রোববার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

কেমন বাজেট চান ব্যবসায়ীরা

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
প্রকাশিত: ০৪ জুন ২০২৪, ০৮:২৭ এএম

শেয়ার করুন:

উৎসে করা কমানোসহ বিনিয়োগবান্ধব বাজেট চান ব্যবসায়ীরা

দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আকারের বাজেট উত্থাপন করতে যাচ্ছে সরকার। নতুন মেয়াদে সরকার গঠনের পর এটাই হবে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম বাজেট। আগামী ৬ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, যা হবে অর্থমন্ত্রী হিসেবে তার প্রথম বাজেট।

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী এরই মধ্যে ধারণা দিয়েছেন আগামী বাজেট ৮ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে। যেখানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।


বিজ্ঞাপন


আসন্ন বাজেট কেমন হবে তা নিয়ে সব মহলেই আছে নানা কৌতুহল, আলোচনা। অনেকের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে নানা প্রস্তাবনা। কয়েকদিন ধরেই বাজেটকে কেন্দ্র করে যার যার অবস্থান থেকে প্রস্তাবনা দিয়েছেন আসছেন বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা।

আসন্ন বাজেটে ব্যবসার খরচ কমাতে বিশেষ নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।

সংগঠনটির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বাজার তদারকি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, প্রবাসী আয়ের প্রভাব, রপ্তানি বৃদ্ধি, সুদের হার, আর্থিক ও ব্যাংকিং খাতের সংস্কার, কর-জিডিপির অনুপাত বৃদ্ধি, রাজস্ব নীতির সংস্কার, মুদ্রা ও রাজস্ব নীতির মধ্যে সমন্বয়, সর্বস্তরে সুশাসন এবং সর্বোপরি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাই জাতীয় অর্থনীতিতে প্রধান চ্যালেঞ্জ। বিদ্যমান এই চ্যালেঞ্জগুলো বিবেচনায় নিয়ে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সুদৃঢ় করতে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকতে হবে।

আরও পড়ুন

সহনশীল কর ও দীর্ঘমেয়াদী নীতি চান ব্যবসায়ীরা

মাহবুবুল আলম বলেন, আগামী বাজেটে ব্যবসার খরচ কমাতে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। তার জন্য কাস্টমস, কর ও মূসক-এই জায়গায় অটোমেশন করতে হবে। পাশাপাশি জাতীয় লজিস্টিক উন্নয়ন নীতি বাস্তবায়ন করা গেলে তা ব্যবসার খরচ কমাতে সহায়তা করবে। এ ছাড়া শিল্প পরিচালনার ব্যয় কমাতে অগ্রিম আয়করের (এআইটি) হার ধাপে ধাপে কমিয়ে আনা প্রয়োজন। ব্যাংকঋণের সুদের হার যেন না বাড়ে, সেদিকে জোর দিতে হবে। কারণ, সুদের হার বাড়লে দেশে শিল্পায়ন ও বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়। ডলারের দাম নিয়ে ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তা এখনো কাটেনি। ডলারের নির্ধারিত দাম ১১৭ টাকা যেন সব ব্যাংক মেনে চলে, সেটি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তদারকি করতে হবে। এ ছাড়া নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহে বাজেটে নির্দেশনা বা পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন। মূল্যস্ফীতি যাতে নতুন করে না বাড়ে, সেদিকেও নজর দেওয়া জরুরি। উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে মানুষের প্রকৃত আয় কমে যাওয়ায় ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে এফবিসিসিআই। আমরা ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা ১ লাখ টাকা বৃদ্ধি করে সাড়ে ৪ লাখ টাকা, সিনিয়র সিটিজেন ও নারীদের জন্য ৫ লাখ টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করেছি।

বিজিএমইএ: বাজেটে পোশাক শিল্পের রপ্তানির বিপরীতে উৎসে কর ও নগদ সহায়তার ওপর আয়কর হার কমানোসহ বেশ কিছু নীতি সহায়তা চায় বাংলাদেশ পোশাক প্রস্ততকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।

সংগঠনটির সভাপতি এস এম মান্নান (কচি) বলেন, আমরা ২০৩০ সাল নাগাদ পোশাক শিল্প থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্য নিয়েছি। এ লক্ষ্য অর্জনে সরকারের নীতি সহায়তা আমাদের অত্যন্ত প্রয়োজন। এজন্য আমরা আগামী বাজেটে রপ্তানির বিপরীতে উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে আগের ন্যায় ০.৫০ শতাংশ, নগদ সহায়তার ওপর আয়কর কর্তনের হার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ, ইআরকিউরের ওপর আয়কর ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা, ২০২৯ সাল পর্যন্ত ইনসেনটিভ অব্যাহত রাখার সুপারিশ করেছি।

আরও পড়ুন

আগাম কর প্রত্যাহার চান ব্যবসায়ীরা 

তিনি আরও জানান, তৈরি পোশাক খাতের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য ও সেবা ভ্যাটমুক্ত রাখা, অগ্নি ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম আমদানির ওপর কর রেয়াত, এই পণ্যগুলো বিকল বা নষ্ট হলে প্রতিস্থাপনের জন্য রেয়াতি হারে আমদানির সুযোগ দেওয়া, শ্রমিকদের জন্য ফুড রেশনিং বাবদ বিশেষ তহবিল বরাদ্দ দেওয়া, নন-কটন পোশাক রপ্তানি ও বিনিয়োগে সহায়তা প্রদান করতেও সরকারের কাছে সহায়তার জন্য সুপারিশ করেছে বিজিএমইএ। এসব সুপারিশ আগামী বাজেটে প্রতিফলিত হবে বলে মনে করেন বিজিএমইএ সভাপতি।

ডিসিসিআই: বাজেট প্রসঙ্গে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, বাজেটের তিনটি মূল চ্যালেঞ্জ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ধরে রাখা, রাজস্ব ব্যয় সংকোচন করে উন্নয়নমুখী বিনিয়োগের সক্ষমতা বাড়ানো এবং বেসরকারি বিনিয়োগের ওপর চাপ না ফেলে বাজেটের ঘাটতি অর্থায়ন করা। আমরা মনে করি বিদ্যমান অর্থনীতির রূপান্তরের সময়ে রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থাপনার সংস্কার, করজাল বৃদ্ধি, স্থানীয় শিল্পায়ন ও শিল্প খাতের উন্নয়ন, অটোমেশন, সহজ ও ব্যবসাবান্ধব আয়কর ব্যবস্থা, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণ বিবেচনা করা প্রয়োজন।

চামড়া শিল্প: বাজেট নিয়ে বেশ কিছু প্রস্তাবনা দিয়ে চামড়া রপ্তানির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- চামড়াজাত পণ্য ও জুতা রপ্তানিতে সরকার ১৫ শতাংশ নগদ সহায়তা বা প্রণোদনা দেয়। এই প্রণোদনার ওপরে বর্তমানে ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কাটা হয়। আগামী ২০২৪–২৫ অর্থবছরের বাজেটে এই উৎসে কর স্থায়ীভাবে মওকুফের দাবি জানিয়েছেন তারা। আগামী অর্থবছরের বাজেটে বিবেচনার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে বেশ কিছু প্রস্তাব দেয় চামড়া খাতের তিন সংগঠন। তারা চামড়া রপ্তানিতে প্রণোদনার পরিমাণ বাড়ানো, চামড়া প্রক্রিয়াজাতের কাঁচামাল হিসেবে রাসায়নিক আমদানিতে শুল্ক-ভ্যাট কমানোসহ কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছে এই খাতের ব্যবসায়ীরা।

আরও পড়ুন

রাসায়নিক খাতের উন্নয়নে সরকারের সহযোগিতা চান ব্যবসায়ীরা

জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন: ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের জন্য ১৫ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। এর মধ্যে রয়েছে সোনা-রুপার অলংকার বিক্রিতে আরোপিত ভ্যাট হার কমানো, সব জুয়েলারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন বসানো, আমদানি শুল্ক, ভ্যাট কমপ্লায়েন্ট শিল্পের জন্য শুল্ক হার কমানো, হীরা কাটিংয়ে শুল্ক হার কমানো, স্বর্ণ পরিশোধনাগার শিল্পে ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ সুবিধা, সোনার অলংকার প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে আমদানিকৃত কাঁচামাল ও মেশিনারিজের ক্ষেত্রে শুল্ক করের অব্যাহতি, উৎসে কর থেকে অব্যাহতি, ব্যাগেজ রুল সংশোধনের মাধ্যমে পর্যটকদের মাধ্যমে সোনার বার আনা বন্ধ করা, বৈধভাবে সোনার বার, অলংকার, কয়েন রপ্তানিতে রপ্তানিকারকদের ৫০ শতাংশ আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে শুল্ক হার সমন্বয়, চোরাচালানের উদ্ধার করা সোনার ২৫ শতাংশ উদ্ধারকারী সংস্থাগুলোর সদস্যদের পুরস্কার হিসেবে প্রদান।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ: আসন্ন বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য বেশ কিছু কর ছাড় সুবিধার দাবি জানিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। ডিএসইর পক্ষ থেকে আগামী অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত পাঁচটি প্রস্তাব বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে স্টক এক্সচেঞ্জে সিকিউরিটিজ লেনদেন থেকে মূলধনি মুনাফার ওপর নতুন করে করারোপ না করা, তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার কমানো, স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের কাছ থেকে উৎসে কর সংগ্রহের হার কমানো, উৎসে লভ্যাংশ আয়ের ওপর কর চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করা, লভ্যাংশ প্রাপ্তির প্রথম ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত করছাড় এবং তালিকাভুক্ত বন্ড থেকে অর্জিত আয় বা সুদের ওপর কর অব্যাহতি প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছে ডিএসই। পুঁজিবাজার তথা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বিবেচনায় রেখে এসব প্রস্তাব বাস্তবায়নের অনুরোধ জানিয়েছে এক্সচেঞ্জটি।

টিএই/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর