দেশে সদ্য সমাপ্ত হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রেকর্ড ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্সের মাইলফলক অর্জন করেছে। গত বছরের জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছিল প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তবে জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে ড. ইউনূস দেশ গঠনের দায়িত্ব নেন। আর এরপর পরই বাড়তে থাকে রেমিট্যান্সের গতিপ্রবাহ। একের পর এক রেকর্ড গড়ে রেমিট্যান্স। প্রতি মাসেই প্রবাসী আয়ের ধারাবাহিকতা লক্ষ করা গেছে। আর এর মধ্যে দিয়ে রেমিট্যান্স প্রবাহের নতুন রেকর্ড গড়লো ২০২৪-২৫ অর্থবছর।
অর্থবছরের পুরো সময়ে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এসেছে। দেশীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে) তিন লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর আগে কোনো অর্থবছরে এত পরিমাণ রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় দেশে আসেনি।
বিজ্ঞাপন
এর আগে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩.৯১ বিলিয়ন ডলার। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৬.৪২ বিলিয়ন ডলার। এর আগে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে এসেছিল ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে এসেছিল ২১ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলার। তবে রেমিট্যান্স বেড়েছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে যা এত দিনে দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেকর্ড রেমিট্যান্স। করোনাকালীন ২০২০-২১ অর্থবছরের ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, করোনাকালীন সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন কোম্পানিগুলো বন্ধ হয়ে যায়। পণ্য উৎপাদন কমে যাওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠান আবার কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়। এই কারণে করোনা মহামারীর সময়ে প্রবাসীরা চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে আসেন। এর সাথে তাদের নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে ইন্সুরেন্সসহ সকল পাওনা নিয়ে দেশে ফেরেন প্রবাসীরা। এতে ওই অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে দেশে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, এর আগে করোনার সময়ে ২০২০-২১ অর্থবছরের রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। সেই রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থবছর। বর্তমানে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন প্রবাসীরা। এর কারণ রেমিট্যান্সের ডলারে দর বেড়েছে, খোলা বাজারের সাথে ডলারের দরের ব্যবধান কমেছে। তাছাড়া হুন্ডির দৌরাত্ম্যও কমেছে। এসব কারণে বৈধ পথে রেমিট্যান্স বাড়ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই থেকে চলতি মাস জুন পর্যন্ত মোট ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। যা গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।
বিজ্ঞাপন
এর আগে অর্থবছর হিসাবে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্সে এসেছিল গত ২০২০-২১ অর্থবছরে। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস চলাকালে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসার রেকর্ড ছিল দুই হাজার ৪৭৮ কোটি বা ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে এসেছে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ মার্কিন ডলার, অক্টোবরে এসেছে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, নভেম্বর মাসে এসেছে ২২০ কোটি মার্কিন ডলার, ডিসেম্বরে এসেছে ২৬৪ কোটি মার্কিন ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি মার্কিন ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি মার্কিন ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি মার্কিন ডলার, এপ্রিলে আসে ২৭৫ কোটি মার্কিন ডলার, মে মাসে এসেছে ২৯৭ কোটি মার্কিন ডলার এবং সবশেষ জুনে এসেছে ২৮২ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স।
টিএই/এফএ