শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার: চলতি মাসে শ্রমিক পাঠানো নিয়ে সংশয়

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ১৭ জুন ২০২২, ০৯:০৭ পিএম

শেয়ার করুন:

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার: চলতি মাসে শ্রমিক পাঠানো নিয়ে সংশয়
ফাইল ছবি

প্রায় তিন বছর পর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুললেও চলতি মাসে কর্মী পাঠানো নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। আগামী জুলাই মাসেও পাঠানো সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান খোদ এই খাত সংশ্লিষ্টরা। যদিও গত ২ জুন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রী ইমরান আহমদ জানিয়েছিলেন, চলতি জুনেই মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী পাঠানো শুরু হবে। আর চলতি বছরে এক লাখ কর্মী নেবে মালয়েশিয়া। এ জন্য দেশটির সঙ্গে নতুন কোনো চুক্তি বা আলোচনার প্রয়োজন পড়বে না।

করোনা মহামারি ছাড়াও নানা কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। সবশেষ গত বছর ডিসেম্বরে বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠাতে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হয়। তারপরও ঝুলে ছিল প্রক্রিয়ার বিষয়টি। পরবর্তীকালে গত ২ জুন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী সারাভানান বাংলাদেশে আসেন। ওই সময় দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির সভা হয়। ওই সভায় কীভাবে এবং কারা কর্মী পাঠাবে তা নিয়ে আলোচনাও হয়।


বিজ্ঞাপন


ওই সভা শেষে সারাভানান জানিয়েছিলেন, এবার দেশটিতে কর্মী পাঠাতে কোনো এজেন্সির সিন্ডিকেট হবে কি না তা সিদ্ধান্ত নেবে মালয়েশিয়ান ক্যাবিনেট। অন্যদিকে একই দিন বিকেলে প্রবাসী মন্ত্রী ইমরান আহমদ জানিয়েছিলেন, চলতি মাসেই শ্রমিক যাওয়া শুরু হবে। এ ক্ষেত্রে কর্মীর কোনোপ্রকার টাকা-পয়সা লাগবে না। যাওয়া ও আসার জন্য কোম্পানি টিকিট দেবে। তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত মেনে যেতে হবে।

Malaysia Worker

গত বছর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী পাঠানোর কাজ পেয়েছিল ১০ এজেন্সি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাদেরই একজন ঢাকা মেইলকে বলেন, কেবলমাত্র চুক্তি স্বাক্ষরের পর কতটি এজেন্সি কর্মী পাঠাবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। এখনো কিন্তু মালয়েশিয়ান ক্যাবিনেট থেকে সিদ্ধান্ত আসেনি। এরই মধ্যে কর্মী পাঠানোর কাজ পেতে তোড়জোড় চালাচ্ছে ২৫ এজেন্সি। আবার অন্যদিকে দূতাবাসও চাহিদাপত্র দেওয়া শুরু করেছে অন্য এজেন্সিগুলোকে। ফলে বিভিন্নজন কাজ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

২৫ এজেন্সির অনেকেই সম্প্রতি মালয়েশিয়া গিয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, তারা দূতাবাস সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দেখাও করেছেন। কিন্তু চলতি মাসে কর্মী যাবে কি না তা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।


বিজ্ঞাপন


এদিকে, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কাজ পেতে মরিয়া ২৫ এজেন্সির একজন জানিয়েছেন, একটি দেশের সঙ্গে শুধুমাত্র চুক্তি হলেই কর্মী যাওয়া শুরু হয় না। আরও কিছু প্রসেস থাকে। যেমন: কর্মী পাঠানোর আগে তার মেডিকেল ও পাসপোর্ট করাতে হয়। মালয়েশিয়ায় কোন এজেন্সি কর্মী পাঠাবে এবং তারা যাওয়ার আগে কোন প্রতিষ্ঠানে মেডিকেল করবে সেটিও এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

গতবারের প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ পাবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, গতবার অনেক কর্মীর মেডিকেল হওয়ার পরও তারা যেতে পারেনি। অনেকে গিয়েও ফেরত এসেছে। যে প্রতিষ্ঠান মেডিকেল করিয়েছিল, তাদের ঝামেলা ছিল। ফলে দেশটিতে অনেক কর্মী যেতেই পারেনি। বিমানবন্দর থেকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। এবার যেন সেই অবস্থা তৈরি না হয়।

Malaysia Worker

এই এজেন্সি কর্মকর্তা আরও বলেন, সব প্রক্রিয়া শেষ করে কর্মী পাঠানো জুলাই মাসেও সম্ভব হবে কি না তাতেও সন্দেহ রয়েছে। সবমিলিয়ে দুই থেকে তিন মাস লাগতে পারে। যদিও যারা যেতে ইচ্ছুক তাদের ইতোমধ্যেই রেজিস্ট্রেশন করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে বিএমইটি।

এদিকে, সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে- দুই দেশের মধ্যে চুক্তি ও জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং ছাড়াও এখনো এজেন্সি চূড়ান্ত ও মেডিকেল কোন কোন প্রতিষ্ঠান করাবে তার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। এই সিদ্ধান্ত চলতি মাসেও আসবে না। জুলাই ছাড়া এসব চূড়ান্ত হবে না। কারণ, সামনে কোরবানির ঈদ। এর আগে কোনো কর্মীই যাবে না। তবে ঈদের পর যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। তাও সে সুযোগও ক্ষীণ।

এ বিষয়ে মালয়েশিয়ায় কাজ পেতে মরিয়া ২৫ এজেন্সি নিয়ে সিন্ডিকেটকারী ও ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের পরিচালক রুহুল আমিন স্বপন প্রশ্ন রেখে বলেন, চলতি মাসে মালয়েশিয়ায় কর্মী কীভাবে যাবে? এখনো মেডিকেল শুরু হয়নি, মালয়েশিয়াতে অনলাইনে অ্যাটাসটেশন প্রক্রিয়া চালু হয়নি। আমার মনে হয়- জুলাইয়ের আগে কেউ যেতে পারবে না।

Malaysia Worker

উল্লেখ্য, ইতোমধ্যেই মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক কর্মীদের রেজিস্ট্রেশন শুরু করেছে বিএমইটি। তবে এই রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরও আরও কিছু ধাপ রয়েছে। সেসব ধাপ শেষ করে তবেই একজন শ্রমিক মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ পাবেন।

চলতি চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ থেকে পাঁচ লাখ কর্মী নেবে মালয়েশিয়া। দেশটির ট্রি প্লান্টেশন খাত ছাড়াও কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে এই কর্মী নেবে তারা। দুই দেশের মাঝে চুক্তি হলেও এখন পর্যন্ত কতটি এজেন্সি বাংলাদেশ থেকে এই কর্মী পাঠাবে তা ঠিক করতে পারেনি মালয়েশিয়া। এরই মধ্যে দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ে জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী সারাভানান সম্প্রতি দেশটির এক গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, ২৫ এজেন্সির বিষয়ে বাংলাদেশের মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী একমত হয়েছেন। তার এমন বক্তব্য প্রকাশ পাওয়ার পরপরই সমালোচনার ঝড় বইছে। কারণ, এর আগে এই মন্ত্রী বাংলাদেশের প্রবাসী মন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়ে ২৫ এজেন্সির বিষয় চূড়ান্ত করার মত চেয়েছিলেন।‌ কিন্তু তাতে বাংলাদেশের মন্ত্রী সাড়া দেননি। এছাড়া সম্প্রতি মালয়েশিয়ার কেবিনেটে ২৫ এজেন্সির বিষয়ে আলোচনা হলে দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রী কোনো কাগজপত্রও দেখাতে পারেননি, উল্টো সময় চেয়েছেন তিনি।

এমআইকে/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর