দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে পর্যাপ্ত সুবিধা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ আমলে করা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিতর্কিত ৩৭টি চুক্তি ঢালাওভাবে বাতিল না করে পর্যালোচনায় বিশেষ কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
আজ সোমবার (৩০ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে চীনা বিনিয়োগের চ্যালেঞ্জ নিয়ে করণীয় বিষয়ক সেমিনারে সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এই সুপারিশ করেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে কার্যকর সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করা এবং বিনিয়োগ সুরক্ষা না থাকায় বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল বার্তা যাচ্ছে। অনেকে জমিতে বিনিয়োগ করেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কেউ চাইলেও তার বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত নিতে পারছে না। বিনিয়োগ বাড়াতে প্রণোদনার চেয়ে পদে পদে বাধা দূর করা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিতের ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এসব সমস্যার সমাধানে বিডাকে এগিয়ে আসতে হবে। বিনিয়োগের সব সুবিধা নিশ্চিতে বিডা সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করতে পারে। এতে করে সময় বাঁচার সঙ্গে সঙ্গে টাকাও বাঁচবে। একাধিক লাইসেন্স জটিলতা নিরসনে সরকারকে কাজ করতে হবে।
প্রতিষ্ঠানটি বলছে, নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ ব্যবসা শুরু করার জন্য একটি একক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম নেই। বিনিয়োগকারীদের একাধিক ওয়েবসাইটে যেতে হয়, অনেক সরকারি অফিসে সশরীরে উপস্থিত থাকতে বাধ্য হতে হয়। এটি বিনিয়োগকারীদের মাঝে হতাশার সৃষ্টি করে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষক আবরার আহমেদ। তিনি নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের দীর্ঘসূত্রিতা, জমির অভাব, অস্বচ্ছতাসহ নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনে এই খাতে চীনের বিনিয়োগের সমস্যার কথা তুলে ধরে দেশটির জন্য ওয়ান-স্টপ সার্ভিস চালু এবং বিনিয়োগের প্রক্রিয়া সহজ করার আহ্বান জানানো হয়।
গবেষক আবরার আহমেদ বলেন, বিপিডিবি উন্মুক্ত দরপত্র এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। তবে বেশ কয়েকটি কার্যক্রম এবং কাঠামোগত সমস্যা এখনও রয়ে গেছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে বিনিয়োগ প্রক্রিয়া আংশিক কাগজ নির্ভর। বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন অফিসে উপস্থিত হয়ে কাগজপত্র জমা দিতে হয়। এটি প্রশাসনিক বিলম্ব এবং ত্রুটির ঝুঁকি বাড়ায়। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা স্থানীয় অফিসে সমস্যার মুখে পড়েন। এছাড়া এই ধরনের বিনিয়োগে দীর্ঘকালীন এবং বহুস্তরের অনুমোদন প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হয়।
তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তিগত মূল্যায়নের পরে, প্রস্তাবগুলোকে বিপিডিবি, মন্ত্রণালয়, সরকারি কেনাকাটা সম্পর্কিত মন্ত্রিপরিষদ কমিটির মাধ্যমে এগোতে হয়। এই বাড়তি ছাড়পত্রের সময়সীমা প্রধান বিনিয়োগকারীদের অনুৎসাহিত করে। যেখানে ভারতে এসব বাস্তবায়নে ৩-৪ মাস সময় লাগে, বাংলাদেশে এক বছরের বেশি সময় লেগে যায়। এর ফলে আর্থিক ঝুঁকির সৃষ্টি হয়। নানান ধরনের নথি, একাধিক লাইসেন্স সার্টিফিকেট, তথ্যপ্রাপ্তিতে বাধা নবায়নযোগ্য বিনিয়োগের বড় চ্যালেঞ্জ।
মূল প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদেশি বিনিয়োগের ৫০ শতাংশই চীনের। অন্তর্বর্তী সরকার ৩১টি নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাতিল করেছে। যার মধ্যে ১৫টি কোম্পানি জমি কিনেছে, সরকারকে কর দিয়েছে। তারা অনেক বিনিয়োগ করেছে। যদিও সরকার বাতিল করা প্রকল্পগুলো পর্যালোচনার জন্য এবং কোনো অসঙ্গতি বা দুর্নীতি খুঁজে বের করার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে, তবে কমিটির কর্তৃত্ব এখনও প্রশ্নের মুখে।
প্রতিবেদনে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ সহজ করতে ডিজিটালাইজেশন, নীতি প্রক্রিয়া বারবার পরিবর্তন না করা, আইনগত স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, বিনিয়োগকারীদের গাইড করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
এমআর/এফএ

