পবিত্র রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বুধবার দুপুরে রাজধানীতে এফবিসিসিআই আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এমন আশ্বাস দেন মিল মালিক, আড়তদার, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও মালিকরা।
রমজানে নিত্যপণ্যের উৎপাদন, আমদানি, মজুত, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। মতিঝিলে এফবিসিসিআই আইকন ভবনে আয়োজিত সভায় বড় ভোগ্যপণ্য কোম্পানির প্রতিনিধি, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী, ঢাকার বিভিন্ন বাজার কমিটির নেতা, বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রতিযোগিতা কমিশনসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম।
বিজ্ঞাপন
এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘রমজান মাস ইবাদতের মাস। আপনারা সারা বছর ব্যবসা করেন, রমজান মাসেও করবেন। পৃথিবীর অন্য দেশগুলোতে উৎসব উপলক্ষ্যে ছাড় দেওয়া হয়। আমাদের দেশেও তেমন হতে হবে। কোনো ব্যবসায়ী পণ্যের বেশি দাম রাখবেন না। আপনারা রমজান মাসে ন্যায্য লাভ করেন। প্রধানমন্ত্রী কিন্তু এ বিষয়ে সতর্ক আছেন। তাই সবাইকে সাবধান হতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, পাইকারি বাজার থেকে খুচরা পর্যায়ে পণ্যের মূল্যের ক্ষেত্রে যাতে অস্বাভাবিক পার্থক্য না হয় সেজন্য মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারী ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে কেউ যাতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়াতে না পারে সেজন্য বিভিন্ন বাজার সমিতির নেতাদের সতর্ক থাকতে হবে।
অসৎ ব্যবসায়ীর পক্ষে এফবিসিসিআই কথা বলবে না জানিয়ে সভাপতি বলেন, রমজানে বাজার মনিটরিং পুলিশ দিয়ে করানো হোক তা চাই না। বাজার কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনিটরিং করলেই হয়। এটা না করলে সরকারিভাবে হয়রানির শিকার হতে হবে। অসৎ ব্যবসায়ীর পক্ষে এফবিসিসিআই কোনো কথা বলবে না।
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, খেজুর আমদানি করতে খেজুরের প্রকৃত দামের দ্বিগুণের বেশি শুল্ক দিতে হয়। কাস্টমস খেজুরকে বিলাসী পণ্য ধরে শুল্কায়ন করে। ১১০ টাকা কেজি দরে আমদানি করা খেজুরে শুল্ক দিতে হয় ১৪০ টাকা। একইভাবে ১২০ টাকা কেজির খেজুরে ২১০ টাকা শুল্ক দিয়ে ৩৩০ টাকায় বিক্রি করতে হয়। এজন্যই বাজারে খেজুরের দাম এত বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই শুল্ক যুক্ত করা হয়েছে। অথচ গত বছর এক কেজি খেজুরে মাত্র ১০ টাকা শুল্ক দিয়েছি।
বিজ্ঞাপন
মাহবুবুল আলম আরও বলেন, ইফতারের সময় মুসলমানরা অন্তত দুই-তিন টুকরো খেজুর খেয়ে থাকেন। গত ৩৫ বছর ধরে আমি খেজুর আমদানি করি, কিন্তু কখনো শুল্ক দিতে হয়নি। আমি খেজুর আমদানি করলাম ৯০০ থেকে ১০০০ ডলারে। চট্টগ্রামের কাস্টম কমিশনার সাধারণ কনটেইনার খেজুরের জন্য ২৫০০ ডলার এবং হিমায়িত কনেটেইনারে খেজুরের জন্য ৪০০০ ডলার শুল্ক নির্ধারণ করেছে। এতে খেজুরের দাম দুই থেকে তিনগুণ বেড়ে গেছে। আমরা এনবিআর-এ কথা বলেছি, তারা কোনো যুক্তি দেখাতে পারল না কেন এটার শুল্ক ২৫০০/৪০০০ করল। এই অ্যাসেসমেন্টে এক কার্টন খেজুর আমাকে বিক্রি করতে হবে সাড়ে ৪০০০ টাকায়, কেজি পড়বে ৪৫০ টাকা। আসলে আমরা সবাই যদি সহযোগিতা না করি, তাহলে বাজারে খেজুরের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে দাম রাখতে পারব না।
সমাপনী বক্তব্যে এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহ-সভাপতি আমিন হেলালী বলেন, এফবিসিসিআই অসাধু কোনো ব্যবসায়ীর পক্ষ নেবে না। তাদের বিরুদ্ধে সবসময় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ বছর এফবিসিসিআই থেকেই বাজার মনিটরিং করা হবে।
সভায় এফবিসিসিআইর সহ-সভাপতি খায়রুল হুদা চপল, মোহাম্মদ আনোয়ার সাদাত সরকার, মো. মুনির হোসেন, পরিচালক, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, করপোরেট প্রতিষ্ঠানের নেতা, মিল মালিক, আড়তদার, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এমআর