সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে তৎপরতা বাড়াচ্ছে সরকার

মাহাবুল ইসলাম
প্রকাশিত: ১৬ মে ২০২৫, ০৩:৩৪ পিএম

শেয়ার করুন:

নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে তৎপরতা বাড়াচ্ছে সরকার

দেশে চলমান মূল্যস্ফীতি ও জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকার তৎপরতা বাড়াচ্ছে। বাজার ব্যবস্থাপনা, আমদানি নীতিতে ছাড়, নজরদারি জোরদার এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কার্যক্রম সম্প্রসারণসহ বাজার স্থিতিশীল রাখতে বিশেষ পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের এপ্রিলে মাসে মূল্যস্ফীতি ৯.১৭ শতাংশে পৌঁছায়। যা গত বছরের এপ্রিলে ছিল ৯.৭৩ শতাংশ। এছাড়া বাজার মনিটরিংয়ে তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় মার্চের চেয়ে এপ্রিলের মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে সরকারের তৎপরতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।


বিজ্ঞাপন


অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত খাদ্যদ্রব্য, ভোজ্যতেল, চাল, ডাল, চিনি, পেঁয়াজ ও সবজির দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা চরমভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন সারাদেশে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন সংস্থা যৌথভাবে বাজার তদারকিতে নামছে। এক্ষেত্রে পণ্য মজুদ, কৃত্রিম সংকট তৈরি, অতিমূল্য আদায় বা অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জরিমানা এবং মামলা করা হচ্ছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (আইআইটি) অনুবিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. মেহেদী হাসান ঢাকা মেইলকে বলেন, দেশের বাজার স্বাভাবিক রাখতে সরকার তৎপর রয়েছে। আমরা প্রতিটি পণ্যের সরবরাহ, মূল্য ও মজুদের তথ্য প্রতিদিন সংগ্রহ করছি এবং সমন্বিত উদ্যোগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং ছাড়াও নিত্যপণ্যের সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য ‘জাতীয় বাজার স্থিতিশীলতা কমিশন (এনবিএসসি)’ নামে নতুন একটি স্থায়ী কমিশন গঠনের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। সেখানে প্রস্তাবক হিসেবে এ কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশে চাল, ডাল, চিনি, ভোজ্যতেল, লবণ, মুরগি, গরুর মাংস, ডিম, মাছ, আলু, পেঁয়াজ, সবজি ও সারে সিন্ডিকেট করা হয়। ফলে কমিশন গঠনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বাজার ব্যবস্থাপনাকে সুষ্ঠু, কার্যকর ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। বাজারে মূল্য, সরবরাহ ও চাহিদা সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করবে এ কমিশন। সিন্ডিকেট ও অবৈধ ব্যবসায়িক কার্যক্রম রোধও এ কমিশন করবে। সার্বিক বিবেচনায় বাজারে স্থিতিশীলতা আনার জন্যই এই কমিশন গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


প্রস্তাবিত কমিশনকে ‘জাতীয় উদ্যোগ’ হিসেবে বিবেচনা করে বলা হয়, দেশের বাজার ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘদিন ধরেই অসংগতিপূর্ণ, অবৈধ সিন্ডিকেট ও মূল্য কারচুপি বিরাজ করছে, যা জনস্বার্থের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ভোক্তা সুরক্ষায় অবহেলা, বাজারে অস্থিতিশীলতা ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া বাজারের কার্যক্রম তদারকি, প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টি, মজুত নিয়ন্ত্রণ, বাজারে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয় থাকবে প্রস্তাবিত কমিশনটির আওতায়।

গত ২৩ জানুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধিদলের মধ্যে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ১৬ মার্চ সম্ভাব্য কমিশনের রূপরেখার ওপর মতামত দিতে চারটি প্রতিষ্ঠান, যথাক্রমে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে চিঠি পাঠায়। ১০ এপ্রিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দ্বিতীয় দফায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ বিষয়ে মতামত দেওয়ার অনুরোধ করে।

এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সরকার বলেন, সরকার সিন্ডিকেটকে সাপোর্ট করে না। সার্বিক বাজার ব্যবস্থা দুর্বৃত্তায়ন থেকে বের হয়ে বাজারে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। মাহে রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিল, তা সফল হয়েছে। তাই মাহে রমজানের মতো কর কিংবা শুল্ক রেয়াত ছাড়া সম্ভাব্য সব এবং নতুন পদক্ষেপ আবারও গ্রহণ করা হচ্ছে। যাতে দীর্ঘমেয়াদে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা যায়।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি’র বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশে মূল্যস্ফীতির কারণে যে চ্যালেঞ্জগুলো তৈরি হয়েছে, তা মোকাবিলায় সরকার আন্তরিকভাবেই কাজ করছে বলেই মনে হচ্ছে। রাজস্ব ও মুদ্রানীতি সবকিছু দিয়েই চেষ্টা করছে। তবে নজরদারি আরও বাড়াতে হবে। অসাধু সিন্ডিকেটগুলোকে ভাঙতে পারলে বাজার অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

এমআই/এফএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর