সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

এনবিআরের কমপ্লিট শাটডাউনসহ সব কর্মসূচি প্রত্যাহার

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৯ জুন ২০২৫, ০৯:৩৭ পিএম

শেয়ার করুন:

এনবিআর বিলুপ্ত হওয়া নিয়ে যা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়

উপদেষ্টা কমিটি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় সমস্যা সমাধানের আশ্বাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘শাটডাউনসহ সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।

রোববার (২৯ জুন) রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাসান মাহমুদ তারেক।


বিজ্ঞাপন


কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে দ্বিতীয় দিনের মতো আজ রোববারও চলছে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ও ‘মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি’।

রাজস্ব বোর্ডের সংস্কার রোধ ও চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে  আন্দোলনকারীরা আগারগাঁওয়ের প্রধান কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান নেন তারা। এতে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে রাজস্ব আহরণ কার্যক্রম।

এর আগে, রোববার পৌনে ছয়টার দিকে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এনবিআরের অচলায়তন নিরসনে শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। সন্ধ্যা ৭টার দিকে বৈঠক শেষে তিনি জানান, এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবির প্রেক্ষিতে পাঁচ সদস্যের সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এরও আগে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সব শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সেবা ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে সংস্থাটির আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে ফেরার আহ্বান জানিয়ে সরকার বলেছে, কাজে যোগ না দিলে দেশের জনগণ ও অর্থনীতির সুরক্ষায় সরকার কঠোর হবে। আজ এক বিবৃতিতে এমনটা জানিয়েছে সরকার।


বিজ্ঞাপন


এদিকে, এনবিআর ৬ শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম।

দুদকের এই কর্মকর্তা জানান, এনবিআরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের ঘুষ গ্রহণের বিনিময়ে করদাতাদের কর ফাঁকির সুযোগ করে দিচ্ছেন। করদাতাদের সঙ্গে যোগসাজশে তারা নির্ধারিত কর আদায় না করে করের পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছেন। এতে উভয়পক্ষই লাভবান হলেও সরকার প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, অনেক ক্ষেত্রে কর কর্মকর্তারা ঘুষ না পেয়ে মিথ্যা কর ফাঁকির মামলা দায়ের করে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করছেন। আবার করদাতারা নির্ধারিত সময়ের আগেই কর পরিশোধ করলেও কিংবা অতিরিক্ত কর দিয়ে থাকলেও সেই টাকার ফেরতের ক্ষেত্রে চরম অনিয়ম দেখা যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, অতিরিক্ত কর ফেরত পেতে হলে করদাতাকে তার টাকার অর্ধেক পরিমাণ ঘুষ বা উপহারের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এই সুযোগে মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করছেন।

মো. আকতারুল ইসলাম আরও বলেন, এই অনিয়ম ও দুর্নীতির চর্চা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিগত ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে বিভিন্ন স্টেশনে চাকরিরত অবস্থায় কিছু কর্মকর্তা নানা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর ফাঁকির সুযোগ করে দিয়েছেন এবং নিজেরাও অবৈধভাবে লাভবান হয়েছেন। ফলে রাষ্ট্রের রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি তারা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে তারা হলেন— এনবিআরের আয়কর নীতি বিভাগের সদস্য এ কে এম বদিউল আলম, ঢাকা কর অঞ্চল-৮-এর অতিরিক্ত কর কমিশনার মির্জা আশিক রানা, বিসিএস কর একাডেমির যুগ্ম কর কমিশনার মোহাম্মদ মোরশেদ উদ্দীন খান, ঢাকা কর অঞ্চল-১৬-এর উপ-কর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা, নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর ও মূল্য সংযোজন কর বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হাছান তারেক রিকাবদার এবং কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার সাধন কুমার কুন্ডু।

দুদক জানিয়েছে, এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ, ক্ষমতার অপব্যবহার, কর ফাঁকির সহায়তা এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহ, ব্যাংক লেনদেন ও সম্পদের উৎস যাচাই করা হচ্ছে। অনুসন্ধানে প্রমাণ মিললে পরবর্তী ধাপে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিইউ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর