্যাংকটি পুনরায় লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপ নিতে সক্ষম হবে।


বিজ্ঞাপন


সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব অভিযোগ তুলে ধরেন।

বক্তারা বলেন, দেশের দ্বিতীয় প্রজন্মের শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংক হিসেবে ১৯৯৫ সালে কার্যক্রম শুরু করা সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক শুরু থেকেই লাভজনক অবস্থানে ছিল। যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের মধ্যে ছিলেন অর্থনীতিবিদ ড. এম এ মান্নান, মেজর (অব.) ডা. রেজাউল হক, আলহাজ সুলতান মাহমুদ চৌধুরীসহ দেশি-বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

বক্তারা জানান, ২০০০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর থেকে ব্যাংকটি ধারাবাহিকভাবে লভ্যাংশ প্রদান করে আসছিল। ২০০৭ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের দেওয়া হয়। ব্যাংকের উন্নতির ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ব্যাংক মক্কায় শাখা খোলার অনুমতিও দিয়েছিল।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাসীন সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক এস. আলম কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করে। কিন্তু উদ্যোক্তা ও শেয়ারহোল্ডারদের বাদ দিয়ে অনভিজ্ঞ স্বতন্ত্র পরিচালক দিয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করায় গ্রাহকদের আস্থাহীনতা তৈরি হয়। এর ফলে ডিপোজিট কমে যায় এবং আর্থিক সংকট আরও ঘনীভূত হয়।


বিজ্ঞাপন


তারা অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনায় না গিয়ে ব্যাংকটিকে এস. আলম গ্রুপের লুটপাট করা কিছু রুগ্ন ইসলামী ব্যাংকের সাথে একীভূত করার উদ্যোগ নিচ্ছে। যা গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হবে।

উদ্যোক্তা ও শেয়ারহোল্ডারদের দাবি, ব্যাংক পরিচালনার দায়িত্ব যদি প্রকৃত উদ্যোক্তা ও শেয়ারহোল্ডারদের হাতে ন্যস্ত করা হয়, তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে এনে আর্থিক দুরাবস্থা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। তারা আশ্বাস দেন, প্রকৃত উদ্যোক্তাদের নিয়ন্ত্রণে ব্যাংক এলে মাইক্রো-ফাইন্যান্স, মাইক্রো-এন্টারপ্রাইজ ও এসএমই খাতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।

বক্তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশে শরিয়াহ ভিত্তিক এই ব্যাংককে রক্ষায় সহানুভূতিশীল হতে হবে। দেশি-বিদেশি অনেক বড় বিনিয়োগকারী ব্যাংকটিতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাই অনভিজ্ঞ পর্ষদ বাতিল করে উদ্যোক্তা ও শেয়ারহোল্ডারদের হাতে ব্যাংক পরিচালনার দায়িত্ব ফিরিয়ে দিতে হবে।

তারা বলেন, যুক্তিসঙ্গত ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হবে ব্যাংককে প্রকৃত উদ্যোক্তাদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া। প্রয়োজনে নতুন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের যুক্ত করে ব্যাংককে পুনরায় লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা সম্ভব।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মেজর ড. রেজাউল হক, সুলতান মাহমুদ, শেয়ারহোল্ডার জাবেদুল আলম চৌধুরী, আবদুর রহমান, ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমুখ।

এএইচ/এফএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর