বর্তমান রাজনৈতিক সহিংসতায় ব্যবসা, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। দেশীয় অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষায় এবং জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘবে হরতাল, অবরোধসহ অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর যেকোনো অসহিষ্ণু রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিহারের আহ্বান জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনটি।
বুধবার (১ নভেম্বর) সংগঠনটির মহাসচিব মো. আলমগীর স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী কোভিড মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়েছে। বিশ্বব্যাপী সাপ্লাই চেইন (সরবরাহ ব্যবস্থা) ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ডলার সংকট, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। আমদানি কমে যাওয়ায় ইতোমধ্যে উৎপাদন হ্রাস এবং বৈদেশিক রফতানি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এরইমধ্যে নতুন করে যোগ হয়েছে গাজা-ইসরাইল যুদ্ধ পরিস্থিতি- যা দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে আরও নাজুক করে তুলছে।
বিজ্ঞাপন
সংগঠনটি বলছে, এই পরিস্থিতির মধ্যেই দেশে হরতাল, অবরোধসহ রাজনৈতিক অস্থিরতা জাতীয় অর্থনীতিকে আরও শঙ্কার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ডাকা হরতাল/অবরোধ কর্মসূচি সাপ্লাই চেইনকে ভীষণভাবে বিঘ্নিত করছে। এর প্রভাব ইতোমধ্যে পণ্যের বাজার মূল্যের ওপর এবং রফতানির ওপরও পড়ছে। নির্ধারিত সময়ে পণ্য জাহাজীকরণ করতে না পারলে ক্রয়াদেশ বাতিলের ঝুঁকিতে পড়বেন উদ্যোক্তারা। সেসাথে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ সকল পণ্যসামগ্রীর উর্ধ্বমূল্যের প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর।
হরতাল, অবরোধ কর্মসূচির কারণে বিদেশে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা যাবে। এর ফলে বিদেশিরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাবে। অন্যদিকে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাবে এবং কর্মসংস্থান ঝুঁকিতে পড়বে, যা কখনোই কাম্য নয়। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক অস্থিরতা চলতে থাকলে ঋণ খেলাপির পরিমাণ বেড়ে যাবে। নতুন কর্মসংস্থানের পথ রুদ্ধ হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, একদিন হরতাল বা অবরোধে দেশের অর্থনীতির ক্ষতি হয় প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা। হরতাল, অবরোধের মতো অসহিষ্ণু কর্মসূচি চলতে থাকলে বাংলাদেশের মতো একটি উদীয়মান অর্থনীতি এর ভার সইতে পারবে না।
বিজ্ঞাপন
ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তারা হরতাল, অবরোধ ও সহিংস কোনো কর্মসূচি চান না। তারা চান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, কারণ এটা ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ধরে রাখা সম্ভব হবে না। সাধারণ মানুষ এবং অর্থনীতির বৃহৎ স্বার্থের কথা বিবেচনা করে হরতাল/অবরোধের মতো অসহিষ্ণু কর্মসূচি থেকে রাজনৈতিক দলগুলো ফিরে আসবে বলে এফবিসিসিআই বিশ্বাস করে।
চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও দেশের অর্থনীতিকে একটি শক্তিশালী কাঠামোর ওপর দাঁড় করানোর লক্ষ্যে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্তু চলমান হরতাল/অবরোধ কর্মসূচি দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ব্যাহত করবে। রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রলম্বিত হলে এলডিসি গ্রাজুয়েশন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, এসডিজি অর্জনসহ জাতীয় লক্ষ্যসমূহ অর্জন ব্যাহত হবে।
এফবিসিসিআই বিশ্বাস করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদরাই মূখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন। দেশের মানুষের জীবন-জীবিকা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান উন্নয়ন তথা দেশের সার্বিক উন্নয়নে রাজনীতিবিদরাই অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে থাকেন এবং নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন হিসেবে এফবিসিসিআই দেশের অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে হরতাল, অবরোধসহ অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর এমন রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিহারের আহ্বান জানাচ্ছে।
টিএই/জেবি

