শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

সিএসআর খাতে ব্যাংকগুলোর ব্যয় কমছেই

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৫৩ এএম

শেয়ার করুন:

সিএসআর খাতে ব্যাংকগুলোর ব্যয় কমছেই

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) ব্যয় দিন দিন কমছেই। সর্বশেষ ২০২৪ সালে আগের বছরের চেয়ে ব্যয় কমেছে প্রায় ৩৪ শতাংশ। গত বছর ব্যাংকগুলোর সার্বিক সিএসআর ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৬১৬ কোটি টাকা, যা আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ সময়ে অন্তত ছয়টি ব্যাংক সিএসআর খাতে কোনো অর্থ ব্যয় করেনি।

এ ছাড়া শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশ ও জলবায়ু খাতে ব্যয়ের নির্দেশনা মানেনি অধিকাংশ ব্যাংক। তবে বরাবরের মতো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপখাতে সর্বোচ্চ ৪৭ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে। ব্যাংকাররা বলছেন, বর্তমানে ব্যাংকিং খাত বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। যার মধ্যে আছে- উচ্চ খেলাপি ঋণ, তারল্য ঘাটতি ও সুশাসনের অভাব। এসব কারণে নিট মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হচ্ছে কম। ফলে সিএসআর ব্যয়ও কমেছে।


বিজ্ঞাপন


ব্যাংকগুলো প্রতি ষান্মাসিক ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সিএসআর ব্যয়ের তথ্য পাঠায়। এক্ষেত্রে কোন খাতে কত টাকা খরচ হয়েছে তার পরিসংখ্যানও পাঠানো হয়। তবে খাতগুলোর সুবিধাভোগী কারা, সে ব্যাপারে কোনো রিপোর্টিং করা হয় না। সূত্রগুলো বলছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংকগুলের সিএসআর ব্যয় আবর্তিত হয় ‘প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল’ ঘিরে। যে কোনো উপলক্ষ্য কিংবা দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাংক চেয়ারম্যান কিংবা এমডিরা সিএসআরের অর্থ জমা দিতেন গণভবনে গিয়ে। আর এই খরচের অর্থই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে দেখাতো ব্যাংকগুলো। ফলে এ উপখাতে কয়েক বছর ধরে সর্বোচ্চ সিএসআর ব্যয় হয়। তবে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপখাতে ব্যাংকগুলোর ব্যয়ের পরিমাণ কমতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকের সিএসআর ব্যয়ের অন্তত ৩০ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করতে হবে। স্বাস্থ্য খাতেও একই পরিমাণ (৩০ শতাংশ) অর্থ ব্যয় করতে হবে। এ ছাড়া ২০ শতাংশ করতে হবে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা খাতে। আর আয়বর্ধক কর্মকাণ্ড, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো উন্নয়ন, খেলা ও বিনোদনে ২০ শতাংশ ব্যয় করতে হবে। এর মানে নীতিমালায় প্রথম তিনটি খাতে সবচেয়ে বেশি সিএসআর খরচের নির্দেশনা রয়েছে। আর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সর্বোচ্চ ২০ শতাংশের বেশি ব্যয়ের সুযোগ নেই।

ব্যাংকগুলোর ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বরভিত্তিক সিএসআর ব্যয়ের তথ্য নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্ট। ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছরের শেষ ছয় মাসে ব্যাংকগুলো মোট সিএসআর ব্যয় করেছে ৩০৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। আগের ছয় মাসে করেছিল ৩০৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। ফলে আগের ছয় মাসের তুলনায় শেষ ছয় মাসে সিএসআর ব্যয় কমেছে প্রায় ২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বা দশমিক ৭৮ শতাংশ। সব মিলে গত বছর ব্যাংকগুলোর সার্বিক সিএসআর ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৬১৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, এটি গত আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে সর্বনিম্ন সিএসআর ব্যয় ছিল ২০১৬ সালে। ওই বছর ব্যাংকগুলোর ব্যয়ের পরিমাণ ছিল মাত্র ৪৯৭ কোটি টাকা। এর পর থেকে প্রতিবছরই সিএসআর ব্যয় বাড়তে থাকে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২২ সালে ব্যাংকগুলো এ খাতে সর্বোচ্চ ১ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা ব্যয় করেছিল। তবে ২০২৩ সালে সেটি কমে দাঁড়ায় ৯২৪ কোটি টাকা। আর গত বছর আরও কমে দাঁড়িয়েছে ৬১৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকায়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর মোট সিএসআর ব্যয়ের মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপখাতেই করা হয়েছে ২৮৯ কোটি টাকা বা ৪৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। এ সময়ে শিক্ষা খাতে করা হয়েছে মাত্র ১০৮ কোটি ১১ লাখ টাকা বা ১৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। স্বাস্থ্য খাতে করা হয়েছে ১৫৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বা ২৫ দশমিক ১৬ শতাংশ। এ ছাড়া পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন খাতে করা হয়েছে ২২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বা ৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ।


বিজ্ঞাপন


প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ২০২৪ সালে ছয়টি ব্যাংক সিএসআর খাতে কোনো ব্যয় করেনি। এগুলো হলো- বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক।

টিএই/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর