বৃহস্পতিবার, ২২ মে, ২০২৫, ঢাকা

বিকেএমইএ নির্বাচনে হাতেম প্যানেলের ১৫ দফা কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭ মে ২০২৫, ০২:৩৪ পিএম

শেয়ার করুন:

বিকেএমইএ নির্বাচনে হাতেম প্যানেলের ১৫ দফা কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা
১৫ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা। ছবি: ঢাকা মেইল

বাংলাদেশের অন্যতম রফতানিনির্ভর খাত নিটওয়্যার শিল্পের বৃহৎ সংগঠন বিকেএমইএ'র (বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি) আসন্ন ২০২৫-২০২৭ মেয়াদের নির্বাচন ঘিরে জমে উঠেছে প্রচারণা। এরইমধ্যে নির্বাচনী মাঠে নিজেদের অবস্থান আরও মজবুত করতে ১৫ দফা কর্মপরিকল্পনাভিত্তিক নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে মোহাম্মদ হাতেমের নেতৃত্বাধীন ‘প্রগ্রেসিভ নিট অ্যালায়েন্স’।

বুধবার (৭ মে) রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন মোহাম্মদ হাতেম। এ সময় প্রগ্রেসিভ নিট অ্যালায়েন্সের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।


বিজ্ঞাপন


এই ইশতেহারে শিল্পের দীর্ঘদিনের নানাবিধ জটিলতা নিরসনে বাস্তবভিত্তিক, জবাবদিহিমূলক ও রফতানিবান্ধব নীতির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

১৫ দফা কর্মপরিকল্পনাগুলো হলো-

কাস্টমস ও বন্ড জটিলতা নিরসনে জোরালো পদক্ষেপ-প্রগ্রেসিভ নিট অ্যালায়েন্সের ইশতেহারের প্রথমেই রয়েছে আমদানি ও রফতানিতে বিদ্যমান কাস্টমস জটিলতা দূরীকরণ। এইচ.এস. কোড নিরসন, এফওসি-তে কাঁচামাল আমদানি ও রফতানি প্রক্রিয়া সহজীকরণ, কম্পোজিট ইউনিটের ক্ষেত্রে আমদানি ও ব্যবহারের স্বচ্ছ নিয়ম প্রণয়ন, বন্ডেড থেকে নন-বন্ডেড প্রতিষ্ঠানে কাঁচামাল সরবরাহের বাধা দূর করাসহ বন্ড কমিশনারেটের অনিয়ম-জটিলতা নিরসনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া নন-বন্ডেড প্রতিষ্ঠানগুলোকে জোর করে বন্ড লাইসেন্স করাতে গিয়ে যে রফতানি ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে, তার প্রতিবন্ধকতাও দূর করার অঙ্গীকার রয়েছে।

বর্তমানে শতভাগ রফতানি খাতের কারখানার জন্য ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে। কিন্তু রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহকে নানাভাবে ভ্যাট নিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। আইন করে রাখা মুসকের নানারকম ফরমের ব্যবহারের যৌক্তিকতা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন রয়েছে। তদুপরি এই সকল ফরমের ব্যবহার না করায় রাস্তাঘাটে রফতানিমুখী শিল্পের মালামাল পরিবহনে নানা জটিলতা তৈরি করে রফতানিকে বাধাগ্রস্ত করে এবং অবৈধ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে। এ ব্যাপারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাথে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।


বিজ্ঞাপন


বর্তমানে ট্যাক্সেশন পদ্ধতিটি কোনভাবেই বিনিয়োগ ও ব্যবসা বান্ধব নয় এবং ট্যাক্সেশনের মূল চেতনা ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থী দাবি করে এ পদ্ধতির সংস্কারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাথে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ট্যাক্স অ্যাসেসমেন্ট পদ্ধতি সহজ করা ও ট্যাক্সের হার দীর্ঘ সময়ের জন্য স্থির রাখার জন্য এনবিআর -এর সাথে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

গতিশীল উৎপাদন ব্যবস্থা ও লিড টাইম নিশ্চিত করণে স্থলবন্দর দিয়ে পুনরায় সুতা আমদানি চালু করার লক্ষ্যে সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে যৌক্তিক আলোচনার পরিবেশ তৈরি করবে এই প্যানেল।

ব্যংকিং খাতের নানা প্রকার জটিলতা দূর করণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং রফতানিবান্ধব নীতি প্রণয়নে বাংলাদেশ ব্যংক ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা অব্যাহত রাখা।

ইউরোপ-আমেরিকার ওপর নির্ভরতা কমাতে বিশ্বের অপ্রচলিত বাজারে সম্ভাবনা অনুসন্ধান ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে বাজার বহুমুখীকরণের উদ্যোগ নেওয়া। প্রয়োজনে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পণ্য বিপণনে গতিশীলতা আনয়নে চুক্তি সাক্ষর করা।

বৈচিত্র্যময় ও উচ্চ মূল্যের পোশাক প্রস্তুত করতে সরকারের নীতিমালা প্রণয়নে অবদান রাখা।

আধুনিকায়নের মাধ্যমে কারখানাগুলোকে বিশ্বমানে উন্নীত করার ক্ষেত্রে আরএসসি'র প্রণীত জটিল নীতিমালাগুলো সহজ করতে সরকার ও আরএসসি বোর্ডের সাথে দর কষাকষির ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া।

ক্রেতা কর্তৃক অনৈতিক বায়িং প্রাকটিস তথা পণ্যের কম দাম দেওয়া, পণ্য বুঝে নিয়ে মূল্য পরিশোধ না করা, দামে ছাড় দিতে বাধ্য করা, বায়িং হাউস/ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার/শিপিং লাইনের যোগসাজসে মূল্য পরিশোধ না করে মাল ছাড়িয়ে নেওয়া এবং ক্রয়াদেশ বাতিল করার মতো ঘটনা যেন বায়াররা ঘটাতে না পারেন সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের কালো তালিকাভুক্ত করে সর্বমহলে অবহিত করার ব্যবস্থা করা।

বৈদেশিক শুল্কব্যবস্থা, পরিবেশ বিপর্যয়, মহামারি, যুদ্ধাবস্থার মতো বিষয়গুলো প্রায়শই আমদের রফতানি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে। ফলে যেকোনো বৈদেশিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রফতানিখাতকে প্রস্তুত রাখতে দৃঢ় পদক্ষেপ রাখা।

বিকেএমইএ'র বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই সাম্প্রতিক সময়ে শ্রম অসন্তোষ থেকে রক্ষা পেয়েছে নিটওয়্যার খাত। এ ধরনের সফলতাগুলো বহির্বিশ্বে প্রচারের মাধ্যমে খাতসংশ্লিষ্ট ভাবমূর্তি উন্নয়নে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাওয়া। শ্রমিক কর্মচারী মালিক সরকার সকলে মিলে শ্রমিক ও শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি। শ্রমিকদের যেকোনো ন্যায্য দাবির প্রতি বিকেএমইএ'র পূর্ণ সমর্থন এবং একইসাথে অন্যায্য দাবির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করা।

শিল্পখাতে জ্বালানি সংকট নিরসন করে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরসমূহের সাথে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) শিল্পের বিকাশে সহজ শর্তে ঋণ প্রাপ্তি, প্রশিক্ষণ ও বিপণনে সরকারি নীতি নির্ধারণীতে কার্যকর ভূমিকা রাখা।

দেশের রফতানিখাতকে বিশ্ববাজারে আরও শক্তিশালী অবস্থানে নেওয়ার ক্ষেত্রে দেশে বিদেশে প্রয়োজনীয় নীতি প্রণয়নে পোশাক শিল্প পরিবার তথা দেশের বস্ত্রখাতসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে আমরা বিকেএমইএ সরকারের সাথে সহযোগীর ভূমিকা পালন করার প্রত্যয় ঘোষণা করছি। ঢাকাতে বিকেএমইএ'র একটি নিজস্ব ভবন নির্মাণের পদক্ষেপ গ্রহণ করার অঙ্গীকারও করে এই প্যানেল।

এমআই/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর