রোববার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ঢাকা

কমেছে বাণিজ্য ঘাটতি, চলতি হিসাবেও উদ্বৃত্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৮ এএম

শেয়ার করুন:

কমেছে বাণিজ্য ঘাটতি, চলতি হিসাবেও উদ্বৃত্ত

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। এর পাশাপাশি বেড়েছে রফতানি আয়ও। কিন্তু আগের মতো আমদানি হচ্ছে না শিল্পের কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি। সে কারণে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি কমে এসেছে বাণিজ্য ঘাটতিও। গত জুলাই-ডিসেম্বরে বাণিজ্য ঘাটতি ৭৯৩ কোটি এবং চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল ৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন এসব তথ্য উঠে এসেছে।


বিজ্ঞাপন


খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলার-সংকট ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়াকড়ির কারণে দেশে মূলধনী যন্ত্রপাতিসহ সার্বিকভাবে আমদানি কমে গেছে। ব্যবসায়ীরা নতুন করে বিনিয়োগে যাচ্ছেন না। ব্যাংকগুলো এখন আমদানি ঋণপত্র খোলার বিষয়ে বেশ সাবধানী। এতে সার্বিকভাবে বাণিজ্য ঘাটতি কমে গেছে। এটা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক দিক। কারণ ঘাটতি কমাতে পারলে ধীরে ধীরে মূল্যস্ফীতিও কমে আসবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ৬ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলারের বড় ঘাটতি নিয়ে শেষ হয়েছিল ২০২৩-২৪ অর্থবছর। সুখবর হচ্ছে, ব্যালন্স অব পেমেন্টে উদ্বৃত্ত নিয়ে শুরু হয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থবছর। চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) প্রথম ছয় মাস অর্থাৎ ডিসেম্বর শেষে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। কিন্তু এক মাস আগেও চলতি হিসাবে ঘাটতি ছিল। আর এর পরিমাণ ছিল ১৯ কেটি ১০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরে (২০২৩-২৪) চলতি হিসাবে ঘাটতি ছিল ৩৪৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার। হিসাব অনুযায়ী নভেম্বরের চেয়ে চলতি হিসাবে ঘাটতি ১১৭.২৭ শতাংশ কমেছে ডিসেম্বরে।

তথ্য বলছে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ২ হাজার ২৩২ কোটি ৪ লাখ ডলারের পণ্য ও সেবা রফতানি হয়েছে। অন্যদিকে আমদানি হয়েছে ৩ হাজার ২০৮ কোটি ৮ লাখ ডলার। ফলে ৯৭৬ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এক মাস আগে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৭৯৩ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক মাসে ১৮২ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। তবে আগের অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ১০৮৭ কোটি ডলার। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে বাড়লেও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বাণিজ্য ঘাটতি ১০.২২ শতাংশ কমেছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র ও পরিচালক শাহরিয়ার সিদ্দিক বলেন, চলতি হিসাবে ঘাটতি কমা বা উদ্বৃত্ত হওয়া অর্থনীতির জন্য পজেটিভ। গত ছয় মাসে রেমিট্যান্স ২৭.৭ শতাংশ ও রফতানিতে ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও আমদানি প্রবৃদ্ধি ছিল ৩.৫ শতাংশ। অর্থাৎ বিদেশি মুদ্রা বাইরে যাওয়ার তুলানায় বাংলাদেশে প্রবেশের গতি বেশি ছিল। তাই চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত দেখা দিয়েছে। যদিও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে। কিন্তু এই রফতানি কমা কোনো সমস্যা না। নতুন বিনিযোগ থমকে আছে। সে জন্য মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে। অন্যান্য ভোগ্য পণ্য ঠিক আছে। এই সূচক আমাদের অর্থনীতির জন্য ভালো সংবাদ। পাশাপাশি এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।


বিজ্ঞাপন


তথ্যমতে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে মোট ১৩ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যেটা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। কারণ আগের বছরের একই সময়ে মোট রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১০ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার।

সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে (ওভারঅল ব্যালেন্স) ঘাটতিও কিছুটা কমেছে। জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে এই সূচকে ঘাটতি ছিল ৩৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার। কিন্তু গত মাসেও এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২৪৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আর গত বছর (২০২৩) ডিসেম্বর শেষে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে (ওভারঅল ব্যালেন্স) ঘাটতি ছিল ৩৪৫ কোটি ১০ লাখ ডলার।

২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে আর্থিক হিসাবে (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। ২০২৪-২৫ অর্থবছর ঘাটতি নিয়ে শুরু হলেও এখন আর্থিক হিসাব উদ্বৃত্ত। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) আর্থিক হিসাবে ১৩৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত।

টিএই/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর