বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

ডলার সংকট কাটাতে সরকারের যত উদ্যোগ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৬ মে ২০২২, ০৬:১৬ পিএম

শেয়ার করুন:

ডলার সংকট কাটাতে সরকারের যত উদ্যোগ

সংকটের শুরুটা গত বছরের মাঝামাঝি থেকে। রফতানি আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় অতিরিক্ত মাত্রায় বাড়তে থাকলেও সেই তুলনায় বাড়েনি রেমিট্যান্সের প্রবাহ। এতে ডলারের সংকট তৈরি হয়। সংকট বাড়তে থাকায় কমতে থাকে টাকার মান। ইতিহাসের সবচেয়ে টাকার মান কমে আসে এই সময়ে। বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে ডলার। অনেকে সুযোগ বুঝে মুনাফার আশার ডলার মজুদ করে রাখেন।

এমন পরিস্থিতিতে ডলার সংকট মোকাবেলায় নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোকে ডলার সরবরাহ করা ছাড়াও বিলাসী পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করা, কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ বাতিল করা হয়।এছাড়া রফতানি আয় আনার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর মনোযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি রেমিট্যান্স বাড়ানোর ব্যাপারে ব্যাংকগুলোকে তাগিদ দেওয়া হয়।


বিজ্ঞাপন


সম্প্রতি সরকারি কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত, আধা সরকারি প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের বিদেশ ভ্রমণ বন্ধের নির্দেশ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগের পরিপত্রে বলা হয়, এসব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিলের অর্থে বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ থাকবে।

এছাড়া কম গুরুত্বপূর্ণ আমদানিনির্ভর প্রকল্পের বাস্তবায়ন আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। বিলাস পণ্য আমদানিতে ৭৫ শতাংশ এলসি মার্জিন রাখতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর নিত্যপ্রয়োজনীয় নয়, এমন পণ্যের নগদ মার্জিন নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে ৫০ শতাংশ। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার আশঙ্কা কমবেশি রয়েছে। তাই নীতিগত কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত রিজার্ভ স্বস্তিকর পর্যায়ে না আসে, বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয়ের সব উপায় কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন তারা।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষক গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর বলেছেন,   'ডলারের বাজারে অস্থিরতা কোথায় গিয়ে শেষ হবে বোঝা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রি করেও বাজার স্বাভাবিক রাখতে পারছে না। তাই যেভাবেই হোক আমদানি কমাতে হবে। এ ছাড়া এখন আর অন্য কোনো পথ খোলা নেই। অন্যথায় রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়বে।


বিজ্ঞাপন


এদিকে ডলা‌রের সংকট কাটা‌তে বাংলাদেশ ব্যাংককে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা)।

গত ১৯ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে লেখা চিঠিতে বাফেদার পক্ষ থেকে এসব প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ নি‌য়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের স‌ঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার (২৬ মে) বিকালে তাদের বৈঠ‌কে বসার কথা রয়েছে।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে সব অনুমোদিত ডিলার (এডি) ব্যাংক বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো থেকে ‘একক বিনিময় হারে’ লেনদেন করারও প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

সংগঠনটির প্রস্তাবে মধ্যে অন্যতম হলো, বৈধভাবে পাঠানো রেমিট্যান্সের প্রণোদনা আড়াই শতাংশ থেকে বা‌ড়ি‌য়ে পাঁচ শতাংশ করা, বাজারের চাহিদা বিবেচনা করে ডলার সরবরাহ করা, বাজারের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে ডলার ক্রয়-বিক্রয়ে আন্ত-ব্যাংক বিনিময় হার পুনর্নির্ধারণ করা।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম আরও এক দফা বাড়িয়ে দিয়েছে। সবশেষ সোমবার দর ৪০ পয়সা বাড়িয়ে দেওয়ায় এখন সরকারি হিসাবে ১ ডলার কিনতে লাগবে ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা। যদিও ৯৫ টাকার নিচে এখনো ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে একশ টাকারও বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে ডলার।

এমন পরিস্থিতিতে আয় বাড়াতে বিদেশ থেকে ডলার আনার প্রক্রিয়া উদার করে দিয়েছে সরকার। ফলে প্রবাসী আয় বাবদ দেশে যত পরিমাণ ডলার পাঠানো হোক না কেন, তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করবে না এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো। আবার এর বিপরীতে আড়াই শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনাও দেওয়া হবে। আগে বিদেশ থেকে পাঁচ হাজার ডলার বা পাঁচ লাখ টাকার বেশি আয় পাঠাতে আয়ের নথিপত্র জমা দিতে হতো। 

বাফেদার চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতাউর রহমান প্রধান জানান, দেশে এখন আমদানির জন্য যে পরিমাণ অর্থ বা ডলার খরচ হচ্ছে, তা রফতানি ও প্রবাসী আয় দিয়ে মিটছে না। এর ফলে সংকট তৈরি হয়েছে। এজন্য বাজারে ডলারের সংকট দেখা দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক যে পরিমাণ ডলার বিক্রি করছে, সেটি চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। ফলে প্রতি মাসে প্রায় ১০০ কোটি ডলার ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

এদিকে ট্যাক্স দিয়ে পাচার করা টাকা বৈধভাবে দেশে আনার সুযোগ এবারের বাজেটে রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল।

ডলার সংকটের জন্য এ সিদ্ধান্ত কিনা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই ডলার ক্রাইসিসের জন্য। ডলার আমাদের দরকার। তবে যে ক্রাইসিস বুঝিয়েছে সেটি নেই, আমাদের ফরেন রিজার্ভ ভালো আছে। এখনো ফরেন রিজার্ভে আশেপাশের দেশের তুলনায় আমরা অনেক স্বাভাবিক অবস্থায় আছি। এ ধরনের ক্রাইসিস আমরা আগেও লক্ষ্য করেছি। ২০০১ সালে সেটি আমরা দেখেছি।

বিইউ/এমআর

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর