শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশ ঘোষণার ক্ষেত্রে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কেবলমাত্র বিবেচ্য পঞ্জিকাবর্ষের মুনাফা হতে নগদ লভ্যাংশ প্রদান করা যাবে। পূর্বের পুঞ্জীভূত মুনাফা হতে কোনো নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করা যাবে না।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রজ্ঞাপনে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে যে, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঘটায় সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিং খাতে সৃষ্ট চাপ মোকাবেলা করে ব্যাংকগুলো যাতে দেশের অর্থনীতিতে যথার্থ অবদান রাখতে পারে সেই উদ্দেশ্যে ব্যাংকগুলোর মুনাফা যথাসম্ভব অবন্টিত রেখে মূলধন কাঠামো অধিকতর শক্তিশালী ও সুসংহত করার মাধ্যমে পর্যাপ্ত তারল্য বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। যে কারণে ২০২১ সালে ৭ ফেব্রুয়ারি ও ২০২১ সালের ১৬ মার্চ দু’টি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশ ঘোষণার নীতিমালা জারি করা হয়। যা এখনও কার্যকর রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশের ব্যাংক খাতের সার্বিক পরিস্থিতি, আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা, ব্যাংকসমূহের আর্থিক সক্ষমতা এবং ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের রিটার্নের বিষয়টি সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করে ব্যাংকসমূহের শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশ বিতরণের ক্ষেত্রে কিছু নীতিমালা অনুসরণের নির্দেশ দেওয়া হলো।
নীতিমালাগুলো হলো- কেবলমাত্র বিবেচ্য পঞ্জিকাবর্ষের মুনাফা হতে নগদ লভ্যাংশ প্রদান করা যাবে; পূর্বের পূঞ্জীভূত মুনাফা হতে কোনো নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করা যাবে না। সিআরআর ও এসএলআর ঘাটতিজনিত আরোপিত দণ্ড সুদ ও জরিমানা অনাদায়ী থাকা যাবে না। ব্যাংকের শ্রেণিকৃত ঋণ ও বিনিয়োগের হার মোট ঋণ ও বিনিয়োগের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশের বেশি হবে না।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে- ঋণ, বিনিয়োগ ও অন্যান্য সম্পদের বিপরীতে কোনো প্রকার সংস্থান ঘাটতি থাকা যাবে না। প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো প্রকার ডেফারেল সুবিধা গ্রহণ করা হলে তা বহাল থাকা অবস্থায় কোনো প্রকার লভ্যাংশ ঘোষণা করা যাবে না।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, পঞ্জিকাবর্ষের মুনাফা হতে নগদ লভ্যাংশ প্রদানকারী ব্যাংকগুলোর ঘোষিত লভ্যাংশের পরিমাণ কোনোক্রমেই পরিশোধিত মূলধনের ৩০ শতাংশের বেশি হবে না। যে সকল ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর পর ঝুঁকি ভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ২ দশমিক ৫ শতাংশ ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফারসহ ন্যূনতম ১৫ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করতে সক্ষম হবে, সে সকল ব্যাংক তাদের সামর্থ্য অনুসারে নগদ ও স্টক লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারবে।
বিজ্ঞাপন
এছাড়াও যে সকল ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর পর ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ২ দশমিক ৫ শতাংশ ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফারসহ ন্যূনতম ১২ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি কিন্তু ১৫ শতাংশের কম মূলধন সংরক্ষণ করতে সক্ষম হবে, সে সকল ব্যাংক তাদের সামর্থ্য অনুসারে নগদ ও স্টক লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারবে। প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর পর যে সকল ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে সংরক্ষিত মূলধনের হার ১২ দশমিক ৫ শতাংশের কম তবে ন্যূনতম রক্ষিতব্য মূলধনের এর বেশি হবে সে সকল ব্যাংক, তাদের সামর্থ্য অনুসারে কেবলমাত্র স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে।
এ নীতিমালা অনুসারে লভ্যাংশ প্রদানকারী ব্যাংকগুলোকে লভ্যাংশ ঘোষণার সাত দিনের মধ্যে নির্দিষ্ট ছকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা সিইওর স্বাক্ষরে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশনে একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। এ নীতিমালা ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে সমাপ্ত বছরের লভ্যাংশ ঘোষণার ক্ষেত্র হতে ব্যাংকসমূহের জন্য প্রযোজ্য হবে।
টিএই/এফএ