বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে প্রকাশিত শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, গত ১৫ বছরে বিদ্যুৎকেন্দ্রের (গ্যাস ও কয়লা) অতিরিক্ত অব্যবহৃত ক্ষমতা পরিশোধের কারণে ৩৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি পেমেন্ট করা হয়েছে।
রোববার (১ ডিসেম্বর) শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে শ্বেতপত্রটি জমা দেওয়া হয়। এরপর, অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে শ্বেতপত্র কমিটি সংবাদ সম্মেলন করে এই তথ্য তুলে ধরে।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১০-১১ থেকে ২০২৩-২৪ সালের মধ্যে বেসরকারি খাতে মোট ক্যাপাসিটি পেমেন্টের পরিমাণ ছিল প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। তবে, পুরো সিস্টেমের সামগ্রিক প্ল্যান্ট ফ্যাক্টর (ব্যবহৃত ক্ষমতার শতাংশ) গত পাঁচ বছরে ৪২ শতাংশ থেকে ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত ছিল, যা একটি অদক্ষ সিস্টেমের প্রকাশক।
এতে বলা হয়, রক্ষণাবেক্ষণ বৃদ্ধি, তাৎক্ষণিক ক্ষমতা হ্রাস ও জ্বালানির সঠিক সরবরাহ নিশ্চিত করলে ৬৫ শতাংশ ব্যবহৃত ক্ষমতা অর্জন করা সম্ভব ছিল।
শ্বেতপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালে ১০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ছয়টি এইচএসডি-ভিত্তিক আইপিপি (স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী) প্ল্যান্টের জন্য ৫ বছরের চুক্তি করা হয়, যার রেফারেন্স ক্যাপাসিটি পেমেন্ট ছিল মাসে প্রায় ২০ ডলার/কিলোওয়াট। কিন্তু, চুক্তির পুরো সময়কালে এসব প্ল্যান্টের কোনোটি গড়ে ১০ শতাংশ ক্ষমতার বেশি সচল হয়নি, ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াই এক হাজার মেগাওয়াটের জন্য ৯০ শতাংশ ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দেওয়া হয়েছে।
এই প্ল্যান্টগুলো মূলত জরুরি অবস্থায় ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত ছিল, যা হেভি ফুয়েল অয়েল (এইচএফও) প্ল্যান্টের মাধ্যমে পরিচালিত হতে পারত।
বিজ্ঞাপন
শ্বেতপত্রে সমালোচনা করা হয়েছে যে, এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনা ও গোপন লেনদেনের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। এর ফলে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের লাভজনক সমঝোতায় পৌঁছানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে।
২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিশেষ বিধান আইনের আওতায় দেওয়া চুক্তি অনুযায়ী, এইচএসডি ও এইচএফও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো যথাক্রমে ১৫ হাজার ৫৫১ কোটি ও ৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি পেমেন্ট পেয়েছে। গত পাঁচ বছরে এইচএসডি ও এইচএফও প্ল্যান্টের গড় প্ল্যান্ট ফ্যাক্টর ছিল যথাক্রমে মাত্র ৩২ শতাংশ এবং ৯.২২ শতাংশ।
যদি ন্যূনতম ৬৫ শতাংশ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টর অর্জন করা যেত, তবে এসব তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অতিরিক্ত ১০ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি পেমেন্ট পেত।
২০১০-১১ অর্থবছরে রেন্টাল প্ল্যান্টগুলোর জন্য দেওয়া চুক্তির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৫ শতাংশ স্ট্যান্ডার্ডের বিপরীতে এসব প্ল্যান্ট ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা অর্জন করেছে, যা মোট ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি।
বিদ্যুৎ চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিদ্যুৎ ব্যবহার হোক বা না হোক, ক্যাপাসিটি পেমেন্ট পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক। এই ধরনের চুক্তিগুলি কখনও কখনও মাসিক ডেটা প্যাকেজগুলোর সঙ্গে মেলানো হয়ে থাকে। ফলে, পুরো ব্যবস্থাটি একটি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) আওতায় গ্যারান্টিযুক্ত অর্থ পরিশোধের আশ্বাস প্রদান করে।
এভাবে, ক্যাপাসিটি পেমেন্টের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বাজারে অতিরিক্ত পরিমাণ অর্থ প্রদান করা হয়েছে, যার ফলে দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হয় এবং ভাসানো হয়েছে ভুতাপেক্ষ অর্থের মাধ্যমে।
তেলভিত্তিক ভাড়া প্ল্যান্টগুলোর জন্য গড় বার্ষিক প্ল্যান্ট ফ্যাক্টর বা সক্ষমতা ব্যবহার ৫০ শতাংশ এর নিচে রয়েছে, যা বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বিখ্যাত হলেও অপ্রয়োজনীয় প্ল্যান্ট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ফলে, ব্যয়বহুল পরিচালনা এবং উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সরকারের অর্থনৈতিক চাপ বাড়াচ্ছে।
এইউ

