চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ১১ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৪৯ দশমিক ০৮ শতাংশ। এ সময়ে মোট ১ লাখ ১১ হাজার ৫ কোটি টাকা অর্থ ছাড় হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা কম। সংশোধিত এডিপি অনুযায়ী অর্থবছরের বাকি এক মাসে আরও ১ লাখ ১৫ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা খরচের লক্ষ্য রয়েছে, যা অর্জন সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্যনুযায়ী, জুন মাসের প্রথম ১৫ দিনে খরচ হয়েছে মাত্র সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা। আর মে মাসে খরচ হয়েছে ১৭ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা, আগের বছরের মে মাসের তুলনায় যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা কম। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, শেষ সময়ে অতিরিক্ত কাজের চাপ ও অর্থ বরাদ্দ সীমাবদ্ধতার কারণে জুন মাসে এডিপির পুরো অর্থ খরচ সম্ভব হবে না।
বিজ্ঞাপন
চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপি অনুযায়ী মোট বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ২৬ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা, যা মূল বরাদ্দ ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার চেয়ে ৩৮ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা কম। তবে বাস্তবে যে খরচ হচ্ছে, তা এ লক্ষ্য পূরণ থেকে অনেক দূরে। পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, ১১ মাসে যেখানে খরচ হয়েছে মাত্র ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা, সেখানে শেষ এক মাসে সর্বোচ্চ ২০-২৫ হাজার কোটি টাকা খরচ সম্ভব।
কম বাস্তবায়নের পেছনে বিল পরিশোধে বিলম্ব, প্রকল্প মেয়াদ বারবার বাড়ানো এবং বরাদ্দ থাকলেও প্রকৃত চাহিদার ঘাটতি বড় কারণ বলে মনে করছেন আইএমইডির সচিব মো. কামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, শুধু বিল পরিশোধের কারণে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ছে, যার বিকল্প ব্যবস্থার প্রয়োজন।
বিজ্ঞাপন
এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে সবচেয়ে বেশি খরচ করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ—২৩ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ বিভাগ ১৮ হাজার ৩৪৭ কোটি ও সড়ক-মহাসড়ক বিভাগ ৯ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা খরচ করেছে। সবচেয়ে কম খরচ করেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ (৬৮ কোটি টাকা) এবং দুদক (১ কোটি টাকার কম)।
পরিকল্পনা বিভাগের সাবেক সচিব মামুন আল রশিদ মনে করেন, শেষ সময়ে তাড়াহুড়ো করে ব্যয় বাড়ালে দুর্নীতি ও অপচয়ের ঝুঁকি তৈরি হবে। তার পরামর্শ, বিল যাচাই-বাছাই করে সঠিকভাবে অর্থ ছাড় করা উচিত।
চলতি অর্থবছরের এডিপি থেকে ৪৯ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে চাহিদার অভাবে। তবুও বরাদ্দের তুলনায় বাস্তবায়ন কম হওয়ার কারণে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকারও বেশি অব্যবহৃত থেকে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এমআই/এএস

