মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

মুখ লুকিয়ে টিসিবির লাইনে মধ্যবিত্তরা!

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
প্রকাশিত: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮:২৩ এএম

শেয়ার করুন:

মুখ লুকিয়ে টিসিবির লাইনে মধ্যবিত্তরা!

দিন দিন বেড়েই চলছে নিত্যপণ্যের দাম। চাল, ডাল, তেল, চিনি থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম এখন আকাশচুম্বি। জিনিসপত্রের দাম কয়েক গুণ বাড়লেও বাড়েনি সাধারণ মানুষের আয়। এতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে গরিব-নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষদের।

সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। গরিব বা নিম্নবিত্তরা বিভিন্ন জায়গা থেকে কিছু সাহায্য-সহযোগিতা বা সুযোগ-সুবিধা পেলেও পেটে ক্ষুধা রেখেই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে হচ্ছে মধ্যবিত্তদের। না পারছেন কারও কাছে হাত পাততে, আবার না পাচ্ছেন কারও সাহায্য-সহযোগিতা।


বিজ্ঞাপন


এতদিন ভর্তুকি দামে পণ্য বিক্রির প্রতিষ্ঠান টিসিবির গাড়ির পেছনে শুধু নিম্ন আয়ের মানুষেরা ছুটলেও এখন মধ্যবিত্তরাও দাঁড়াচ্ছেন এই লাইনে। তবে অনেকটা মুখ লুকিয়েই লাইনে দাঁড়াতে দেখা গেছে তাদের। টিসিবির ট্রাকের পাশে লাইনে দাঁড়ানো বেশিরভাগই নারী। তাদের অনেকের চেহারায় লজ্জা লজ্জা ভাব লক্ষ্য করা গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন বিশ্বরোডে গাড়ি আসার অনেক আগে থেকেই নির্ধারিত স্থানে অপেক্ষা করছেন অসংখ্য মানুষ। টিসিবির গাড়ি চলে এলে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েন ট্রাকের ওপর। যেন ট্রাক থামানোর তর সইছে না কারও। এরই মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন সবাই। এটা এখানকার নিত্যদিনের চিত্র।

এছাড়াও রাজধানীর অন্যান্য টিসিবি কেন্দ্রগুলোতেও একই চিত্র দেখা গেছে। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধির নির্দেশনা থাকলেও এখানে সেটার কোনো বালাই নেই।

সাধারণত টিসিবির ট্রাকে তেল, চিনি, ডাল ও পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। টিসিবিতে পণ্য কিনতে আসা সবার চাহিদার শীর্ষে সয়াবিন তেল থাকলেও সেটা আলাদাভাবে কেনার কোনো সুযোগ নেই। ক্রেতাকে একসঙ্গে চারটি পণ্যই কিনতে হয়। এর মধ্যে পেঁয়াজ ছাড়া বাকি তিন পণ্যের দামই দিন দিন মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ক্রেতা প্রতিকেজি চিনি ৫৫ টাকা, মসুর ডাল ৬৫ টাকা, সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১১০ টাকা এবং পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৩০ টাকায় কিনতে পারছেন। একজন ক্রেতা সর্বনিম্ন দুই থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি পেঁয়াজ, দুই কেজি ডাল, দুই কেজি চিনি ও দুই লিটার তেল কিনতে পারছেন। ক্রেতারা জানিয়েছেন, তারা মূলত তেল, ডাল ও চিনির জন্যই লাইনে দাঁড়াচ্ছেন।

আরেকজন নাম প্রকাশ না করে বলেন, করোনার পর থেকে আমাদের ঠিকমতো কাজ কাম নাই। আয় রোজগার নাই বললেই চলে। জিনিসপত্রের দাম অনেক। আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি।

আগে সাধারণত নিম্ন আয়ের মানুষদের টিসিবির লাইনে দাঁড়াতে দেখা যেত। কিন্তু এখন অনেক চাকরিজীবী মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকজনকেও টিসিবির লাইনে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন বলেন, আমরা যা বেতন পাই তা দিয়ে আগে সুন্দর মাস চলে যেত। কিন্তু এখন জিনিপত্রের যে দাম তাতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়েছি।

TCB-2

অনেকে আবার দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন। টিসিবির বিক্রেতাদের একজন বলেন, আগে কখনও এত মানুষকে লাইনে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। আগে অনেক সময় আমরা মালামাল নিয়ে অলস সময় কাটাতাম। কিন্তু এখন পণ্য দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অল্প সময়ে মালামাল শেষ হয়ে যাচ্ছে।

টিসিবি সূত্র বলছে, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সারাদেশে ৪৫০টি পয়েন্টে এখন ট্রাকে করে টিসিবির পণ্য বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা শহরসহ ঢাকা বিভাগে ১০১টি পয়েন্টে পণ্য বিক্রি হয়। শুক্রবার বাদে সপ্তাহে প্রতিদিন প্রতিটি ট্রাকে দিনে ৬০০ লিটার সয়াবিন তেল, ৪০০ কেজি ডাল, ৫০০ কেজি চিনি এবং ৫০০ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।

টিএই/জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর