জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দুই বিভাগে পৃথকীকরণের অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। কর্মকর্তাদের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখে সংশোধনী আনা হবে।
রোববার (২৫ মে) সন্ধ্যায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী তৌহিদুল ইসলামের পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বিবৃতিতে বলা হয়, রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫ বাস্তবায়ন বিষয়ে গত ২২ মে অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারীকৃত প্রেসনোটে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের বিভিন্ন দাবীর বিষয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করে সরকার আশা করেছিল যে অধ্যাদেশের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর এবং কাস্টমস ও ভ্যাট সার্ভিসের সকল উদ্বেগের অবসান ঘটবে। কিন্তু এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সাম্প্রতিক প্রেস রিলিজ থেকে এ বিষয়ে কিছু অস্পষ্টতা রয়ে গেছে মর্মে প্রতীয়মান হচ্ছে। এমতাবস্থায়, এ বিষয়ে অধিকতর স্পষ্টীকরণ করা হয়েছে।
স্পষ্টীকরণে যেসব বিষয়ে তুলে ধরেছে এনবিআর—
১। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারের একটি স্বতন্ত্র ও বিশেষায়িত বিভাগের মর্যাদায় উন্নীত করা হবে।
২। বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ও বিসিএস (কর) ক্যাডারের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড শক্তিশালীকরণ এবং একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গঠনের মাধ্যমে রাজস্ব নীতি পৃথকীকরণের কাঠামো কিরূপে প্রণীত হবে তা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটি ও গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে।
৩। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড শক্তিশালীকরণ এবং রাজস্ব নীতি প্রণয়ন কার্যক্রম পৃথকীকরণের লক্ষ্যে আগামী ৩১ জুলাই ২০২৫ তারিখের মধ্যে জারিকৃত অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সকল সংশোধনী আনা হবে। উল্লেখ্য, প্রয়োজনীয় সংশোধনের পূর্ব পর্যন্ত জারিকৃত অধ্যাদেশটি কার্যকর করা হবে না।

সরকার আশা প্রকাশ করছে যে, এই ঘোষণার মাধ্যমে কর এবং কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দের সকল উদ্বেগের অবসান ঘটবে এবং দেশের রাজস্ব আহরণ ও রাজস্ব সেবা প্রদানকারী সকল দপ্তর অবিলম্বে পূর্ণ উদ্যমে কাজ শুরু করবে।
বিজ্ঞাপন
এদিকে, আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামীকাল সোমবার কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জারি করা অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সব সংশোধনীসহ অধিকাংশ দাবির বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় একমত হওয়ায় আন্দোলন স্থগিত করে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’।
ঐক্য পরিষদের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা আমাদের অধিকাংশ দাবির বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। তাই আপাতত আন্দোলন স্থগিত করা হতে পারে। আমরা বিস্তারিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়ে দেব।
এর আগে, এদিন এনবিআর প্রধান কার্যালয়ের নিচে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলন থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এবং ওষুধ ও জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামের আমদানি-রফতানি ছাড়া সোমবার (২৬ মে) থেকে কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দফতরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রাজস্ব ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় ও সময়োপযোগী সংস্কারের ক্ষেত্রে আমাদের এই যৌক্তিক দাবিগুলো সরকার কী কারণে, কার প্রভাবে বা কোন অজুহাতে এখন বাস্তবায়ন করছে না- তা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। যেহেতু আমাদের চার দাবি পূরণের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো সুস্পষ্ট ঘোষণা আসেনি, সেহেতু আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের চার দাবি হলো—
১. জারিকৃত অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
২. অবিলম্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে।
৩. রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ জনসাধারণের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
৪. জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক প্রস্তাবিত খসড়া এবং পরামর্শক কমিটির সুপারিশ আলোচনা-পর্যালোচনা করে প্রত্যাশী সংস্থা, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের মতামত নিয়ে উপযুক্ত ও টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে।
এমআর/এমএইচটি

