রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়ে দেশের শিল্প খাতে। গত বছরের শুরু থেকে বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্দার কারণে দেশেও উৎপাদন কমে যায়। মূল্যস্ফীতি ও ডলার সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়। ফলে ওই সময় ভাটা পড়ে শিল্পঋণে। তবে বছরের শেষের দিকে এসে অর্থাৎ ডিসেম্বর প্রান্তিকে এসে বাড়ে শিল্পঋণ (ইন্ডাস্ট্রিয়াল টার্ম লোন) প্রবাহ। বাড়ে ঋণ বিতরণ ও আদায়। সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে ঋণের স্থিতি (আউটস্ট্যান্ডিং লোন)। ২০২২ সালে ডিসেম্বর প্রান্তিকের চেয়েও বিতরণ বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটিরও বেশি। আবার সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের চেয়ে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা বেশি ঋণ বিতরণ হয় এই খাতে। আদায় হয় দ্বিগুণেরও বেশি। সঙ্গে এক বছরের ব্যবধানে প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকার স্থিতি বেড়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, শিল্পঋণের স্থিতি প্রায় পৌনে চার লাখ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে অর্থাৎ অক্টোবর-ডিসেম্বরে শিল্পঋণ বিতরণ হয়েছে ২৯ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা। তার আগের প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বরে বিতরণ হয়েছিল ১৮ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। সে হিসেবে এই খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১১ হাজার ১২ কোটি টাকা। এছাড়াও তার আগের বছরের একই সময় ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল ১৮ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা। সে তুলনায় ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১০ হাজার ৮০২ কোটি টাকা।
বিজ্ঞাপন
একই সময়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিকে আদায় হয়েছে ৫০ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা। তার আগের প্রান্তিকে আদায় হয়েছিল ২০ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। সে হিসেবে আদায় বেড়েছে ২৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। তার আগের বছরের একই সময়ে আদায় হয়েছিল ১৮ হাজার ৪৭৭ কোটি। আদায় বেড়েছে ৩২ হাজার ১১৬ কোটি টাকা।
বিতরণ আদায়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ঋণ স্থিতিও। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিকে ঋণ স্থিতি ৩ লাখ ৬০ হাজার ৫১ কোটি টাকা। তার আগের প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বরে যা ছিল ৩ লাখ ২৮ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা। সে হিসেবে ঋণের স্থিতি বেড়েছে ৩১ হাজার ৩০৯ কোটি। তার আগের বছরের একই সময়ে ঋণের স্থিতি ছিল ৩ লাখ ৮ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা। সে হিসেবে স্থিতি বেড়েছে ৫১ হাজার ১৩৩ কোটি।
বিজ্ঞাপন
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে জানুয়ারি- ১৪ মার্চ পর্যন্ত ২০ হাজার ৯০৭ কোটি টাকার শিল্পঋণ (ইন্ডাস্ট্রিয়াল টার্ম লোন) বিতরণ করা হয়েছে। আদায় হয়েছে ১৭ হাজার ৮৯৯ কোটি। স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৫১ কোটি টাকা।
অপরদিকে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে সর্বমোট ৬৮ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকার শিল্পঋণ বিতরণ করা হয়। সেই বছরে আদায় হয় ৬৪ হাজার ৮৬২ কোটি টাকায়। স্থিতি ছিল ৩ লাখ ২০ হাজার ৪১০ কোটি টাকা। তার আগের অর্থবছরে (২০২১-২০২২) এই খাতের মোট ঋণ বিতরণ ছিল ৬৮ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। ওই বছর আদায় হয় ৫৮ হাজার ৪৮৮ কোটি। স্থিতি ছিল ৩ লাখ ১৫ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা। ২০২১-২০২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৩ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা বেশি শিল্পঋণ বিতরণ হয়। আদায় বাড়ে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। স্থিতি বাড়ে ৫ হাজার ১১৬ কোটি টাকা।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, কোভিড মহামারির ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল দেশের অর্থনীতি। এর ফলে ঘুরে দাঁড়ায় শিল্প খাত। তার পরে আরেক ধাক্কা আসে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের। ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়। সেটা কাটিয়ে উঠার পরে বাড়ে শিল্পঋণের চাহিদা। তাই বিভিন্ন সেক্টরের মতো শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে। একই সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো হওয়ায় আদায়ও বেড়েছে।
টিএই/এমএইচটি