ওষুধ শিল্পের উন্নয়ন ও বিনিয়োগে এগিয়ে আসার জন্য বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শ্রীলংকা-বাংলাদেশ বিজনেস কো-অপারেশন কাউন্সিলের সভাপতি আন্দ্রে ফার্নান্দো।
বুধবার (১৮ জুন) শ্রীলংকায় ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অব শ্রীলংকা আয়োজিত ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্প্রসারণে বাংলাদেশ-শ্রীলংকার বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নয়ন’ শীর্ষক বিজনেস প্লেনারি সেশনে এই আহ্বান জানান তিনি।
বিজ্ঞাপন
সেশনে শ্রীলংকা সফররত ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিরি (ডিসিসিআই) প্রতিনিধি দলের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। শ্রীলংকায় অবস্থিত বাংলাদেশের হাইকমিশনের সার্বিক সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়।
ঢাকা চেম্বারের প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানিয়ে ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অব শ্রীলংকার সভাপতি আনূরা ওয়ারনাকুলাসুরিয়া বলেন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে পারষ্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস জরুরি এবং দুই দেশের বেসরকারি খাতের মধ্যকার এ ধরনের সমন্বয় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, বিগত কয়েক দশকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেশ স্থিতিশীল ছিল। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, ওষুধ, চামড়াজাত পণ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্য, ইলেকট্রনিক্স ও হালকা প্রকৌশল এবং তথ্য-প্রযুক্তি প্রভৃতি খাত এ অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
তিনি জানান, শ্রীলংকার উদ্যোক্তারা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক, জ্বালানি, অবকাঠামো প্রভৃতি খাতে ৪৩৮.১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে এবং বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে আরও বেশি হারে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
বিজ্ঞাপন
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের অধিকতর উন্নয়নে প্রায় তিন দশক আগে স্বাক্ষরিত ‘ডাবল ট্যাক্সেশন এভয়ডেন্স এগ্রিমেন্ট’ যুগোপযোগীকরণের উপর জোরারোপ করেন ঢাকা চেম্বার সভাপতি।
শ্রীলংকা এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান মানগালা ওয়াইজেসিঙ্গহি জানান, শ্রীলংকার জিডিপিতে রফতানি খাতের অবদান ১৯.৬ শতাংশ এবং ২০২৪ সালে মোট রফতানি ছিল ১৬.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তিনি বলেন, শ্রীলংকা তার রফতানি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ ও পণ্যের বহুমুখীকরণের উপর অধিক হারে প্রধান্য দিচ্ছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ওষুধ, তৈরি পোশাক, ফেব্রিক্স এবং কেমিক্যাল প্রভৃতি পণ্য আমদানি করেছে। এছাড়া সুতা ও টেক্সটাইল, ফেব্রিক্স, মসলা, পশু খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, বাদাম ও কৃষি পণ্য প্রভৃতি খাতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। শ্রীলংকার ওষুধ, প্যাকেজিং, লজিস্টিক ও রফতানিমুখী পণ্য উৎপাদন খাতে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
বোর্ড অব ইনভেস্টমেন্ট অব শ্রীলংকা রেনুকা এম ওয়াইরাকুনে বলেন, দুই দেশের মধ্যকার এফটিএ স্বাক্ষরের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অনেকাংশে বৃদ্ধির পাশাপাশি শুল্ক বিষয়ক প্রতিবন্ধকতাও নিরসন হবে।
তিনি বলেন, শ্রীলংকায় ওষুধ, মেডিকেল যন্ত্রপাতি এবং ফেব্রিক্স খাতে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে পারে। সেই সঙ্গে অবকাঠামো, পর্যটন, তথ্য-প্রযুক্তি এবং শিক্ষা প্রভৃতি খাত শ্রীলংকায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, শ্রীলংকার বিনিয়োগ বোর্ড উদ্যোক্তাদের সুবিধার্থে সকল সেবা সম্বলিত ১৫টি রফতানি প্রক্রিয়া অঞ্চল পরিচালনা করছে, যেখানে বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে পারে।
এছাড়া অনুষ্ঠানে শ্রীলংকায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত শ্রীলংকা হাইকমিশনার ধর্মপালা বীরাক্কোদি বক্তব্য দেন।
হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস বলেন, বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার মধ্যকার বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সম্প্রসারণে অতিদ্রুত এফটিএ স্বাক্ষর জরুরি।
ডিসিসিআই প্রাক্তন সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়াতে এফটিএ স্বাক্ষরে দুই দেশের সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়া উভয় দেশের সমুদ্র অর্থনীতির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে একযোগে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। উভয় দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে দুই দেশের শুল্ক বিষয়ক প্রতিবন্ধকতা নিরসনের পাশাপাশি নীতির যুগোপযোগী সংষ্কারের উপর তিনি জোরারোপ করেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকা চেম্বারের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ৭০টি শ্রীলংকান ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির মধ্যকার ১৫০টি বিটুবি ম্যাচ-মেকিং অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দুই দেশের উদ্যোক্তারা নিজেদের ব্যবসা ও বিনিয়োগ বিষয়ক তথ্য আদান-প্রদানের সুযোগ পান, যা ভবিষ্যতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহসভাপতি মো. সালিম সোলায়মান এবং প্রতিনিধি দলের সদস্যরা অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।
এমআর/এএইচ

