বুধবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

আন্দোলনে স্থবির এনবিআর, আমদানি-রফতানি ব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৯ জুন ২০২৫, ০৮:০৯ এএম

শেয়ার করুন:

আন্দোলনে স্থবির এনবিআর, আমদানি-রফতানি ব্যাহত

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভেঙে নতুন কাঠামো গঠনের প্রতিবাদে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দেশজুড়ে কর্মবিরতিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। শনিবার (২৮ জুন) তারা ‘শাটডাউন’ এবং ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচির আওতায় সারাদেশে কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেন। আন্দোলনের কারণে রাজধানীসহ দেশের সব কাস্টমস, ভ্যাট ও কর অফিসের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি আমদানি ও রফতানি কার্যক্রমে দেখা দেয় বড় ধরনের বিপর্যয়। চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর, সোনামসজিদ, হিলি, আখাউড়া, বাংলাবান্ধা ও বেনাপোলসহ বিভিন্ন স্থলবন্দরেও পণ্য খালাস ও ছাড়পত্র কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে শত শত ট্রাক বন্দরের ভেতর ও বাইরে আটকে পড়ে।

চট্টগ্রাম বন্দরে শুল্কায়ন বন্ধ থাকায় আমদানি-রফতানি পণ্যের খালাস পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। জেটিতে পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। বন্দরে থাকা কাস্টমস কর্মকর্তারা স্ক্যানিং, পরীক্ষণসহ কোনো ধরনের কাজ করেননি। ফলে বন্দর কর্তৃপক্ষও পণ্য ছাড় করতে পারেনি। একই চিত্র মোংলা, হিলি ও সোনামসজিদ স্থলবন্দরেও। পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধায় ভুটান থেকে আসা পাথরবোঝাই ১৪৮টি ট্রাক কাস্টমস ছাড়পত্র না পেয়ে আটকে আছে। বেনাপোলে সীমিত আকারে কয়েকটি ট্রাক আমদানি হলেও রফতানি একেবারে বন্ধ ছিল। আখাউড়ায় আগের দিনের অনুমোদন পাওয়া কিছু পণ্য ভারতে পাঠানো গেলেও নতুন কোনো কার্যক্রম হয়নি।


বিজ্ঞাপন


আন্দোলনকারীরা সকাল থেকেই রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনের সামনে জড়ো হন। তারা সেখানে ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ করেন। ভবনের প্রধান তিনটি গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়, ফলে তারা ভবনের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাজস্ব ভবনের চারপাশে র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যদের মোতায়েন করা হয়।

এই কর্মসূচির নেতৃত্ব দিচ্ছে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’। তারা দাবি করছে, বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানকে দায়িত্বে রেখে এনবিআরে কোনো টেকসই সংস্কার সম্ভব নয়। আন্দোলনকারীদের মতে, তিনি নিজের পছন্দের লোকদের দিয়ে রাজস্ব অধ্যাদেশ সংশোধনের জন্য কমিটি গঠন করেছেন। অথচ ঐক্য পরিষদের কাউকে সেই কমিটিতে রাখা হয়নি। তারা মনে করছে, এইভাবে সংস্কারের নামে সরকার কাঠামোগত দমনমূলক পরিবর্তন চাপিয়ে দিচ্ছে।

আন্দোলনকারীরা আরও অভিযোগ করেছেন, আন্দোলন দমাতে ঢাকার বাইরে পাঁচজন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। এই আদেশ প্রত্যাহারেরও দাবি জানিয়েছেন তারা। তাদের বক্তব্য, এই আন্দোলন দমন নয়, বরং আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হওয়া উচিত। তারা জানিয়েছেন, প্রয়োজনে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে তারা আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। তবে এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন।

শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘সংস্কার ঐক্য পরিষদ’-এর সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার ও মহাসচিব সেহেলা সিদ্দিকা বলেন, এনবিআর বিলুপ্তির উদ্যোগ প্রত্যাহার এবং বর্তমান চেয়ারম্যানের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। রবিবারও সারা দেশে ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। তবে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবাকে এই কর্মসূচির বাইরে রাখা হবে।


বিজ্ঞাপন


অন্যদিকে দেশের ১২টি শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এক যৌথ বিবৃতিতে এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের বিরোধিতা করেছে। তারা বলছে, এতে কোনো লাভ হবে না, বরং সংকট আরও বাড়বে। তবে আন্দোলনকারীদের প্রশ্ন, একজন ‘ব্যর্থ আমলা’ কেন ব্যবসায়ী সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য, তা তারা পরিষ্কারভাবে বলেননি। এ বিষয়ে পরিষদ ব্যবসায়ীদের ‘সজাগ’ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

এদিকে শনিবার বিকেলে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান সংস্থার ১৬ সদস্যকে নিয়ে একটি বৈঠক করেন। সেখানে অধিকাংশ সদস্য আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নেন বলে জানা গেছে। তবে ঐক্য পরিষদের এক সদস্য জানিয়েছেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এমন ভান করছেন যেন আন্দোলনকারীরা গিয়ে তাদের কাছে ধরনা দেয়। এই মনোভাব সমস্যার সমাধান নয়, বরং আরও ঘনীভূত করবে।

এই অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশের আমদানি-রফতানি খাত। শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, দেশের ৯২ শতাংশ বাণিজ্য সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। এখানকার অচলাবস্থা দ্রুত সমাধান না হলে পুরো রফতানি খাত বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে। আমদানি পণ্যের ট্রাক বন্দরে আটকে থাকায় শিল্প কারখানায় কাঁচামাল সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। অনেক পণ্য গুদামে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসায়ীরা।

সরকার ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সংকট নিরসনের দাবি জানাচ্ছেন বন্দর, কাস্টমস এবং ব্যবসায়ী সংশ্লিষ্ট সব মহল। অন্যথায় দেশের রাজস্ব ব্যবস্থা ও বাণিজ্য খাতে আরও বড় বিপর্যয় নেমে আসবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর