শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

কষ্টেভরা সাখাওয়াতদের জীবন

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ১২ মে ২০২২, ০২:৩৩ পিএম

শেয়ার করুন:

কষ্টেভরা সাখাওয়াতদের জীবন

‘আগে ৫শ ট্যাকার  বাজার করলে কয়দিন চলতো। অহন একই বাজার এক হাজারেও পাই না। একলা কামাই করি, চারজন খাই। এমনে হলে সামনে কি করমু মাথায় ধরে না।’ -দ্রব্যমূল্যের উধ্বগতিতে সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়া রিকশাচালক সাখাওয়াত এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন। 

সাখাওয়াতের ভাষ্য, ২০০ টাকার বেশি তেলের কেজি, ৬০ টাকার নীচে কোনো তরকারি মেলে না। এমন পরিস্থিতি টিকে থাকা তার দায় হয়ে পড়েছে। 


বিজ্ঞাপন


গত দশবছর ধরে গাজীপুরের কোনাবাড়ি থেকে ঢাকায় আসা যাওয়া করে রিকশা চালান কুড়িগ্রামের উলিপুরের সাখাওয়াত। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে তার সংসার।

অন্যদিকে সাভার পরিবহনের চালক শফিকুল ইসলাম প্রায় একযুগ পরিবহন সেক্টরে যুক্ত আছেন। এক সন্তানের জনক শফিকুলের কাছে জীবনযাত্রার খোঁজ নিতে চাইতেই আক্ষেপের সুরে বলেন, জিজ্ঞেস করে কী হবে? ঘরে তো দিনশেষে বাজার করার টাকা জোগাড় করতেই দম বের হয়ে যায়। সারাদিন খাটুনি দিয়ে যা কামাই করতাম তা তো বাড়ে নাই’।

গত কয়েকমাস ধরে ভোজ্যতেলসহ নিত্যপ্রণ্যের বেশিরভাগেরই দাম চড়া। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কড়াকড়িতেও বাজারে তেমন প্রভাব পড়ছে না। পেঁয়াজের রেকর্ড দামের পর এবছর সয়াবিন তেল কিনতে গিয়ে দিশেহারা ভোক্তারা। 

কয়েকদফা বাড়ানোর পর সবশেষ ১৯৮টাকা লিটার নির্ধারণ করা হলেও ২২০ টাকার নীচে কেনা যাচ্ছে না তেল। বাজার থেকে হঠাৎ তেল উধাওয়ের ঘটনাও ঘটেছে।


বিজ্ঞাপন


অন্যদিকে বেশিরভাগ সবজির দামও চড়া। ৫০টাকার নীচে মিলছে না কোনো ধরণের সবজি। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের দিন চলছে কষ্টে। 

বাস চালক শফিকুল ইসলাম জানান, ছোট বাচ্চাদের বায়না থাকে মাছ না হলে মাংসের। কিন্তু ভালো একটা মাছ কিনতে গেলে অন্য কিছু কিনতে টান লাগে। আর গরুর মাংস ৭০০ টাকা হওয়ার পর কেনাই বাদ দিয়েছেন। ব্রয়লার মুরগি এখন ভরসা তার।

অবশ্য নির্ধারিত দামে তেল বিক্রির জন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর দেশজুড়ে অভিযান চালাচ্ছে। তেল জব্দের পাশাপাশি অসাধু ব্যবসায়ীদের জরিমানাও করা হচ্ছে। 

তবে ভোক্তাকে এমন বিপদে ফেলার জন্য পরিমাণ করার পাশাপাশি ব্যক্তি হিসেবে সৎ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কেউ কেউ। 

ঈদের আগে হঠাৎ বাজার থেকে তেল উধাও ও বাড়তি দামে বিক্রির ঘটনা নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী বলেছেন, ব্যবসায়ীরা কথা রাখনেননি। তাদের বিশ্বাস করে সরকার ঠকেছে।'

যদিও মন্ত্রীর এমন বক্তব্যে ব্যবসায়ীদের সম্মানহানি হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের বৃহস্পতিবারের এক অনুষ্ঠানে।

এদিকে নিত্যপণ্যের বাজার যখন চড়া তখন ভাড়া বাসায়ও খরচ বেড়েছে। বছরের শুরুতে বাসা ভাড়াও বাড়িয়ে দিয়েছেন বেশিরভাগ বাড়িওয়ালা। ঝালমুড়ি বিক্রেতা হাবিব জানালেন ভাড়ার চাপে মেস বাসা ছেড়ে দেয়ার কথা।

শরীয়তপুরের নড়িয়ার হাবিব ঢাকা মেইলকে বলেন, আগে কয়েকজন মিলে একটা রুম নিয়ে থাকতাম। ফেব্রুয়ারিতে রুম ভাড়া ৫০০ টাকা বাড়ছে। আগে পানির বিল দিতাম না। খরচ বাড়ছে তাই বাড়িওয়ালা  ৩০০টাকা পানির বিল দেয়ার জন্য বলছে তাই বাসা ছেড়ে বস্তিতে একজনের শেয়ারে থাকেন।

দ্রব্যমূল্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘যে যেমনে পারছে দাম বাড়াচ্ছে। গরীব কেমনে আছে, কেমনে বাঁচবে তা দেখার তো কেউ নাই।’

কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, অস্বীকারের সুযোগ নেই মানুষ কষ্টে আছে। কিন্তু কেন বাজার পরিস্থিতি কেন এমন হছে সেটা খুঁজে বের করা জরুরি। না হলে এমন অবস্থা চলতেই থাকবে। এতে সরকারের ইমেজ নষ্ট হবে৷ তাই সরকারেরই উচিত এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়া। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও অতিমুনাফার লোভ বাদ দিয়ে মানবিক হওয়া উচিত।

বিইউ/ একেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর