বাজারব্যবস্থা সংস্কার ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হলে অসাধু ব্যবসায়ীদের পকেট কাটার উৎসব থামানো যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর জন্য বারবারই অনৈতিক কৌশল অবলম্বন করেন। দাম বাড়ানোর চক্রান্ত হলেই তারা সরবরাহ বন্ধ করে দেন। আর বেশি দাম দিলে সয়াবিন পাওয়া যায়। সরকারের সাথে আলোচনার আগেই ব্যবসায়ীরাই সিদ্ধান্ত ঘোষনা করেন, সরকারকে চাপে ফেলে সেই দাবি তারা পূরণ করে সরকার শুধু বৈধতা দেয় মাত্র।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) সংগঠনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
নাজের হোসাইন বলেন, জনগণকে জিম্মি করে ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ ব্যবসায়ীরাই করেছেন। সরকার ব্যবসায়ীদের সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য হচ্ছেন। বিগত সরকারের মতো এসরকারও ব্যবসায়ীবান্ধব বলে প্রচার করে ভোক্তা/সাধারণ জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। আর সব বিষয়ে সংস্কার করা হলেও বাজারব্যবস্থা সংস্কারে কোনো উদ্যোগ না দেবার অর্থ হলো সিন্ডিকেট ভাঙতে সরকারের আগ্রহ নেই।
সয়াবিনের দাম বাড়লেও তার প্রভাব পরিবারে খুব বেশি পড়বে না বলে বাণিজ্য উপদেষ্টা যে মন্তব্য করেছেন সে বিষয়ে তিনি বলেন, সয়াবিন তেলে ৭০ টাকা বেশি লাগলেও একইভাবে চাল, পেঁয়াজ, ডিম ও সবজির দরও সবজি ও অন্যান্য পণ্যে যদি এভাবে বাড়তি টাকা লাগে তাহলে, পরিবারের খরচের লাগাম টানবে কীভাবে? আর বাড়তি টাকা যোগাতে অক্ষম হলে পরিনতি অবশ্যই খারাপ যা খাদ্য মূল্যস্ফীতিকে আরেক দফা উসকে দেবে।
তিনি আশা করেন, রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্যকে করের আওতা বহির্ভূত করা দরকার। সাধারণ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী কোনো বিষয়কে করের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত পরিহার করতে হবে। পরোক্ষ করের মতো বিষয়গুলোকে পরিহার করে প্রত্যক্ষ করের দিকে জোর না দিলে দরিদ্র মানুষের ওপর কর বৈষম্য আরও বাড়বে। বাংলাদেশে এমনিতেই আমদানি শুল্ক ও করের হার অনেকবেশি। অন্তর্বর্তী সরকারকে শুল্ক ও করনীতির পুনর্মূল্যায়ন করে যেসব পণ্যের দাম বাড়ালে দরিদ্র ভোক্তাদের ওপর বেশি চাপ পড়ে, সেসব পণ্য শুল্ক–কর আওতামুক্ত রাখতে হবে। কোভিড পরবর্তী সময় থেকে এখনো কর্মসংস্থান ও মজুরি বৃদ্ধির হার খুব কম। সে কারণে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে আসেনি। সাধারণ মানুষের আয়রোজগার পরিস্থিতি ভালো নয়। সিদ্ধান্তের আগে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর আগাম ঘোষণা দেয়ায় মজুতদাররা ফায়দা লুটছে, আর এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে তিরস্কার ও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয় না বলেই ব্যবসায়ীরা বারবার বাজারকে অস্থিতিশীল করে রাখে এবং কৃত্রিম সংকটও তৈরি করে মানুষের পকেট কাটে।
প্রসঙ্গত, বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম যখন স্থিতিশীল ও নিম্নমুখী সেখানে বাংলাদেশে ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ভোজ্যতেলের আমদানি পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ১৫ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ, স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়েও ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধার মেয়াদ শেষ হওয়ায় এবং আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে এক লাফে ১৮ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দেন। ভোজ্যতেলের কর অব্যাহতি সুবিধার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরদিন ১ এপ্রিল থেকে এই দাম কার্যকরের ঘোষণা দেন ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন মিলারদের এই দাবিকে স্বীকার করে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা এবং পাম তেলের দাম ১২ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা মেনে নেন।
বিজ্ঞাপন
টিএই/জেবি