দেশে আবারও বাড়ল গ্যাসের দাম। আবাসিক খাতে গ্যাসের দুই চুলার দাম ৯৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৮০ টাকা করা হয়েছে। আর এক চুলার দাম ৯২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৯০ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহকদের বর্তমান দর ১২ দশমিক ৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮ টাকা করেছে কমিশন। চলতি মাস থেকেই নতুন এই দর কার্যকর হবে।
রোববার (৫ জুন) দুপুর ৩টায় কমিশন কর্তৃক ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে এই দাম ঘোষণা করেন বিইআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবু ফারুক। সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সদস্য মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী, বজলুর রহমান ও কামরুজ্জামান প্রমুখ অংশ নেন।
বিজ্ঞাপন
বিইআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবু ফারুক বলেন, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন, ২০০৩ এর ধারা ২২(খ) ও ৩৪ এ প্রদত্ত দায়িত্ব ও ক্ষমতাবলে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এবং সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের ভোক্তা পর্যায়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যহার পুনঃনির্ধারণের প্রস্তাব সংবলিত আবেদনের বিষয়ে আগ্রহী পক্ষগণকে শুনানি প্রদানপূর্বক সকল তথ্যাদি পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণান্তে উক্ত লাইসেন্সীসমূহ কর্তৃক ভোক্তা পর্যায়ে সরবরাহকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের নতুন এই মূল্যহার পুনঃনির্ধারণ করা হলো।
আবু ফারুক জানান, গৃহস্থালি ব্যতীত অন্যান্য গ্রাহকশ্রেণি যথা: বিদ্যুৎ (সরকারি, আইপিপি ও রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র); ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ (ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট, স্মল পাওয়ার প্ল্যান্ট ও বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র); সার; শিল্প; চা-শিল্প (চা-বাগান); বাণিজ্যিক (হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ও অন্যান্য) এবং সিএনজির ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটারে (মাসিক অনুমোদিত লোডের বিপরীতে) ০ দশমিক ১০ টাকা হারে ডিমান্ড চার্জ প্রযোজ্য হবে।
এ ক্ষেত্রে বিদ্যুতে প্রতি ঘনমিটার ৫ দশমিক ২ টাকা, ক্যাপটিভ ও সার কারখানায় ১৬ টাকা, শিল্পকারখানায় ১১ দশমিক ৯৮ টাকা, মাঝারি শিল্পে ১১ দশমিক ৭৮ টাকা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে ১০ দশমিক ৭৮ টাকা, চা শিল্পে ১১ দশমিক ৯৩ টাকা, বাণিজ্যিক ২৬ দশমিক ৬৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে ফিড গ্যাস সিএনজির দাম, ৪৩ টাকা।
তবে বিদ্যুৎ গ্রাহকশ্রেণির আওতাধীন কোনো বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এবং সার গ্রাহকশ্রেণির আওতাধীন কোনো সার কারখানায় কোনো মাসে গ্যাস সরবরাহকারী/বিতরণ কোম্পানি কর্তৃক ১৫ (পনেরো) দিন বা তার বেশি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হলে উক্ত গ্রাহকের ক্ষেত্রে উক্ত মাসে ডিমান্ড চার্জ প্রযোজ্য হবে না। সিএনজি গ্রাহকের মূল্যহার অপরিবর্তিত থাকবে। এছাড়া প্রতি ঘনমিটার সিএনজির মূল্যহারের মধ্যে ফিড গ্যাসের মূল্যহার ৩৫ টাকা এবং অপারেটর মার্জিন ৮ টাকা অন্তর্ভুক্ত।
বিজ্ঞাপন
বিইআরসির শীর্ষ এই কর্মকর্তা বলেন, এ আদেশ বিল মাস জুন, ২০২২ থেকে প্রযোজ্য ও কার্যকর হবে এবং পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। প্রি-পেইড মিটার গ্রাহকগণ যথাশিগগিরই নতুন মূল্যহার অনুযায়ী তাদের প্রি-পেইড কার্ড হালনাগাদ করে নেবেন।
এর আগে চলতি বছরের মার্চ মাসের শেষের দিকে গ্যাসের প্রস্তাবিত দামের ওপর গণশুনানি করেছে বিইআরসি। কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবের ওপর ২১ থেকে ২৪ মার্চ বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের উদ্যোগে চার দিনব্যাপী ওই গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
গণশুনানিতে বিতরণ কোম্পানিসহ পেট্রোবাংলা ও গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) ১১৭ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়। কিন্তু কমিশন গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবে তেমন কোনো যৌক্তিকতা পায়নি। তবে বিইআরসি কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি ২০ শতাংশ দাম বৃদ্ধির পক্ষে মতামত দেয় গণশুনানিতে।
সবশেষ ২০১৯ সালের জুন মাসে ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হয়। এ সময় আবাসিকে দুই চুলার দাম ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৭৫ টাকা করা হয়েছে। আর এক চুলার দাম ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
টিএই/আইএইচ

