বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৪, ঢাকা

মৌসুমেও ‘দুষ্প্রাপ্য’ ইলিশ, ভারতে রফতানির প্রভাব দেশের বাজারে!

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২২ এএম

শেয়ার করুন:

মৌসুমেও ‘দুষ্প্রাপ্য’ ইলিশ, ভারতে রফতানির প্রভাব দেশের বাজারে!

ঢাকার মিরপুর ছয় নম্বর বাজারে রাজিয়া সুলতানা ১০০ টাকায় চাষের কই মাছ কিনছেন। পাশের ইলিশের দোকানগুলোতে তাকাতেও পারছেন না। তিনি জানান, “ভরা মৌসুমেও আমি কখনো ইলিশ কিনতে পারিনি।”

রাজিয়া ২০১৪ সাল থেকে ঢাকায় আছেন, তিন সন্তানের লেখাপড়া চালানোর জন্য চায়ের দোকান করেন। তিনি বলেন, “ছোটোখাটো কাজ করে যা পাই, তা দিয়ে ঘরভাড়া আর অন্যান্য খরচ মেটাতে হয়। ইলিশ কিনলে ভাত খাওয়া হবে না।”


বিজ্ঞাপন


এমন অবস্থা শুধু নিম্ন আয়ের মানুষের নয়, মধ্যবিত্তরাও ইলিশ কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। একজন বিক্রেতা বলেন, “এখন যে দাম, তাতে সাধারণ মানুষের পক্ষে একটি বড় ইলিশ কেনাও কঠিন।”

ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে ৫০০-১০০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের গড় দাম ছিল ৫০৫ টাকা, বর্তমানে তা ১৪শ টাকায় পৌঁছেছে। সুপারশপগুলোতে এক কেজি সাইজের ইলিশ ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে ক্রেতারা সবাই ক্ষুব্ধ।

বিক্রেতারা বলছেন, নদীতে ইলিশের পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে দাম বেড়েছে। চাঁদপুরের বাজারে গত সপ্তাহে এক কেজির ইলিশ ১৮০০-১৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এবারের ভরা মৌসুমে ইলিশের সরবরাহ কম এবং চাহিদা বেশি।

জেলেরা জানিয়েছেন, তারা খুব কম ইলিশ ধরতে পারছেন। মোমিন সোহেল বলেন, “এবার একদিনে ১৫ কেজির বেশি ইলিশ ধরতে পারিনি।” তিনি জানান, এক কেজির ইলিশ ২২-২৩শ টাকায় বিক্রি হবে।


বিজ্ঞাপন


সাগরে মাছ ধরার জেলে মুহাম্মদ দুলাল বলেন, “গত বছর আমি ৮০ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেছি, কিন্তু এ বছর ৩৫ লাখ টাকার মাছও বিক্রি করতে পারছি না।”

মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, “এই পরিস্থিতি খুব দুঃখজনক। আমাদের কাজ হলো দেশের মানুষকে ইলিশ খাওয়ানো। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে।”

ভারতে রফতানি ও কূটনীতির প্রভাব
বর্তমানে বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন বাড়লেও এই বছর আহরণ কমে গেছে। গত বছর জুলাই-অগাস্টে ইলিশ ছিল ৮১ হাজার ৮৭৬ মেট্রিক টন, এবারে তা নেমে এসেছে ৫৬ হাজার ২৭৩ টনে। এমন পরিস্থিতিতে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৪৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৫০ টন করে মোট ২৪২০ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানির অনুমোদন দিয়েছে।

ফরিদা আখতার প্রথমে রফতানির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন, কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ৩ হাজার টন ইলিশ রফতানির অনুমোদন দেওয়া হয়। তিনি বলেন, “দাম যে কারণে বাড়ছে, তা খতিয়ে দেখা হবে। আমাদের লক্ষ্য হলো দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা।”

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির জানান, ভারতে বাংলাদেশের ইলিশের চাহিদা রয়েছে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ থেকে প্রথম ইলিশ রফতানি হয়েছিল ১৯৯২ সালে। কলকাতায় ইলিশের খুব ডিমান্ড।”

এছাড়া, রফতানির কারণে স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম ও চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এই রফতানি কূটনৈতিক সম্পর্কের একটি শুভেচ্ছা হিসেবে দেখা যেতে পারে। হুমায়ুন কবির বলেন, “এটি একটি কূটনীতিক বার্তা। আশা করছি, ভারতও এই শুভেচ্ছা ফিরিয়ে দেবে।”

এভাবে, ইলিশের রফতানি এবং দাম বৃদ্ধি স্থানীয় মানুষের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের উচিত এখনই পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে সাধারণ মানুষ ইলিশের স্বাদ থেকে বঞ্চিত না হন। সূত্র: বিবিসি

এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর