বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার: সিন্ডিকেট ভাঙতে চাপ প্রয়োগের পরামর্শ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২১ মে ২০২২, ০৭:৪০ পিএম

শেয়ার করুন:

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার: সিন্ডিকেট ভাঙতে চাপ প্রয়োগের পরামর্শ

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে আবারও সিন্ডিকেট করা হলে অভিবাসন ব্যয় বেড়ে যাবে বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা। এজন্য সিন্ডিকেট ভেঙে বাজার উন্মুক্ত করে দেওয়া দরকার বলে মনে করেন তারা। প্রয়োজনে মালয়েশিয়া সরকারকে চাপ দিয়ে হলেও এটা করার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

শনিবার (২১ মে) বনানী হোটেল শেরাটনে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এমন অভিমত দেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বাজার সিন্ডিকেট বিরোধী মহাজোট। ‌


বিজ্ঞাপন


এসময় বক্তারা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার শ্রমিক পাঠাতে তাদের কল্যাণে ২১ রিক্রুটিং এজেন্সির হাতে শ্রমবাজারের ভার না দিয়ে নিবন্ধিত সব রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। তবে কাজটি করার জন্য প্রয়োজনে মালয়েশিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগের পরামর্শ দেন তারা।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম বিভাগের প্রধান শরিফুল হাসান। ‌

অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে সিন্ডিকেট করার চেষ্টার কথা স্বীকার করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী চাইলে অনেক আগেই সিন্ডিকেট হয়ে যেতো, সেটা হয়নি। উনি (সিন্ডিকেট) চাননি বলেই এখন পর্যন্ত হয়নি, এটা আমি মনে করি।

অভিবাসন ও উন্নয়ন বিষয়ক সংসদীয় ককাসের নির্বাহী কমিটির সভাপতি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, আমি মনে করি আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতার জায়গা হচ্ছে বায়রা শক্তিশালী না। আপনারা প্রচুর মানুষ বিদেশে পাঠিয়েছেন, দেশের চালিকাশক্তিতে অবদান রেখেছেন, কিন্তু নিজেদের সংগঠনের মধ্যে ঐকমত্য আনতে পারেননি কখনও।


বিজ্ঞাপন


বায়রার সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, জনশক্তির এই সেক্টর নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরে নানা রকম ষড়যন্ত্র চলছে। এই সেক্টর ধ্বংস হয়ে গেলে দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না। আজকে শ্রমিকদের স্বার্থে অভিবাসন খাতে যারা কাজ করি, তাদের স্বার্থে একটি অভিন্ন নীতি থাকা প্রয়োজন।

ব্র্যাকের মাইগ্রেশনের প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, গত ৪০ বছরে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ৬-৭ বছর খোলা ছিল। প্রতিবারই দেখা যায় আগের নিয়ম ভুল ছিল, তারা আরও ভালো করতে চায়। ভালো করতে গিয়ে দেখা যায় আরও বেশি দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হয়। মালয়েশিয়ায় যখনই নির্বাচন আসে তখনই বাংলাদেশ থেকে লোক নেওয়ার মাধ্যমে একটা ভালো ব্যবসা করার চেষ্টা করা হয়। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে আবারও চুক্তি হলো কর্মী পাঠানোর। আমরা আবার আশাবাদী হলাম। কিন্তু বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে, আবারও ঘুরে ফিরে সেই সিন্ডিকেটের আলোচনা। আমি জানি না, পৃথিবীর এমন কোনো ঘটনা আছে কি না মালয়েশিয়ার একজন মন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে চিঠি দিয়ে বলে যে, ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির বাইরে লোক নেব না। এটা একটা অদ্ভুত ঘটনা। মালয়েশিয়া অন্যান্য দেশ থেকে যেভাবে কর্মী নেয় আর অন্যান্য দেশ থেকে যেভাবে নেয় পুরো প্রক্রিয়া আলাদা।

সেন্টার ফর এনআরবি’র চেয়ারপারসন সেকিল চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের শ্রমবাজারকে যদি আমরা সুরক্ষা না দিতে পারি বাংলাদেশের অর্থনীতি কিন্তু বিপদজনক অবস্থায় চলে যাবে। আজকে রেমিটেন্স না এলে ডলারের দাম যেটা ১০০ টাকা অতিক্রম করেছে সেটি ১৫০ টাকা হতো। এর পেছনে যারা কারিগর তারাই হচ্ছে এই রিক্রুটিং এজেন্সি। 

বায়রার সাবেক সভাপতি আবুল বাসার বলেন, যারা সিন্ডিকেট করতে চায় তাদের চিহ্নিত করে তা ব্যবস্থা নিতে হবে।

বায়রার সাবেক সভাপতি নূর আলী বলেন, সিন্ডিকেট লাভ না লস সেটা আমাদের ভাবতে হবে। এই সিন্ডিকেট দেশের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না। এই সিন্ডিকেট দিয়ে দেশের কোনো লাভ নাই, সেক্টরের কোনো লাভ নেই।  

বায়রা’র সদ্য বিদায়ী কমিটির মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী বলেন, মালয়েশিয়ার বাজারে এই ২৫ এজেন্সির সিন্ডিকেট চালু না করলে বাজার হারানোর কথা বলা হচ্ছে। সত্য হচ্ছে, মালয়েশিয়ায় কোনো দেশ থেকে কর্মী যাচ্ছে না। সেখানে আমাদের দেশের কর্মী ছাড়া মালয়েশিয়ার সামনে পথ নেই। মালয়েশিয়ায় আমাদের কর্মীর ব্যাপক চাহিদা আছে। কিন্তু মাঝখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি কিছু মানুষ নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য এই শ্রমবাজার নষ্ট করছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে যাতে কোনো চক্র এই বাজারে অস্থিরতা তৈরি করতে না পারে।

এমআইকে/জেবি

 

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর