দুর্বল ব্যাংকগুলোকে পর্যাপ্ত তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, এসব ব্যাংকের পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পাঁচ থেকে দশ বছর সময় লাগতে পারে।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) রাজধানীর ইস্কাটনে ইংরেজি পত্রিকা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের কার্যালয়ে ‘পাথ টু রিকভারি ফর ব্যাংকিং সেক্টর’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
গভর্নর বলেন, ‘প্রতিদিনই আমরা দুর্বল ব্যাংকগুলোর ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে বসছি এবং তাদের কার্যক্রম পর্যালোচনা করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের পর্যাপ্ত তারল্য সহায়তা দিয়েছে। তবে সম্পূর্ণ ক্যাপিটালাইজ হয়ে রিকভার করতে এসব ব্যাংকের পাঁচ থেকে দশ বছর প্রয়োজন। আমাদের দেশে যেসব ব্যাংক খারাপ অবস্থা থেকে উঠে এসে ভালো করেছে, তাদেরও মোটামুটি এমন সময়ই লেগেছে।’
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘প্রতিদিন ব্যাংকগুলোর ক্যাশফ্লোর ডেটা মনিটরিং করা হচ্ছে। এছাড়া পর্যাপ্ত তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রয়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংক এ সহায়তা পেয়েছে।’
ব্যাংক খাতের সংকট কাটাতে নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন যে গতিতে আগাচ্ছি, তাতে আগামী জুলাই মাসের মধ্যেই ব্যাংকিং রেজুলেশন অ্যাক্ট করে ফেলতে পারব। আমাদের পরিকল্পনা অনেক বড় ও উচ্চাভিলাষী। আগামী জুলাই-অগাস্টের মধ্যে আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্ট্র্যাকচারাল রিফর্মের কাজও গুছিয়ে নিয়ে আসব। ব্যাংক খাতে রিফর্মের শুরুটা আমরা করে দিয়ে যাব, বাকিটা পরবর্তীতে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের প্রচেষ্টার ওপর নির্ভর করবে।’
বিজ্ঞাপন
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘যোগ্যতা যাচাই-বাছাই ছাড়া ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের বসিয়ে দেওয়া যাবে না। আমরা এসব চাই না। ব্যাংক স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে কাউকে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করতে পারবে। সেই সুযোগ ব্যাংকগুলোর রয়েছে।’
ব্যাংকে আমানত সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে গভর্নর বলেন, ‘সুদের হার বাড়িয়েও আমানতে প্রবৃদ্ধি করা যাচ্ছে না। খেলাপি ঋণের সমাধান করতে হলেও আমানত বাড়াতে হবে। আমাকে ব্যবসায়ীরা ঋণের সুদের হার কমানোর জন্য চাপ দিবে আর আমি কমিয়ে দেব? অবশ্যই না। মূল্যস্ফীতি কমলে, মার্কেট বেসড ব্যাংকের ঋণ কমলে তখন আমি নীতিসুদহার কমিয়ে দেব। এটা একদম পরিষ্কার। মুদ্রানীতি টাইট থাকবে যতক্ষণ মূল্যস্ফীতি কমবে না।’
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘রাজস্ব ঠিকমতো আদায় করলে আইএমএফের দরকার নেই। নীতি ঠিক করতে পারলে বাইরে থেকে টাকা নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। চলতি অর্থবছর ২৯ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স আসবে। রফতানি আসবে ৫০ বিলিয়ন ডলার। এ দুই মিলে ৮০ বিলিয়ন ডলার আসবে।’
ডলারের মূল্য নিয়ে তিনি বলেন, ‘ডলার দর ঠিক করবে বাংলাদেশ ব্যাংক, এটা দুবাই থেকে ঠিক করলে হবে না। এ বিষয়ে আইএমএফ কিংবা ইউএস অ্যাম্বাসির কাছে কমপ্লেইন করে কোনো লাভ নেই। অন্য কোথাও যেয়ে করলেও লাভ নেই। আমরা এক্সচেঞ্জ রেট ঠিক করব।’
বাংলাদেশ ব্যাংক শক্তিশালী করার কাজ জোরেশোরে চলছে জানিয়ে গভর্নর বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহী। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন করা হচ্ছে। আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুনর্গঠনে কাজ করছি। আমরা চলতি বছরের জুলাই-আগস্টের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে চাই। আমরা এর ভিত মজবুত করতে চেষ্টা করব, তবে সব সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকার করতে পারবে না। যখন পরবর্তী সরকার ক্ষমতায় আসবে, তখনও এই সংস্কার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।’
এমএইচটি

