শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

দেশের অর্থনীতি পাল্টাতে চট্টগ্রাম বন্দরই মূল ভরসা: ড. ইউনূস

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ১৪ মে ২০২৫, ১২:৪৩ পিএম

শেয়ার করুন:

chattogram port visit Dr muhammad Yunus
চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

চট্টগ্রাম বন্দরকে সত্যিকার বন্দরে পরিণত করার কাজ চলছে জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র হলো চট্টগ্রাম বন্দর। এখান থেকেই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি পাল্টাতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরই হলো মূল ভরসা। তাই পৃথিবীর সেরা বন্দর ব্যবস্থাপক যারা আছেন, তাদের আমি ডাকতে বলেছি।’


বিজ্ঞাপন


বুধবার (১৪ মে) সকালে চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনকালে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে প্রথমবারের মতো নিজ জেলা চট্টগ্রামে এসেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সকাল সোয়া ৯টার দিকে তিনি চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। এসময় প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান চট্টগ্রাম প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

বিমানবন্দর থেকে সরাসরি দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর পরিদর্শনে আসেন প্রধান উপদেষ্টা। চট্টগ্রাম বন্দর ও জাহাজ চলাচল খাতের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি ও বাণিজ্য সংস্থার নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। শুরুতেই তিনি দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম পরিদর্শন করেন এবং নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) ৫ নম্বর ইয়ার্ডে বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিকনির্দেশনা দেন। পরে বন্দরের এনসিটি-৫ প্রাঙ্গণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন তিনি। 

চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃদয়। যদি এই হৃদয় দুর্বল থাকে, তবে কোনো চিকিৎসকই তাকে সচল রাখতে পারবে না। এ কারণেই আমাদের এটিকে বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে হবে।


বিজ্ঞাপন


‘যথাযথ পরিকল্পনায় এগোতে পারলে ২০৩৬ সালে বাংলাদেশিরা দক্ষ জনশক্তি হয়ে বিদেশের বন্দর পরিচালনা করবে’ বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি জানান, এর আগে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে আহ্বান জানানো হলেও কার্যকর অগ্রগতি হয়নি। তাই পৃথিবীর সেরা বন্দর ব্যবস্থাপক যারা আছেন, তাদের ডাকতে বলেছেন।

আঞ্চলিক সংযোগের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, এই হৃদয়কে (চট্টগ্রাম বন্দর) প্রতিবেশীদের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। তাই আমি নেপাল ও ভারতের সাত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের (সেভেন সিস্টারস) সঙ্গে সংযোগের কথা বলেছি। তারা যুক্ত হলে তারাও লাভবান হবে, আমরাও। যারা যুক্ত হবে না, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ব অনেক দূর এগিয়ে গেছে, আর আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। কেউ যেন তেমন গুরুত্বও দিচ্ছে না। এ কারণেই আমি পরিবর্তনের জন্য চাপ দিয়েছি। আমি বিশ্বের সেরা অপারেটরদের হাতে বন্দরের দায়িত্ব তুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছি। আশা করি, সবাই এ সিদ্ধান্তের তাৎপর্য বুঝতে পারবে।

‘আমাদের বড় ডাক্তার দিয়ে কাজ করতে হবে। এর জন্য টাকা পয়সা খরচ হবে না। বিল্ড অপারেট ট্রান্সফার পদ্ধতিতে তোমরা বানাও, অপারেট করো, আমাদের হস্তান্তর করো। দুনিয়ার সেরা প্রতিষ্ঠান যখন বানাচ্ছে তাদের রোজগার করে টাকা তুলতে হবে। তারা আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে বানাবে। তাদের সর্বশেষ প্রযুক্তি, অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবে। তারা যন্ত্র বানিয়ে দেবে তাদের মেয়াদ শেষে আমরা চালাবো। আমাদের টাকা লাগলো না। আমরা প্রযুক্তির শেষ মাথা থেকে শুরু করলাম।’

chattogram_port_dr_yunus

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি বিশ্বাস করি, দ্রুত চুক্তি সই করে ফেলতে পারি, কাজ শুরু করতে পারি। আর অপেক্ষার সুযোগ নেই, ডাক্তারদের হাতে ছেড়ে দিই যাতে যেটুকু পেয়েছি তার চেয়ে অনেক বেশি ভালো করতে পারি। যাতে বাংলাদেশিদের স্মরণ করে, সেই গোপন রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারি। চট্টগ্রাম সওদাগরদের শহর। নৌকা নিয়ে, পালতোলা জাহাজ নিয়ে কে কোথায় চলে যাবে। পর্তুগিজরা এসেছিল। আমিও দোকানে বসেছি। তারা দেশ বিদেশে যাবে ব্যবসা করবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে নিজের শৈশবস্মৃতি স্মরণ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর আমার কাছে নতুন কিছু নয়। ছোটবেলা থেকেই আমি এর সঙ্গে পরিচিত। এটি অনেক বদলেছে, তবে দুঃখজনকভাবে অগ্রগতি খুব ধীর। সুযোগ পেয়েই আমি প্রথম দিন থেকেই খোঁজখবর নিতে শুরু করি—কী করা যায় বন্দরের জন্য।

তিনি আরও বলেন, ছোটবেলায় দেখেছি জাহাজ বোঝাই ধান, চাল আসতো। আমাদের রক্ত হলো সওদাগরের রক্ত। এদের হাতে ছেড়ে দিলে শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা দুনিয়ায় তারা ছড়িয়ে যাবে। আমাদের রক্তের ভেতরে আছে, ঐতিহ্যের ভেতরে আসে। দীর্ঘদিন অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। বিশাল অর্থনীতি হবে যদি চট্টগ্রাম বন্দরের হৃৎপিন্ড বিশাল হয়। যেকোনো ব্যবসায়ী এসে এখানে বিনিয়োগ করবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুতবেগে পরিবর্তন হবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়ন প্রসঙ্গে নৌপরিবহন ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, প্রধান উপদেষ্টার আগ্রহ ও অঙ্গীকারের জন্যই বন্দরের সুযোগ-সুবিধা উন্নয়নের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। বন্দরের চারপাশে একাধিক টার্মিনাল নির্মাণের মাধ্যমে কনটেইনার জট কমানো সম্ভব হবে।

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমি বিশ্বাস করি, ছয় মাসের মধ্যেই এর বাস্তব প্রভাব দেখা যাবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের ৯২ শতাংশ এবং তার মধ্যে ৯৮ শতাংশই চট্টগ্রামের নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনালের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। তাই বন্দরের আধুনিকায়নের কোনো বিকল্প নেই।

তিনি আরও জানান, প্রাকৃতিক সীমাবদ্ধতার কারণে ২০০ মিটার বা তার চেয়ে বড় জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করতে পারে না। এর ফলে প্রতিদিন বাংলাদেশ বড় অংকের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বলে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এমআই/ইএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর