সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকটের দায় কার

তানভীর আহমেদ
প্রকাশিত: ০৯ মে ২০২২, ০৭:৩২ পিএম

শেয়ার করুন:

ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকটের দায় কার
ফাইল ছবি

আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার অজুহাত দেখিয়ে হঠাৎ দেশের বাজার থেকে উধাও হয়ে যায় সয়াবিন তেল। খুচরা থেকে পাইকারি, সবখানে সংকট দেখা দেয় নিত্যপণ্যটির। কৃত্রিম এই সংকট তৈরি করে সরকারকে দাম বাড়াতে বাধ্য করে অসাধু সিন্ডিকেট। অবশেষে লিটারে ৩৮ টাকা করে বাড়ানো হয় সয়াবিনের দাম। এরপরও বাজারে সংকট কাটেনি সয়াবিনের।

সরকার পক্ষ বলছে, ডিলার ও খুচরা দোকানদাররা এই সংকটের জন্য দায়ী। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। সরকার ও ব্যবসায়ীদের এই দোষারোপের মধ্যে নাভিশ্বাস ওঠেছে জনসাধারণের। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে নিত্যপণ্যটির দাম লিটারে বেড়েছে ৬০ টাকার বেশি।  

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈদুল ফিতরের আগের সপ্তাহে হঠাৎ করে বাজারে সয়াবিন তেলের চরম সংকট দেখা দেয়। যদিও সংকটটি ছিল অসাধু সিন্ডিকেটের তৈরি। কারণ সরকার এর আগে মিল মালিকদের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। উল্টো প্রতি লিটার সয়াবিনের দাম বেঁধে দেয়। হঠাৎ করে প্রয়োজনীয় এই পণ্যের সংকট হওয়ায় বিপাকে পড়েন সাধারণ ভোক্তা। রাজধানী থেকে শুরু সারাদেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই সংকট তৈরি করা হয়।

মিলাররা বলছেন, বাজারে সয়াবিনের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। ডিলার ও পাইকারি বিক্রেতারা কারসাজির মাধ্যমে সংকট সৃষ্টি করেছেন। দাম বাড়ানোর পরও রাজধানীর বিভিন্ন বাজার থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার দোকানেও মিলছে না সয়াবিন তেল। কোথাও কোথাও পাওয়া গেলে সরকার নির্ধারিত বর্ধিত দামের চেয়ে আরও ২০ টাকা বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতারা।

oil2

সয়াবিন তেলের বাজারের অস্থিরতা নিয়ে সোমবার (৯ মে) ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের মূল্য ও পরিবহন ব্যয় বাড়ার কারণে আমাদের দেশেও এর প্রভাব পড়েছে। আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি, যাতে ভোজ্যতেলের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে থাকে এবং বাজারে যাতে তেলের কোনো ঘাটতি না হয়, সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতেও ভোজ্যতেলের দাম আমাদের দেশের তুলনায় বেশি বেড়েছে।


বিজ্ঞাপন


তেলের দাম বৃদ্ধি মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের ব্যর্থতা ঠিক, কারণ বলেছিলাম রমজানকে সামনে রেখে দাম বাড়াবেন না। কিন্তু তারা ঈদের সাত দিন আগে থেকে সেই কথা রাখেননি।

মন্ত্রী বলেন, তেলের সিন্ডিকেটের কোনো নমুনা পাইনি। রিটেইলার, ডিলাররা সুযোগটা নিয়েছে। আমরা চেষ্টা করব রিটেইলার থেকে ডিলার পর্যায়ে কেউ যাতে সুযোগ নিতে না পারে। লাখ লাখ ডিলারের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ নেই।

টিপু মুনশি বলেন, ঈদের কয় দিন আগে থেকে অনেকে তেল ধরে রাখল। কারচুপিটা এখানে হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কীভাবে কিনব, কত টাকায় কিনব, সার্বিক খরচ কত, সেটি বোতলের গায়েই লেখা আছে। এটি কেউ মুছে দিলে জবাবদিহি করতে হবে। আমি তথ্য চেয়ে সাহায্য চেয়েছি। আমি মন্ত্রীকে বলেছি যখন যে কাজে লাগে আমাকে ডাইকেন। আমাদের পয়সার দরকার আছে, তবে আগামী জেনারেশন যাতে ভালো ব্যবসায়ী হয় সেটি দেখছি।

oil3

কনসার্স কনজুমার সোসাইটির (সিসিএস) নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ বলেন, বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে দেশের বাজারে দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। তবে বাজার থেকে হুট করে সয়াবিন কেন উধাও হয়ে যাবে। পলাশ মাহমুদ বলেন, কোনো পণ্য আমদানি করলে কিছু প্রক্রিয়া থাকে। এলসি খোলা থেকে শুরু করে পরিশোধ করে সয়াবিন বাজারজাত করা হয়। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কয়েক মাস সময় লাগে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে কয়েক দফা দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স ও বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। এদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দাম বাড়ানো হয়। আর তেলের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে খুচরা পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেয় সরকার। পরবর্তী সময়ে আমদানি পর্যায়ে ১০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করে দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। দুই মাস পর অর্থাৎ গত ২৮ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়া সরকার পামওয়েল রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এরপরই অস্থিরতা শুরু হয় বাংলাদেশের বাজারে। মাথাচাড়া দেয় অসাধু সিন্ডিকেট।

আগের দামে কেনা তেলের সরবরাহ বন্ধ করে বাজার থেকে উধাও করে দেয় সয়াবিন। এতে বিপাকে পড়েন সাধারণ ভোক্তা। সর্বশেষ বাধ্য হয়ে সরকার দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার সংগঠনটি তেলের নতুন দামের একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। এতে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয় ১৯৮ টাকা। এক বছর আগেও যা ছিল ১৩৪ টাকা। এর আগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি তা নির্ধারণ করা হয় ১৬৮ টাকা। পরে গত ২০ মার্চ লিটারে আট টাকা কমিয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ঠিক করা হয় ১৬০ টাকা।

টিএ/জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর