শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

গ্যাসের ফলাফল বাকি রেখেই বিদ্যুতের গণশুনানি কতটা যৌক্তিক?

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
প্রকাশিত: ১৩ মে ২০২২, ০৮:২০ এএম

শেয়ার করুন:

গ্যাসের ফলাফল বাকি রেখেই বিদ্যুতের গণশুনানি কতটা যৌক্তিক?
গ্যাসের ফলাফল বাকি রেখেই বিদ্যুতের গণশুনানি কতটা যৌক্তিক?

দেশে যখন নিত্যপণ্যের দামের উর্ধ্বগতিতে দিশেহারা মানুষ ঠিক সেই মুহুর্তে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির পায়তারা চলছে। বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। সেই প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে গণশুনানির জন্য আগামী ১৮ মে দিন ধার্য করেছে বাংলাদেশ অ্যানার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।

গত মার্চ মাসের শেষের গ্যাসের প্রস্তাবিত দামের ওপর গণশুনানি করেছেন বিইআরসি। কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবের ওপর ২১ থেকে ২৪ মার্চ বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের উদ্যোগে চার দিনব্যাপী এ গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বিতরণ কোম্পানিসহ পেট্রোবাংলা ও গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) ১১৭ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়। কিন্তু কমিশন গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবে তেমন কোনো যৌক্তিকতা পায়নি। 


বিজ্ঞাপন


তবে কমিশনের কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি এসব প্রস্তাব বিশ্লেষণ করে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেয়। কমিশনের আইন অনুযায়ী, শুনানির ৯০ দিনের মধ্যে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের বিষয়ে ঘোষণা দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে হিসেবে যেকোনো সময় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর কমিশন চূড়ান্ত ঘোষণা দিতে পারে। তার পরেও গণশুনানির ফলাফল প্রকাশের আগে ১৮ মে বিদ্যুতের গণশুনানি করা কতটা যৌক্তিক হবে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

বিইআরসির সূত্র জানিয়েছে, ১৮ মে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে গণশুনানির তারিখ নির্ধারিত রয়েছে তার আগেই গণশুনানির ফলাফল প্রকাশ করার একটা চাপ রয়েছে। কেননা বিদ্যুতের দামের সঙ্গে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ইস্যুটি জড়িত। যেহেতু গণশুনানির ফলাফল এখনো চূড়ান্ত হয়নি তাই বিদ্যুতের গণশুনানির জন্য কিছুদিন অপেক্ষা করে যেত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিইআরসির এক শীর্ষ কর্মকর্তা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘গ্যাসের গণশুনানির ফলাফল ঘোষণা ১৮ তারিখের আগেই হবে কি না তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। আমাদের তো একটা সময় চাপ ছিল রোজার মধ্যেই দিতে হবে, ঈদের আগেই দিতে হবে। এখন যদি গ্যাসের গণশুনানির ফলাফল ঘোষণার আগেই বিদ্যুতের গণশুনানি হয় তবে অবশ্যই এর একটা প্রভাব পড়বে। পিডিবি কেন বিদ্যুতের দাম বাড়াতে চায় এই প্রশ্নটা জড়ালো হবে। গ্যাসের দাম ছাড়াই গণশুনানি করতে গেলে তখন শুধু তেলের উপরেই শুনানি হবে। আসলে গ্যাসের দামটা ডিক্লারেসনের আগে আলোচনাটা কমপ্লিটলি জমবে না।’

এদিকে গ্যাসের দাম বাড়া বা কমার বিষয়টি বিইআরসির আওতাধীন বলে মনে করছেন পিডিবি কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে পিডিবির জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমরা আমাদের কথা বিইআরসিকে বলবো। তারা আমাদের কথা শুনবে। সবার কথা শুনবে সে হিসেবে একটা সিদ্ধান্ত হবে। বিদ্যুতের গণশুনানির পর গ্যাসের দাম বাড়লে বা কমলে বিষয়টা কেমন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয় আগাম কিছু বলা যাচ্ছে না। এসব সিদ্ধান্ত বিইআরসির। তারা যেটা ভালো মনে করে সেটা করবে।’


বিজ্ঞাপন


এর আগে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে গণশুনানির জন্য আগামী ১৮ মে দিন ধার্য করে বাংলাদেশ অ্যানার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। রাজধানীর ইস্কাটনের বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিয়াম) ফাউন্ডেশনের শহীদ এ কে এম শামসুল হক খান মেমোরিয়াল (অডিটোরিয়াম) হলে এই গণশুনানি হবে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে বিইআরসি। 

বিইআরসি সচিব খলিলুর রহমান স্বাক্ষতির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ অ্যানার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন-২০০৩ অনুযায়ী বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিদ্যুতের পাইকারি (বাল্ক) ট্যারিফ পরিবর্তনের জন্য কমিশনে প্রস্তাব সংবলিত আবেদন দাখিল করেছে। আবেদন পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য কমিশনের গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন টিম সুপারিশ করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আগ্রহী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে ২৮ এপ্রিলের মধ্যে শুনানি-পূর্ব লিখিত বক্তব্য/মতামত কমিশনে প্রেরণের জন্য অনুরোধ করা হলো। অধিকন্তু, শুনানিতে অংশগ্রহণের নিমিত্ত ২৮ এপ্রিল ২০২২ তারিখের মধ্যে কমিশনে নাম তালিকাভুক্তির জন্যও অনুরোধ করা হলো। তালিকাভুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা উল্লিখিত তারিখে অনুষ্ঠেয় শুনানিতে অংশগ্রহণপূর্বক বাবিউবোর প্রস্তাব সংবলিত বিষয়ে বিশ্লেষণধর্মী তথ্য-উপাত্ত ও সংশ্লিষ্ট দলিলাদি উপস্থাপন করতে পারবেন।

চলতি বছরের ২৪ মার্চ সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘আগামী দিনে কিছু চ্যালেঞ্জ আসছে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য যে পরিমাণ ধৈর্য দরকার, তা সবার কাছে আশা করি। বিদ্যুতের দাম বাড়বে কিনা, সেটা বিইআরসি বলতে পারবে। দাম বাড়ানোর বিষয়ে একটি প্রস্তাব গিয়েছে, এখন বাকিটা বিইআরসির সিদ্ধান্ত। তবে আমরা চাই বিদ্যুতের দাম যতটুকু সম্ভব সহনীয় পর্যায়ে রাখতে।’

টিএই/ একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর