দেশে প্রথমবারের মতো বাজেট উত্থাপন করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বা উন্নয়ন বাজেটের আকার ৩৫ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, যা সংশোধনের পর কমিয়ে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকায় আনা হয়। সেই তুলনায় আগামী অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেট কিছুটা বেশি হলেও মূল এডিপির তুলনায় তা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) অনুমোদিত নতুন এডিপির আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, আগামী বছরের এডিপিতে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন থেকে আসবে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা, আর প্রকল্প সহায়তা হিসেবে বিদেশি ঋণ থেকে পাওয়া যাবে ৮৬ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ, বিদেশি সহায়তার অংশ এ বছর ১৪ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে। নতুন অর্থবছরে মোট প্রকল্পের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১৪২টি।
বিজ্ঞাপন
এবারের বাজেটেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে। এই খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫৮ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির ২৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ যাচ্ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে, যার পরিমাণ ৩২ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৮ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১২ দশমিক ৪২ শতাংশ।
তবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ কমেছে। শিক্ষা খাতে আগামী অর্থবছরে ৯১টি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ থাকছে ২৮ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা, যা চলতি বছরের তুলনায় প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা কম। একইভাবে, স্বাস্থ্য খাতে ৩৫টি প্রকল্পে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা, যেখানে চলতি বছর এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২০ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা। অর্থাৎ স্বাস্থ্য খাতেও বরাদ্দ কমছে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি।
অন্য খাতগুলোর মধ্যে গৃহায়ন ও নগর উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে ২২ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে বরাদ্দ থাকছে ১৩ হাজার ৪৭২ কোটি, কৃষি খাতে ১০ হাজার ৭৯৫ কোটি এবং পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদ খাতে ১০ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা। এছাড়া শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় বরাদ্দ ৫ হাজার ৩৮ কোটি টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে ৩ হাজার ৮৯৪ কোটি, ধর্ম ও সংস্কৃতি খাতে ৩ হাজার ৬৭৫ কোটি এবং জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ থাকছে ২ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। সামাজিক সুরক্ষা খাতে ২ হাজার ১৮ কোটি, সাধারণ সরকারি সেবা খাতে ১ হাজার ৮৭৭ কোটি এবং প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ থাকছে ৪৭৫ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ আগামী অর্থবছরের জন্য মোট ২ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকার চাহিদা দিয়েছিল। তবে বাস্তবতা বিবেচনায় সেই প্রস্তাবিত চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কমিয়ে বাস্তবমুখী একটি এডিপি তৈরি করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের মতে, বৈদেশিক মুদ্রার চাপ, প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে ব্যয় কমানো হলেও প্রাধান্য পাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো, যোগাযোগ ও জ্বালানি খাত। তার ভাষায়, “সংকট সত্ত্বেও আমরা টেকসই উন্নয়নের পথ থেকে সরে আসছি না।”
টিএই/এএস

