শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ডলার সংকট কাটিয়ে গতি ফিরছে আমদানিতে

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
প্রকাশিত: ২৮ জুন ২০২৫, ১২:১৯ পিএম

শেয়ার করুন:

ডলার সংকট কাটিয়ে গতি ফিরছে আমদানিতে

দীর্ঘ ডলার সংকট কাটিয়ে ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার। প্রবাসী আয় বৃদ্ধি এবং রিজার্ভ চাপে স্বস্তি ফেরায় বাড়ছে আমদানি ঋণপত্র বা এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি। চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ভোগ্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামালের এলসি খোলায় প্রবৃদ্ধি এসেছে। তবে মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি এখনও নিম্নমুখী। 

সশ্লিষ্টরা বলছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রপ্তানি আয় বাড়ায় বেড়েছে রিজার্ভ, যার সুফল পাওয়া যাচ্ছে এলসিতে।


বিজ্ঞাপন


বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভোগ্যপণ্যের এলসি খোলা গত বছরের তুলনায় ৩ দশমিক ৫ শতাংশ এবং নিষ্পত্তি ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ বেড়েছে। শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রেও এলসি খোলা বেড়েছে ২ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং নিষ্পত্তি বেড়েছে ১০ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

তথ্যমতে, ২০২৩–২৪ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে ভোগ্যপণ্যের জন্য এলসি খোলা হয়েছিল ৫৭৪ কোটি ৪২ লাখ ডলারের, যা চলতি অর্থবছরের একই সময়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯১ কোটি ৬৯ লাখ ডলারে। অর্থাৎ এলসি খোলা বেড়েছে ১৭ কোটি ২৭ লাখ ডলার। একই সময় ভোগ্যপণ্যের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৫৬৯ কোটি ৫ লাখ ডলারের, যা আগের বছরের একই সময়ের ৫৫৮ কোটি ৬১ লাখ ডলারের তুলনায় ১০ কোটি ৪৪ লাখ ডলার বেশি।


বিজ্ঞাপন


China-Aid-for-Mongla-Port
দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলা দিয়ে বিপুল পণ্য আমদানি-রফতানি হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চলতি অর্থবছরে শিল্পের কাঁচামালের আমদানিতে এলসি খোলা হয়েছে ২ হাজার ২২ কোটি ৭১ লাখ ডলারের, যা গত অর্থবছরে ছিল ১ হাজার ৯৬৮ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। অর্থাৎ ৫৪ কোটি ১২ লাখ ডলারের প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এছাড়া এলসি নিষ্পত্তির অংক বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ১০ কোটি ৪ লাখ ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১৯৪ কোটি ৫৭ লাখ ডলার বেশি।

বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসায় স্বস্তি

ব্যবসায়ীদের মতে, বৈধ চ্যানেলে প্রবাসী আয় বাড়ায় ডলার সরবরাহ কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে আমদানি কার্যক্রমে। তারা বলছেন, এলসি খোলায় গতি ফেরায় বাজারে নিত্যপণ্যের সরবরাহ বেড়েছে এবং দামও কিছুটা সহনশীল পর্যায়ে এসেছে।

বিপরীত চিত্র রয়েছে মূলধনি যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে। এ খাতে এলসি খোলা কমেছে ২৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ এবং নিষ্পত্তি কমেছে ২৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে যেখানে এলসি খোলা হয়েছিল ১৯৫ কোটি ২৯ লাখ ডলারের, সেখানে চলতি অর্থবছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৪১ কোটি ১৭ লাখ ডলারে। একই সময় এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ১৭০ কোটি ২৮ লাখ ডলারের, যা আগের বছরের ২২৯ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের তুলনায় ৫৯ কোটি ১ লাখ ডলার কম।

LC

খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বিগত সরকার আমদানি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা করতে পেরেছিল। তবে এখন প্রবাসী আয়ের ঊর্ধ্বগতি ও বৈদেশিক ঋণ প্রবাহ রিজার্ভে স্বস্তি ফেরাচ্ছে। তাই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে এলসি সহজ করা দরকার।

বিশ্লেষকদের মতে, ভোগ্যপণ্য ও কাঁচামাল আমদানিতে এলসি বাড়া অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে ইতিবাচক ইঙ্গিত। তবে মূলধনি যন্ত্রপাতির এলসি কমার প্রবণতা বিনিয়োগ স্থবিরতার লক্ষণ, যা অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদি গতিশীলতা নিয়ে চিন্তার বিষয় হয়ে উঠতে পারে।

রিজার্ভ ৩০ বিলিয়নের ওপরে, ব্যবহারযোগ্য ১৯ বিলিয়ন

এদিকে দেশে দীর্ঘ সময় পর আবারও ৩০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। গত সপ্তাহের শেষ দিনে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলারে। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্ধারিত হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী এই রিজার্ভের পরিমাণ ২৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। অন্যদিকে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের পরিমাণ ১৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে অবস্থান করছে।

আরও পড়ুন-

ইতিবাচক রেমিট্যান্স-রপ্তানি আয়, ব্যাংকগুলোতে বেড়েছে ডলারের মজুত

সরকার পরিবর্তনের পর প্রবাসী আয় বেড়ে যাওয়াকে এই রিজার্ভ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বর্তমান সরকার গঠনের পর বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবণতা বেড়েছে, যা বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্বস্তি ফেরাতে সাহায্য করেছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আর রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে হয়নি- যা বিগত ১০ মাস ধরে বজায় রয়েছে। এছাড়া বাজেট সহায়তা, ব্যাংক ও রাজস্ব খাত সংস্কার এবং বহুপাক্ষিক ঋণের অর্থ ছাড়ের ফলে রিজার্ভে বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা যোগ হয়েছে। চলতি সময় পর্যন্ত এসব উৎস থেকে ৫০০ কোটির বেশি ডলার দেশে এসেছে বলে জানা গেছে।

remittance

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বিবেচনায় আইএমএফ শিগগিরই আরও ৯০ কোটি ডলার ঋণ ছাড় করবে। পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক, এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি), জাপান এবং ওপেক ফান্ড থেকেও প্রায় ১৫০ কোটি ডলারের মতো ঋণ দেশে আসবে। এসব অর্থ জুন মাসের মধ্যেই রিজার্ভ হিসেবে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে চলতি মাস শেষে দেশের মোট রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

প্রবাসী আয়ের দিক থেকেও ইতিবাচক ধারা বজায় রয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। আর চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরু থেকেই গত সপ্তাহ পর্যন্ত ২৯ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার বেশি। এছাড়া রপ্তানি খাতেও ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, যদিও আমদানি ব্যয় ৫ শতাংশের মতো বেড়েছে। এই পার্থক্য রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

টিএই/ইএ

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর