শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘গরম’ হচ্ছে মসলার বাজার

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২০ মে ২০২২, ০৫:৩৯ পিএম

শেয়ার করুন:

‘গরম’ হচ্ছে মসলার বাজার
ছবি: ঢাকা মেইল

পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজারের ‘বিসমিল্লাহ’ মসলাঘর এক নামেই সবাই চেনেন। কারণ, এই দোকানে মিলে সব ধরণের মসলা। পাইকারি বিক্রি হওয়া দোকানটিতে মধ্যবয়স্ক এক লোক ১০ টাকার এলাচ কিনতে চাইলে অপারগতা প্রকাশ করেন দোকান মালিক ইজাজুল হক ইমন। পরে ২০ টাকার এলাচ কিনতে চান সেই ক্রেতা। কিন্তু দামী এই মসলা এত অল্প টাকার দেওয়া সম্ভব না জানার পর নিজের কপাল নিজে চাপড়ে বাজার থেকে বের হয়ে যান লোকটি!

একজন ক্রেতার এমন চলে যাওয়ার বিষয়টি দাগ কাটে ইমনের মনে। মনোকষ্টে দোকান বন্ধ করে গ্রামে ফিরে যাওয়ার চিন্তাও করেন এই যুবক। শুক্রবার (২০ মে) মসলার বাজার নিয়ে কথা বলার সময় এই অভিজ্ঞতার কথা যখন বলছিলেন অনেকটা চোখ ছলছল করছিলো বিসমিল্লাহ মসলাঘরের এই কর্ণধারের।


বিজ্ঞাপন


মসলার বাজারও ধীরে ধীরে খারাপ হচ্ছে জানিয়ে ইমন বলেন, ‘প্রতিদিনই অন্যসব পণ্যের মতো মসলার দাম বাড়ছে। সবশেষ কেনা জিরা কেজিপ্রতি ২৫ টাকা দাম বেড়েছে। দারুচিনি ঈদের সময়ের তুলনায় ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত কেজিতে বেড়েছে। পরিস্থিতি বলতেছে, কোরবানির ঈদের আগে আরেক দফা দাম বাড়বে।’

বাজারের একাধিক বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মসলার বেশি চাহিদা থাকে কোরবানির ঈদে। তাই ওই সময় বাজার এখনকার থেকে বেশ চড়া থাকবে- এমন আশঙ্কা তাদের। রাজধানীর মৌলভীবাজারসহ যেসব জায়গা থেকে পাইকারি মসলা কিনে আনা হচ্ছে, সেখান থেকে এমন ইঙ্গিতও মিলেছে।

রাজধানীর রায়সাহেব বাজার ও সেগুন বাগিচা বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, রমজানের পরে ধীরে ধীরে বাড়ছে সব ধরণের মসলার দাম। ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা পর্যন্তও কেজিতে বেড়েছে মসলার দাম।


বিজ্ঞাপন


দোকানিরা বলছেন- ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া নতুন করে দাম বাড়ানোর পেছনে কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামনে টাকার মান আরও কমলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।

তারা বলছেন, এখন যে দাম বেড়েছে তা আরও ছাড়িয়ে যাবে কোরবানির কাছাকাছি সময়ে। কারণ, ডলারের দাম বাড়ায় নতুন করে যেসব পণ্য আমদানি হবে তাতে খরচ বেশি পড়বে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) রাজধানীর বাজারের ৩২ ধরনের খাদ্যপণ্যের দামের ওঠা-নামার হিসাব রাখে। সংস্থাটির গত এক মাসেরও তথ্য বলছে, বেশকিছু মসলার দাম আগের থেকে বেড়েছে।

সংস্থাটির তথ্য বলছে, একমাসের ব্যবধানে বাজারে ৩২ খাদ্যপণ্যের মধ্যে বেড়েছে ১৯টির দাম। কমেছে শুধু একটি পণ্যের দাম। আর স্থিতিশীল রয়েছে ১২টির।

এক মাসের ব্যবধানে চাল, আটা, ময়দা, সয়াবিন তেলের সঙ্গে রসুন, শুকনা মরিচ, হলুদ, আদা, গুড়া দুধের দাম বেড়েছে। মসলার মধ্যে জিরা, তেজপাতা, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, ধনিয়ার দাম বেড়েছে- এমন তথ্য টিসিবির।

বিসমিল্লাহ মসলাঘরের মালিক জানান, ঈদের সময় যে জিরার কেজি ৩৭৬ টাকা ছিল। গত বুধবার (১৮ মে) পাইকারি বাজার থেকে কিনতে হয়েছে ৪০৩ টাকা দিয়ে। আর ৩৮৫ টাকার দারুচিনির কেজি এখন মৌলভীবাজারে ৪২০ টাকা।

মানভেদে বাজারে কেজিপ্রতি ১৬শ’ থেকে ২৪শ’ টাকা পর্যন্ত এলাচ পাওয়া যায় জানিয়ে তিনি বলেন, এই মসলাটিতেও গত কয়েকদিনের ব্যবধানে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। এছাড়া ৩৬৫ টাকা কেজির কিসমিস এখন ৪০০ টাকা দিয়ে পাইকারি কিনতে হচ্ছে। আর লবঙ্গ কিনতে হচ্ছে এক হাজার টাকা কেজি দরে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব ধরণের বাদামের দামও বাড়তি। ৬৭০ টাকা কেজির কাঠবাদাম এখন ৭০০ টাকায় পাইকারি কিনতে হচ্ছে। আর কাজু বাদামের কেজি ৭৯০ টাকা থেকে বেড়ে ৮২০, কোথাও আবার ৮৫০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, বাদাম জাতীয় পণ্যের যখন এমন অবস্থা তখন আগের থেকে ঝাঁঝ বেড়েছে গোল মরিচের। ৫৫০ টাকা কেজির গোল মরিচ এখন পাইকারি কিনতে হচ্ছে ৬শ’ টাকা দিয়ে। আর এক হাজার টাকার জায়ফল এক হাজার ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে পাইকারি দোকানে।

Market Price

অন্যসব নিত্যপণ্যের মতো মসলার বাজারে যখন উত্তাপ বাড়ছে তখন ক্রেতারা নিরুপায়। বাজার করতে এসে প্রয়োজনের থেকেও কম কিনে বাসায় ফিরছেন মনোকষ্ট নিয়ে।

সেগুনবাগিচা কাঁচা বাজারের ক্রেতা শফিকুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘দাম বাড়েনি এমন একটা জিনিসও বাজারে নেই। আপনিই বলুন সব কিছুই কি বিদেশ থেকে আসছে? তাহলে কেন বাড়বে দাম? এসব যাদের দেখার তারা কোথায়?’

নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে বেসরকারি এই চাকরিজীবী যখন ক্ষোভের কথা বলছিলেন, তখন পাশে দাঁড়ানো আরেকজন বললেন, কোনো মনিটরিং কাজে আসবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা মানুষ হিসেবে ভালো না হবো। ভালো হলে কোথাও তেল নেই, তারমধ্যেও লাখ লাখ লিটার তেল উদ্ধার করা লাগতো না।

যৌক্তিক কারণ ছাড়া পণ্যের দাম বাড়ানোর অভিযোগ আছে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। অধিক মুনাফার বিষয়টিও আলোচনায় আসে। কখনও কখনও মধ্যস্বত্বভোগীদেরও দৌরাত্ম্যে পণ্যের দাম বাড়ার অভিযোগ ওঠে।

সেগুনবাগিচার দোকানি সেলিম উদ্দিন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম কারা কীভাবে বাড়ায়, সবাই কম-বেশি জানে। জেল-জরিমানাও হয়। কিন্তু যারা খারাপ তাদের অভ্যাস তো যায় না।’

বিইউ/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর