বিদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমলে আর্থিক হিসাবে রেকর্ড ঘাটতিতে পড়েছে দেশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) আর্থিক হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ সাত বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
রোববার (১০ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনের হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞাপন
তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কড়াকড়িসহ নানা পদক্ষেপে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে আমদানি ব্যয় কমেছে ১৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। এ সময়ে বাংলাদেশের আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৬০২ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে একই সময়ে আমদানিতে ব্যয় হয়েছিল ৪ হাজার ৪০২ কোটি ডলার। অন্যদিকে প্রথম সাত মাসে রফতানি আয় বেড়েছে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ। এ সময়ে রফতানি আয় হয়েছে ৩ হাজার ১৩৯ কোটি ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি আয় হয়েছিল ৩ হাজার ৬৩ কোটি ডলার।
এতে বিদেশের সঙ্গে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমে দাঁড়িয়েছে ৪৬২ কোটি ৮০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে বানিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল প্রায় ১ হাজার ৩৩৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার। যদিও শুধু জানুয়ারি মাসে নতুন করে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে প্রায় ৩১ কোটি ডলার।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমদানি ব্যয় ও রফতানি আয়ে ব্যবধার কমার সঙ্গে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে প্রথম সাত মাসে চলতি হিসাবে ৩১৪ কোটি ৮০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত বজায় রয়েছে। তবে গত অর্থবছরের একই সময়ে চলতি হিসাবে প্রায় ৪৬৪ কোটি ডলারের ঘাটতি ছিল।
সাধারণভাবে কোনো দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝা যায় চলতি হিসাবের মাধ্যমে। আমদানি-রফতানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। তবে ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করতে ঋণ নিতে হয়।
বিজ্ঞাপন
চলতি হিসাবে উদ্বৃত্তাবস্থা বজায় থাকলেও আর্থিক হিসাবে ঘাটতি কমছেই না। উল্টো জানুয়ারি মাসে ঘাটতি বেড়েছে প্রায় ২১১ কোটি ডলার। সবমিলে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে আর্থিক হিসাবে ৭৩৫ কোটি ৪০ লাখ ডলারের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ঘাটতির পরিমাণ ৫২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। যদিও নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি ৮ কোটি টাকা কমেছিল। মূলত গত বছরের ডিসেম্বরে আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছ থেকে ১২০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ সহায়তা এসেছে। ফলে আগের ঋণ পরিশোধের চাপ থাকার পরও আর্থিক হিসাব ঘাটতি কিছুটা কমেছিল।
তবে গত অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে এ হিসাবে মাত্র ৮১ কোটি ডলারের ঘাটতি ছিল। আর্থিক হিসাবে ঘাটতি বৃদ্ধির পেছনে বিদেশি বিনিয়োগ ও ঋণ কমে যাওয়া ও আগের ঋণ পরিশোধের চাপ বৃদ্ধিকে দায়ী করা হচ্ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রথম সাত মাসে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বেড়েছে ৮ দশমিক ২০ শতাংশ। এ সময়ে আগের নেওয়া ঋণ পরিশোধ বেড়েছে প্রায় ২৬ দশমিক ২৩ শতাংশ। এ সময়ে নিট এফডিআই কমেছে ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। নিট পোর্টফোলিও বিনিয়োগও ঋণাত্মক ধারায় রয়েছে, এর পরিমাণ ১০ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
এদিকে আর্থিক হিসাবে বড় ঘাটতি বজায় থাকায় প্রথম ৭ মাসে সার্বিক ভারসাম্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪৬৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩৪৫ কোটি ১০ লাখ ডলার। আর গত অর্থবছরে একই সময়ে এই হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৭৩৮ কোটি ডলার। অর্থাৎ মাসের ব্যবধানে সার্বিক ভারসাম্যে ঘাটতি বাড়লেও সাত মাসের হিসাবে কমে এসেছে।
টিএই/এএস